ডেরেক ওয়ালকট

ডেরেক ওয়ালকট

ডেরেক ওয়ালকটের তিনটি কবিতা

ভাষান্তর: রথো রাফি

প্রকাশিত : মার্চ ১৮, ২০২৪

বিদায়, কারেনেজ


অলস আগস্ট, যে সময়ে সাগর প্রশান্ত
আর বাদামি দ্বীপের পাতারা জড়ো হয় তীরে তীরে
এই ক্যারিবিয়ার, নিভিয়ে দিলাম বাতি আমি
মারিয়া কনসেপসিয়নের স্বপ্নহীন মুখের ওপর
খালাসি হিসেবে উঠে যেতে মধুকর ডিঙ্গায়।
ইয়ার্ডের বাইরে ধূসর হয়ে এলো ভোরের অন্ধকার,
আমি পাথর যেন দাঁড়িয়ে রইলাম, আর কিছুই নড়েচড়ে না
শুধু হিমসাগর জুড়ে গ্যালভানাইজের মতো কুচি কুচি ঢেউ
আর আকাশের ছাদে পেরেক সাটার নক্ষত্র-ছিদ্র, দাঁড়িয়ে রইলাম
যতক্ষণ না বাতাস গাছগুলোকে জ্বালাতন করা শুরু করে।
যখন ঢাল বেয়ে নামছিলাম, ইয়ার্ড ঝাড়ু দিয়ে চলা
আমার রুক্ষ প্রতিবেশিনীর পাশ দিয়ে গেলাম, আর কাছ ঘেঁষে তাকে বললাম,
“ধীরে ঝাট দে, রাক্ষসী কোথাকার, গভীর নয় রে ঘুম তার”
শুয়রনিটা এমন করে তাকালো যেন আমি মরা-মানুষ একটা ।
টেক্সি-ছোটার রাস্তাটায়, পার্কের আলো জ্বলছে তখনো।
ড্রাইভার আমার ব্যাগটা চেয়ে দেখলো এক পলক,
“এইবার, স্যাবাইন, মনে হচ্ছে চলেই যাচ্ছ একেবারে!”
গাধাটাকে কোনও উত্তরই দিলাম না, আমি শুধু উঠে
বসলাম পেছনের সিটে আর দেখতে লাগলাম লাভেন্টাইনের ওপরে
আকাশটা কেমন জ্বলছে, ওই জোব্বার মতো রক্তলাল
যার মাঝে সেই নারীটি তখনও ঘুমিয়ে চলেছে, ফেলে এসেছি যাকে
আর আমি পেছন-আয়নায় তাকালাম আর দেখতে পেলাম
ঠিক আমার মতোই একটা লোক, আর সেই মানুষটা কাঁদছে
বাড়িঘরের টানে, পথঘাট, পুরো ওই চুদানি দ্বীপটার জন্য।
ঘুমন্ত সবকিছুর ওপর যিশুর করুণা ঝরুক!
রাইটসন রোডের পচাগলা ওই কুত্তাটা থেকে শুরু করে
এই রাস্তাঘাটে সেদিন অবধি আমিও ছিলাম কুকুর একটা;
যদি এই দ্বীপকে ভালবাসা আমার জন্য ভার হয়ে থাকে,
তবে এই অনিয়মের বাইরে উড়াল দিতে চায় হৃদয় আমার,
তবে তাদের বিশাল বাড়িঘর, দামি গাড়ি, সুবিধাবাদিতা দিয়ে
তাদের কুলি, কালা-মানুষ, সিরিয় আর ফরাসি ক্রিওলদের দিয়ে
আমার আত্মাকে বিষিয়ে ফেলেছিল তারা,
তা-ই তাদেরকেই দিয়ে গেলাম এ দ্বীপ আর ছেড়ে গেলাম
তাদের কোলাহল— সাগরস্নান সেরে, সড়ক ধরে চলে গেলাম।
মনোস থেকে নাসাউ সমস্ত আমি সমস্ত দ্বীপই চিনিজানি,
সাগর-সবুজ চোখের এক মরচে-মাথা খালাসি যাকে তারা
স্যাবাইন নামে ডাকে, যে কোনো লাল নিগারের
খুবই সুলভ এক নাম, আর আমি, স্যাবাইন, দেখলাম সে-সময়টা
যখন সাম্রাজ্যের এসব বস্তিভিটা ছিল স্বর্গরাজ্য।
আমি তো নেহাত-এক লাল নিগার ভালবাসে যে সাগর,
আর আছে আমার যথাযথ এক উপনিবেশিক শিক্ষা,
আমার মাঝে আছে পর্তুগিজ, নিগ্রো আর আছে ইংরেজ
হয় কেউ নই আমি, না-হয় আমিই বরং একটা জাতি।

কিন্তু মারিয়া কনসেপসিয়ন ছিল আমার সমস্ত চেতনাজুড়ে
তখন দেখছিলাম অবিরাম সাগরের ঢেউয়ের ওঠানামা
তখন ডরিস বন্দরের পাশে, পালভরা ডিঙা আর ইয়াটগুলো
সূর্যের তুলির আঘাতে সতেজভাবে আঁকা
প্রতিটা ঝিলিক দিয়ে স্বাক্ষর করেছিল তার নাম;
আমি জানতাম যখন কালো-চুলের সন্ধ্যা পড়বে তার
উজ্জ্বল রেশমের জামা সূর্যাস্তে, আর, সমুদ্রকে গুটিয়ে নিয়ে
তার নক্ষত্র-উপচানো হাসি দিয়ে কাঁথার নিচে ঢুকে পড়ে,
যেন বিরামবিশ্রাম বলে থাকবে না কিছু, থাকবে না কোনো বিস্মরণ।
কবরখানায় পায়চারি করা শোকাকুলজনকে
পুনরুজ্জীবনের গল্প বলার মতো, তারা মৃতদেরকেই ফিরে চায়,
তাই নিজেকে নিয়ে হাসি, যখন নোঙরের দড়াদড়ি খুলে যায়
আর সাগরের দিকে মধুকর ডিঙাটি ভেসে যায়, “লাভ নেই
বারবার সাগরের মাছের প্রাচুর্যের কথা পেড়ে। চাই নাতো আমি,
ফেরেশতার ওই কামগন্ধহীন আলোয় সে সাজুগুজু থাক।
মারমোসেট বানরের মতো ওই বাদামি-গোল চোখগুলো চাই, আর
যে দিন আবার আমি পিঠে ঠেস দিয়ে বসতে ও হাসতে পারবো,
রবিবারের ঘামে ভেজা সন্ধ্যাগুলোতে চাই ওই নখগুলো
যারা আমার পিঠে সুসরসুরি দিতো, একটা কাঁকড়া যেমন সিক্ত বালিতে।”

যখন কাজ করতাম আমি, দেখতাম একের পর এক ঢেউ আসছে
মাস্তুল পেরিয়ে যা সাগরকে রেশম-কাপড়ের মতো চিরে ফেলে
মায়ের দুধের কসম, আজকে রাতের চুলা থেকে
উড়ে আসবে যে নক্ষত্রগুলো তাদের কসম, বিশ্বেস করো সবাই,
আমি ভালবাসতাম তাদের, আমার শিশু, আমার স্ত্রী
আমার ঘর; ভালবাসতাম কবিরা যেমন ভালবাসে কবিতাকে
যা তাদেরকেই খুন করে ফেলে, সমুদ্র যেমন ডুবিয়ে মারে সমুদ্রচারীকে।

কোনো না কোনো নিঃসঙ্গ সৈকত থেকে তোমরা কি কখনো চেয়ে দেখেছো
আর দেখেছো কি অনেক দূরে একটি মধুকর ডিঙ্গা? যাই হোক, যখন আমি
এই কবিতা লিখি, প্রতিটা বাগধারা লবণে ভিজে চপচপে হয়ে যায়;
আমিও প্রতিটা লাইন টেনে যাই আর এই মাস্তুলে
পালের দড়িদড়ার মতোই বাঁধি আঁটোসাঁটো করে; সরল কথায়
আমার সাদামাটা ভাষা হয়ে ওঠে এই বাতাস,
আর মধুকর ডিঙার সব পাল হয়ে ওঠে খাতার পৃষ্ঠাগুলো।
তবে আমাকে বলতে দিন, এ কাজকারবার কিভাবে-বা শুরু হলো।

সমুদ্রের বিচ্ছেদ

বিশাল সরকারি আমলা ও’হারার জন্য সেড্রোস ও মেইনের মাঝপথে
স্কচ চোরাচালান করতাম, তাই কোস্ট গার্ড আমাদের ঘাটাতে পারতো না,
আর মাঝপথে স্প্যানিস জলদস্যুরা পড়তোই আমাদের সামনে,
কিন্তু একজনের গলা সবসময়েই বিড়বিড় করতো, “স্যাবাইন,
এই ঝানু ডাকাতের ব্যবসাটা কি দেখবে না?” বেশ তো, যা-বলা, তা-ই করা!
ওই অবৈধ ব্যবসাটাই পুরোই পড়লো ধসে। আর আমিতো ধসে পড়লাম
এক নারীর জন্য, তার লেস আর রেশমের জন্য, মারিয়া কনসেপসিয়ন।
আহ, এ্যা! এর পরেই শুনলাম, বিশাল রহস্যের জট খুলতে
তাকে নিয়ে একটি তদন্ত-কমিশন গঠন করা হয়েছে,
চেয়ারম্যান হিসেবে নিজেই নিজের তদন্ত করবেন।
যাই হোক, আমিও ভালো করেই জানি ওই চুদনা কে হতে পারে,
হাঙরের ছদ্মবেশে সেই হাঙরটি নয়, শুধু তার কাণ্ডারি-মাছটি,
তোমার আমার মতোই খাকি প্যান্ট পরা লাল-নিগার একটা।
আরো মন্দ ব্যাপার, মারিয়া কনসেপশনের সাথে ঝগড়া বাধিয়েছি আমি
থালাবাসন এটা ওটা ছুড়ে মেরেছি, কসম খাচ্ছি:, “আর কখনোই করবো না!”
আমার ঘরবাড়ি আমার সংসার ধ্বংস করে দিয়েছে এই খিটিমিটি।
এত বেশি ভেঙে পড়েছি যে, আমার দরকার একটা ছায়াময় আশ্রয়
আর একটা কাপ, কিংবা চারটা আশ্রয় আর চারটা কাপ চার-কাপ স্পেনীয় পোর্ট মদে ভরা;
টাকা বলতে কয়টা পয়সা শুধু এই সাগরের মাঝে।

দ্য এক্সপ্রেসে দেখতে পেলে ওই মন্ত্রীদের
গরিরের অভিভাবক— তাদের পিঠে একহাত, আর-হাত পুলিশের পিঠে
যারা শুধূ তাদেরই বাড়ি পাহাড়া দেয়,
আর পিছন দরজায় দিয়ে ঢোকাচ্ছে স্কচ মদ।
ঐ মন্ত্রী-দানব যে যুক্ত ছিল মদের চোরাচালানে
ঐ আধা-সিরীয় মাতাল, ফাসবাল্বের বিজলিপাতে
প্রাগৈতিহাসিক কাদার পিণ্ড ডাইনোসরের মতো সম্পদে ডুবন্ত
তার পাউডার আর আঁচিলে থকথকে ঐ মুখ আর ওই পাথুরে চোখের
পাতাগুলো দেখতে আমি এত ব্যকুল হয়ে যেতাম যে,
নিজেকে বললাম, “স্যাবাইন, এসবই খুব বাজে ব্যাপার, বুঝলা!”
কিন্তু কাউকে দিয়ে আমার মতো শিল্পীর ক্রাচটা লাথি মেরে
অফিস থেকে বাইরে ফেলে দিলো! ওই শুয়োর এতই অভিজাত,
তার ওই উচু আসন ছেড়ে নামতে পারেনি, শুধু সে নিজেই
লাথিটা মারলো আমাকে। এই ত্রিনিদাদে, এই কমলার প্রজাতন্ত্রে
আমি দেখলাম, কৃতদাসকে অসুস্থ করে ফেলে কোনো কোনো বিষয়।

মাথার ভেতর থেকে আমি সমুদ্রের কোলাহল ঝেড়ে ফেলতে পারছিলাম না
মারিয়া কনসেপশনের গানই গাইছিল আমার কানে শঙ্খটা
তাই উদ্ধার পেতে, পাগলা মিক, ও’ শাউনেসি নামে একজন
আর হেড নামের এক ইংরেজ নাবিকের সাথে ড্রাইভিং করতে লাগলাম;
কিন্তু এই ক্যারেবীয় দ্বীপ মৃত লোকজনে এত ভরা যে,
যখনই গলেমিশে যেতাম পান্নাসবুজ জলে, যার ওপর দেশটা থাকতো
রেশম-তাঁবুর মতো কুচি-কুচি ঢেউ খেলানো
তখনই দেখতে পেতাম তাদের, প্রবালপুঞ্জে: মাথার গিলু, আগুন,
সাগর-পাখনা, ডেড-ম্যান-ফিঙ্গার, আর অবশেষে মৃত লোকদের।
দেখতাম যে, গুড়ো গুড়ো বালিই হয়ে আছে তাদের হাড়গোড়
সেনেগাল থেকে সান সালভাদর অবধি সমস্ত ভূমি সাদা করে রেখেছে
তৃতীয়বার ডুব দেয়ার কথা ভাবতেই তাই আঁতকে উঠলাম আমি, আর জলের ওপরে
সিম্যানস হোস্টেলে কাটিয়ে দিলাম সারা মাস। মাছের সুরুয়া খেয়ে আর ধর্ম-উপদেশ শুনে।

বউকে যদি সাথে নিয়ে আসতাম, এই দুঃখের কথা যখনই ভাবলাম
আর ঐ অপর মহিলাকে নিয়ে যখন আমার দুশ্চিন্তা টের পেলাম
জলের নিচে কাঁদলাম আমি, নোনাজল খুঁজে ফেরে শুধু নোনাজলই,
কারণ তার সৌন্দর্য তলোয়ারের মতোই আমার ওপর আছড়ে পড়েছে
আর আমারই দেহের দেহ আমার শিশুদের কাছ থেকে আমাকেই ছেটে ফেলেছে!

সেন্ট ভিনসেন্ট থেকে এসেছিল এই মালাবাহী বজরাটি, তবে ফের
ভাসানোর পক্ষে অনেক অনেক বেশি ভার। যখনই পান করতাম, ইংরেজটা
ক্লান্ত হয়ে পড়তো মারিয়া কনসেপশনের জন্য আমার কান্নাকাটিতে।
বলতো সে, বাঁকের নাগাল পেতে চলেছে সে। তার জন্যতো খুশির ব্যাপার!
কিন্তু মারিয়া কনসেপশনের জন্য, আর আমার স্ত্রী আর শিশুদের
যে-আঘাত আমি দিয়েছি, তার জন্য
আমার হৃদয়ে যে যন্ত্রণা আর যন্ত্রণা— তা আরো বেশি বাজে ছিল।
উত্তাল সাগরের কোথাও কোন পাথুরে ফাটল তো নেই
যেখানে বুবি পাখির মতো প্রতিটি সন্ধায় আমি মুখ লুকাতে পারি
জানেন তো, আলোকিত কোনো বালিস্তূপও নেই
পেলিক্যানদের মতো যেখানে একটু জিরিয়ে নিতে পারি,
তাইতো একদিন আত্মহারা হয়ে দেখলাম ঈশ্বর
হার্পুনবিদ্ধ গ্রুপারের মতো রক্ত ঝরাচ্ছে, আর দূরে একটা গলা
চেঁচিয়ে মরছে, ‘স্যাবাইন, ছেড়ে আসো যদি,
যদি ছেড়ে আসো তাকে, তোমাকে দেব আমি ভোরের তারাটি।’
পাগলাগারদ থেকে বেরোনোর পর অন্য রমণীদের চেষ্টা করলাম আমি,
কিন্তু, একবার নগ্ন হলেই, তাদের কাঁটাভরপুর যোনিদেশ
সি-এগের মতো ভাঁজ-খাওয়া, আমি আর ডুব দিতে পারতাম না।
দালাল ঘুরোফেরা করতো। টাকা শোধ করে বলতাম, কিছু মনে করো না।
কোথায় আমার বিরামখানা, জেসাস? কোথায় বন্দর আমার?
কোথায় আমার মাথার বালিশ যার জন্য কড়ি গুণতে হয় না!
আর কোথায় জানালাটি যেখান থেকে আমি জীবনের দিকে তাকাতে পারি?

স্যাবাইনের প্রজাতন্ত্রকে ছেঁড়ে যাওয়া

এখন আমার কোনো দেশ নাই, কল্পদেশই আছে শুধু।
সাদা লোকদের পর, যখনই ক্ষমতা চলে গেল
কালা আদমিদের হাতে, তারাও চাইতো না আমাকে।
প্রথম জন আমার হাতদুটিতে শেকল পরায়, আর ক্ষমা চায়, ‘ইতিহাস’;
পরবর্তীজন বললো তাদের গর্ব করার মতো আমি ততটা কালো নই।
বলো আমাকে, কোন ক্ষমতা, এইসব অচীন পাহাড়ের ওপরে,—
একটা স্প্রে-প্লেইন বিমানবাহিনী, দমকলবাহিনী,
রেড-ক্রস, রেজিমেন্ট, দুই, তিনটি পুলিশি কুকুর
যারা তোমার সামনে দিয়ে যায়, বোলিং শেষে ‘প্যারেড!” করতে করতে?
ইতিহাসের দেখা করেছিলাম একবার, তবে সে চিনতেই পারেনি আমাকে,
এক পার্চমেন্ট ক্রিওল, সাগরের প্রাচীন বোতলের মতো
ময়লা গায়ে, বারান্দার গ্রিলের জালের ছায়ার তৈরি গর্তে গর্তে
কাঁকড়ার মতো হামাগুঁড়ি দিচ্ছিলাম; ক্রিমরঙা লিলেন, ক্রিমরঙা হেট।
আমি তার সাথে লড়াই করলাম, আর চেঁচিয়ে উঠলাম, ‘স্যার, আমি স্যাবাইন!
তারা জানায়, আরে তোমার নাতিকে দেখছি। তোমার দাদিকে স্মরণ করতে পারো
তোমার কালো রাঁধুনিকে, আদৌ পারো? শুকরনিটা চেঁচায় আর থুতু ছিটায়।
ও ধরনের একটু থুতু অগণণ শব্দের সমান।
তবে আমাদের জন্য তাদের জারজগুলো শুধু এসবই রেখে গেছে: শব্দ।

আমি আর কোনোভাবেই বিপ্লবে বিশ্বাস করি না।
আমার নারীর প্রেমের ওপর থেকে আমি আস্থা হারিয়ে ফেলছিলাম।
ঠিক সেই সময়েই আমি আলেকজান্ডার ব্লককে দেখেছিলাম
জমাট স্ফটিক হয়ে উঠছে তার দ্বাদশ কবিতায়।
সময়টা সমুদ্র বিভাগের পুলিশ আর হোটেল ভেনেজুয়েলার মাঝে
এক রবিবার বিকেল। পতাকাহীন
তরুণ যুবা, শার্র্ট গায়ে, যাদের বুক গর্তে ঝাঝরা হওয়ার অপেক্ষায়।
পাহাড়ের ভেতর দিয়ে এগিয়ে চললো তারা, আর
বালিতে ফেনার মতোই তাদের কোলাহল নিঃশেষ হয়ে গেল।
রাস্তার ওপর তাদের শার্টগুলো ফেলে, আর রাস্তার শেষ মাথায়
ক্ষমতার প্রতিধ্বনি ফেলে রেখে, তারা প্রত্যেকেই বৃষ্টির মতো
নিজের মেঘপুঞ্জ নিয়ে উজ্জ্বল পাহাড়গুলোর মাঝে ডুবে গেল।
সাংসদদের ওপরে প্রপেলার-ব্লেডের পাখনা পাক খেতে লাগলো;
তারা বলে, কারমাইনে তখনো বিচারকরা ঘামে ভিজছে
ফ্রেডারিখ স্ট্রীটে ইডলাররা মার্চ করছে
স্থির দাঁড়িয়ে থেকে, আরেকটি নতুন পাতায় গড়িয়ে গেল বাজেট।
১২:৩০ মোভিতে: প্রোজেক্টরগুলো নষ্ট না হলেই
সবচেয়ে ভাল হয়, না হলে তোমাকে বিপ্লব দেখতে হবে। আলেকজান্ডার ব্লক
ভেতরে ঢুকলেন, আর বসলেন, চকলেট কোন খাওয়া পিটের তিন নম্বর সারিতে
প্রতীক্ষায় রইলেন ক্লিন্ট ইস্টউডের এক স্পেগেটি ওয়েস্টার্ন ছবি দেখার
আর লি ভ্যান ক্লিফের চরিত্রে অভিনয় করছে।

কবি পরিচিতি: জন্ম ১৯৩০ সালের ২৩ জানুয়ারি সেন্ট লুসিয়ায়। মৃত্যু ২০৯৭ সালের ১৭ মার্চ। কবি ও নাট্যকার। ১৯৯২ সালে সাহিত্যে নোবেল পান।