ডিএনএ-এর গঠনের আবিষ্কারক জেমস ওয়াটস মারা গেছেন

ছাড়পত্র ডেস্ক

প্রকাশিত : নভেম্বর ০৮, ২০২৫

নোবেলজয়ী মার্কিন বিজ্ঞানী জেমস ওয়াটসন মারা গেছেন। তার বয়স হয়েছিল ৯৭ বছর। ওয়াটসনের মৃত্যুর কথা নিশ্চিত করেছে কোল্ড স্প্রিং হারবার ল্যাবরেটরি, যেখানে তিনি বহু দশক ধরে কাজ ও গবেষণা করেন।

 

জেমস ওয়াটসন ১৯৫৩ সালে ব্রিটিশ বিজ্ঞানী ফ্রান্সিস ক্রিকের সঙ্গে ডিএনএ’র দ্বি-সর্পিল গঠন শনাক্ত করেন, যা আণবিক জীববিজ্ঞানে দ্রুত অগ্রগতির পথ প্রশস্ত করে। এ আবিষ্কারকে বিশ শতকের অন্যতম বড় বৈজ্ঞানিক সাফল্য হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

 

তবে জাতি ও লিঙ্গ সম্পর্কে বিতর্কিত মন্তব্যের কারণে তার সুনাম মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। টেলিভিশন অনুষ্ঠানে তিনি দাবি করেছিলেন, কৃষ্ণাঙ্গ ও শ্বেতাঙ্গদের গড় আইকিউয়ের পার্থক্যের জন্য দায়ী জিন বা জেনেটিক উপাদান।

 

ওয়াটসন ১৯৬২ সালে মরিস উইলকিনস ও ক্রিকের সঙ্গে ডিএনএ’র দ্বি-সর্পিল গঠন আবিষ্কারের জন্য যৌথভাবে নোবেল পুরস্কার পান। তারা সেই সময় বলেছিলেন, “আমরা জীবনের রহস্য আবিষ্কার করেছি।”

 

পরবর্তীতে জাতি নিয়ে মন্তব্যের কারণে তিনি বলেন, আমি নিজেকে বৈজ্ঞানিক সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন মনে করি।”

 

কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাভেনডিশ ল্যাবরেটরিতে কাজ করা এই বিজ্ঞানী দ্য টাইমস পত্রিকাকে ২০০৭ সালে বলেন, “আমি আফ্রিকার ভবিষ্যৎ সম্পর্কে স্বভাবতই নিরাশ। কারণ আমাদের সমস্ত সামাজিক নীতি এই ধারণার ওপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত যে, তাদের বুদ্ধিমত্তা আমাদের সমান। অথচ সব পরীক্ষা তা সমর্থন করে না।”

 

এই মন্তব্যের পর তিনি নিউ ইয়র্কের কোল্ড স্প্রিং হারবার ল্যাবরেটরির চ্যান্সেলর পদ হারান। ২০১৯ সালে আবারও জাতি ও বুদ্ধিমত্তার সম্পর্ক নিয়ে ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য করার পর ল্যাবরেটরি তার একাধিক সম্মানসূচক পদবি (চ্যান্সেলর এমেরিটাস, অলিভার আর গ্রেস প্রফেসর এমেরিটাস ও সম্মানসূচক ট্রাস্টি) বাতিল করে দেয়।

 

ল্যাবরেটরি বিবৃতিতে জানায়, “ড. ওয়াটসনের মন্তব্য নিন্দনীয় এবং বিজ্ঞানের কোনো ভিত্তি নেই।”

 

বিবিসি লিখেছে, ডিএনএ প্রথম আবিষ্কৃত হয় ১৮৬৯ সালে, তবে ১৯৪৩ সাল পর্যন্ত বিজ্ঞানীরা বুঝতে পারেননি যে, ডিএনএ-ই কোষের জেনেটিক উপাদান। তখন পর্যন্ত তার গঠন রহস্যাবৃতই ছিল।

 

লন্ডনের কিংস কলেজের গবেষক রোজালিন্ড ফ্র্যাঙ্কলিন অর্জিত চিত্র তার অজান্তে ব্যবহার করে ক্রিক ও ওয়াটসন ডিএনএ অণুর একটি ভৌত মডেল তৈরি করতে সক্ষম হন। তাদের সঙ্গে নোবেল পাওয়া মরিস উইলকিনস ডিএন অণুর গঠন নির্ধারণে ফ্র্যাঙ্কলিনের সঙ্গে কাজ করেন।

 

বিবিসি লিখেছে, ওয়াটসন ২০১৪ সালে তার নোবেল স্বর্ণপদকটি নিলামে ৪.৮ মিলিয়ন ডলারে বিক্রি করেন। কারণ জাতি সম্পর্কিত মন্তব্যের পর তিনি নিজেকে বৈজ্ঞানিক সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন মনে করতেন। একজন রুশ ধনকুবের পদকটি কিনে আবার ওয়াটসনের কাছেই ফেরত দেন।

 

ওয়াটসন ১৯২৮ সালের এপ্রিল মাসে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগোতে জিন ও জেমস দম্পতির ঘরে জন্মগ্রহণ করেন, যারা ছিলেন ইংরেজ, স্কটিশ ও আইরিশ অভিবাসীর বংশধর।

 

১৫ বছর বয়সে তিনি শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার জন্য বৃত্তি পান। সেখানে তিনি অপবর্তনের নতুন কৌশলে আগ্রহী হয়ে ওঠেন, যেখানে এক্স-রে কণাকে পরমাণু থেকে প্রতিফলিত করে তাদের অভ্যন্তরীণ গঠন প্রকাশ করা হতো।

 

ডিএনএ’র গঠন নিয়ে গবেষণা চালিয়ে যেতে তিনি কেমব্রিজে যান, সেখানেই ক্রিকের সঙ্গে তার পরিচয় হয় এবং তারা একসঙ্গে ডিএনএ’র সম্ভাব্য গঠন নিয়ে বড় আকারের মডেল তৈরি করতে শুরু করেন।

 

বিজ্ঞানী হিসেবে যুগান্তকারী আবিষ্কারের পর ওয়াটসন ও তার স্ত্রী এলিজাবেথ হার্ভার্ডে চলে যান, সেখানে তিনি জীববিজ্ঞানের অধ্যাপক হন। দম্পতির দুই ছেলের মধ্যে একজন সিজোফ্রেনিয়ায় আক্রান্ত হন।

 

ওয়াটসন ১৯৬৮ সালে নিউ ইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের কোল্ড স্প্রিং হারবার ল্যাবরেটরির দায়িত্ব নেন। প্রাচীন প্রতিষ্ঠানটিকে বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ বৈজ্ঞানিক গবেষণা প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরিত করার কৃতিত্বও তার।