ডিজিটাল চিকিৎসা
এম. হান্নান হাসানপ্রকাশিত : এপ্রিল ৩০, ২০১৯
ডাক্তার রহমান একজন ইউরোলজিস্ট। সেদিন বৈকালিক চেম্বারে ব্যস্ত সময় পার করিতেছিলেন তিনি। পান চিবাইতে চিবাইতে ঘরে ঢুকিলেন পঞ্চাশোর্ধ এক ব্যক্তি, মুখে একই সঙ্গে বিরক্তি এবং অহংবোধের অভিব্যক্তি মেশানো। চেয়ারে বসিয়াই থু করিয়া মেঝের উপর পানের পিক ফেলিলেন তিনি।
ডাক্তার রহমান কিছুটা বিরক্ত হইলেও মুখে সেটা প্রকাশ না করিয়া সম্মুখে উপবিষ্ট ব্যক্তির নাম ধাম জিজ্ঞাসা করিলেন। উনি বলিলেন যে উনি প্রক্টর।
ডা. রহমান বুঝিতে পারিলেন না যে প্রক্টর কি উনার নাম, নাকি উপাধি। যাহাই হউক বিষয়টা চাপিয়া রাখিয়া উনি প্রক্টর সাহেবকে উনার সমস্যার কথা জিজ্ঞাসা করিলেন।
“ঠিক মত মুততে পারি না ডাক্তার সাহেব, মুতা লাগলে দৌড়ায়া টয়লেটে যাই কিন্তু মুত বাইর হয় চিকন সুতার মত। কোঁৎ মারলে আরো আটকাইয়া যায়। বিরাট সমস্যা ডাক্তার সাহেব”-সমস্যা জানাইলেন জনাব প্রক্টর।
একজন আপাত-ভদ্রলোকের মুখে এহেন অনাকাংখিত ভাষা শুনিয়া কিছুটা স্তম্ভিত হইয়া গেলেও উহা বাহিরে প্রকাশ করিলেন না ডাক্তার রহমান। তিনি রুগীকে আরো কিছু প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করিয়া বুঝিলেন সম্ভবত উহার প্রস্টেট গ্রন্থি স্ফীত হইয়াছে। উনি সমস্যা সম্পর্কে প্রক্টর সাহেবকে ব্যাখ্যা করিয়া বলিলেন, বিষয়টা আরো ভালভাবে বুঝিবার জন্য ডিজিটাল রেকটাল এক্সামিনেশন করাটা জরুরি।
ডিজিটাল পরীক্ষার কথা শুনিয়া কিছুটা খুশিই হইলেন মি. প্রক্টর। বলিলেন, “ডিজিটাল পরীক্ষা যখন, ভাল হওয়ারই কথা। এযুগে তো সবই ডিজিটাল। একবার কদবেল গাছ থেইকা কদবেল পাড়তে গিয়া গেলাম নীচে পইড়া, মটাস কইরা যখন শব্দ হইল, তখনি বুঝলাম আইজকা গুয়ার হাড় একখান ভাংছে। ডাক্তার কইল, এক্স-রে কইরা দেখন লাগব। আমি কইলাম এক্সরে যখন করবেন তাইলে ডিজিটালই করেন। তা এইডা কি রকম ডিজিটাল ডাক্তার সাব?”
ডাক্তার রহমান উহাকে বুঝাইয়া বলিলেন যে এই ডিজিট মানে হচ্ছে আংগুল। অর্থাৎ উনার মলদ্বারের মধ্যে আঙ্গুল ঢুকাইয়া প্রস্টেটের অবস্থা পরীক্ষা করিতে হইবে।
ইহা শুনিয়া প্রক্টর সাহেব বেজায় ক্ষেপিয়া গেলেন, একেবারা অগ্নিমূর্তি ধারন করিয়া ডাক্তার রহমানের দিকে তেড়িয়া গিয়ে বলিলেন, “এইডা কি কইলি তুই? আমার পুংগায় লোগ(আংগুল) মারতে চাস, জানস আমি কিডা? আইলাম মুতের সমস্যা নিয়া, আর আঙ্গুল দিবার চাস পুটকিতে? খাড়া তোর পুটকির ব্যবস্থা আমি করতাছি...”
এরপরের ঘটনা বড়ই লজ্জাজনক, বড়ই নিষ্ঠুর। প্রক্টর সাহেব ফোন করিয়া কোত্থেকে যেন কিছু ষন্ডা মার্কা লোক জোগাড় করিয়া ফেলিলেন। তাহারা আসিয়া ডাক্তার রহমানকে মাটিতে ফেলিয়া বেদম প্রহার করিতে লাগিল আর বলিতে লাগিল, “হারামজাদা তোর এতবড় সাহস, স্যারের বেইজ্জতি করবার চাস, খাড়া দেখাইতাছি মজা”। থানায় কেস হইল, পুলিশ আসিয়া ডাক্তার রহমানকে হাতকড়া দিয়া হজতে নিয়া গেলেন। এতক্ষনে এলাকার উঠতি সাংবাদিক জগলুও জুটিয়া গিয়াছিল, পরের দিন সে রিপোর্ট করিল “প্রক্টর সাহেব প্রস্রাবের সমস্যা নিয়া ডাক্তার রহমানের নিকটে গিয়াছিলেন, অথচ তিনি তাহাকে পরীক্ষার নাম করিয়া প্রক্টর সাহেবের মলদ্বারে অংগুলি প্রবেশ করাইয়া নিজের হীন মনোবাসনা চরিতার্থ করিতে চাহিয়াছিলেন, কি কলিযুগ আসিল!”। শেষে ডাক্তার নামক এইসব কসাই, রক্তপিপাষু নরপিশাচদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাহিয়া রিপোর্টের যবনিকা টানিলেন তিনি।
মাস দুয়েক পরের ঘটনা। দেশের ডাক্তারদের প্রতি ত্যাক্ত বিরক্ত হইয়া অবশেষে সিংগাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথে আসিয়াছেন জনাব প্রক্টর। ইউরোলজিস্ট ডাঃ চ্যাং সব শুনিয়া যখন বলিলেন যে তিনি উনার মলদ্বারে আঙ্গুল ঢুকাইয়া পরীক্ষা করিতে চান, প্রক্টর সাহেব প্রথমে অবিশ্বাসের চাহনি দিলেন, অতঃপর রাগিয়া গেলেন, এবং পরিশেষে বুঝিলেন যে, ইহা ছাড়া আর গতি নাই। অনিচ্ছা সত্ত্বেও তিনি ডাঃ চ্যাংকে অনুমতি দিলেন পরীক্ষা করিবার। ডাঃ চ্যাং তাহার কোদালাকৃতির হস্তে গ্লাভস পরিয়া প্রক্টর সাহেবের দিকে আগাইয়া গেলেন। জনাব প্রক্টর তখন ডাঃ চ্যাং এর মোটা মোটা আঙ্গুলের দিকে চাহিয়া এই ভাবিয়া অনুশোচনা করিতে লাগিলেন যে, রহমান ডাক্তারের আঙ্গুলগুলো বোধ হয় এই শালার চ্যাং এর থেকে অনেক চিকনই ছিল। একটা দীর্ঘঃশ্বাসও ফেলিলেন বোধ হয় তিনি।
























