দ্য উইচ ছবির একটি দৃশ্য

দ্য উইচ ছবির একটি দৃশ্য

তুহিন খানের গদ্য ‘দ্য ইউচ: অদ্ভুতভাবে অন্যকিছু’

প্রকাশিত : জানুয়ারি ১৩, ২০২০

দ্য উইচ (২০১৫) হিস্ট্রিকাল হরর ফিল্ম। ডিরেক্টেড বাই রবার্ট এগারস। এগারসের এই মুভি নিয়া প্রচুর আলোচনা সমালোচনা হইছে। ইওরোপে চার্চ বা চার্চের বিরোধী শক্তির লড়াইয়ের হিস্ট্রি আবারও প্রাসঙ্গিক হইয়া উঠতেছে সম্ভবত, এই সময়ে।

এই গল্প এমন এক পরিবারের, যারা প্রত্যেকেই মনে করে তারা খোদার বান্দা, যিশুর একান্ত ভক্ত। কিন্তু ভিতরে ভিতরে তাদের বিশ্বাস আসলে ভাইঙা পড়তে থাকে। আনব্যাপ্টাইজড শিশু স্যামুয়েল হারায়ে যায় গহীন জঙ্গলে, তার জান্নাত-জাহান্নামে যাওয়া নিয়া দোটানায় থাকে ক্যালেব। ক্যাথরিন, ক্যালেবের মা, একের পর এক সন্তান হারানোর কষ্টেই হারাইতে থাকেন বিশ্বাস। উইলিয়াম, ক্যাথরিনের জামাই, নিজেরে খোদার বিরাট ভক্ত ভাবত। কিন্তু শেষমেশ দেখা গেল, ধর্ম না, উইলিয়ামের ভিতরে আসলে কাজ করে ধর্মের `প্রাইড`। এই প্রাইড উইলিয়ামরে ভুলায়ে দেয় যে, শয়তানের সাথে মানুশের লড়াই আসলে প্রতি মুহূর্তের, নিজের অবস্থা নিয়া অহংকারের কোন সু্যোগ নাই।

কিন্তু আসলে এই মুভি কোন উপদেশগাঁথা না। ধর্মের জয়গানও না। এই মুভি অদ্ভুতভাবে অন্যকিছু। `উইচ` নিয়া হলিউডে কম মুভি হয় নাই। কিন্তু প্রায় মুভিরই ন্যারেটিভ ছিল আসলে, `উইচ` নাম দিয়া পুরুষতান্ত্রিক সমাজের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করা নারীদের উপর চার্চের সন্ত্রাস। এই মুভিতে দেখানো হয় একদমই আলাদা আরেক ন্যারেটিভ।

কেমন হবে, যদি সত্যি সত্যিই নারী `উইচ` হয়? দুনিয়ার সব নারী যদি আসলেই `উইচ` হয়, তাহলে পুরুষতন্ত্র বা চার্চের কী হবে? এই `জাদুবাস্তব`র সামনে দর্শকরে দাঁড় করান এগারস। মুভিতে উইলিয়াম-ক্যাথরিন দম্পতি তাদের পিউরিটান কলোনি ছাইড়া এক গহীন জঙ্গলে বসবাসে বাধ্য হন। তারপর একের পর এক দুর্ঘটনা ঘটতে থাকে, আর সেসবের দায় পড়তে থাকে বড় মেয়ে থমাসিনের উপর। তারে বলা হয় `উইচ`। বাপের সাথে তর্কের এক পর্যায়ে থমাসিন দেখায় যে, তার বাপ আসলে কত দুর্বল, কাপুরুষ; বাপের প্রত্যেকটা কাজের দায়ভারই আসলে ফ্যামিলি চাপাইছে তার উপর।

যেকোন হরর মুভির এক পর্যায়ে দর্শকের মনে হয়: কে জিতবে, ভূত না মানুশ? `দ্য উইচ`-এ ঘটে অদ্ভুত ঘটনা। উইলিয়ামের পুরা ফ্যামিলি ধ্বংস হয়, পরাজিত হয় শয়তানের কাছে। বাঁইচা থাকে খালি থমাসিন। `তুমি কি ডেলিশাস লাইফ চাও?` থমাসিন শয়তানের এই কথায় হাঁ বাচক উত্তর দেয়। `ব্ল্যাক ফিলিপ`রুপে শয়তান তারে পথ দেখায়ে নিয়া যায় জঙ্গলের দিকে, যেখানে আগুনের চারপাশে নাচতেছে তারই মত অনেক উলঙ্গ নারীদেহ।

ফেমিনিজমের সাথে উইচক্রাফটের আনকোরা একটা কম্বিনিশান দেখানো হইছে এই মুভিতে। পার্সোনাল প্রাইডে আত্মহারা পুরুষতন্ত্রের সামনে থমাসিনের মত সাধাসিধা মেয়েরাও `উইচ`; কিন্তু অন্যান্য মুভিতে যেমন `উইচ`দের পুড়ায়ে মারে চার্চ, এই মুভিতে ঠিক তার উল্টাটাই দেখাইছেন এগারস। মুভির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত কোন অপরাধ না কইরাও বুইচ` তকমা পায় থমাসিন; আর শেষমেশ তাদের সবারই করুণ মৃত্যু হয়। বাঁইচা থাকে খালি থমাসিন; `ডেলিশাস লাইফ`র দিকে আগায় নগ্ন শরীরে।

মুভিটার জোরালো ফেমিনিস্ট ব্যাখ্যা দিছেন অনেকেই। অনেকেই আবার এর সমালোচনাও করছেন। বিশেষত, বর্তমানে ইলুমিনাতি, ফ্রিম্যাসনারি ইত্যাদি বিতর্কের ভিতরেই, স্যাটানিজম আর চার্চের লড়াইয়ের হিস্ট্রিকাল কনফ্লিক্টটারে আবার উস্কায়ে দিছে এই মুভি। আমেরিকার স্যাটানিক টেম্পল এই মুভির ডিস্ট্রিবিউটর `A24`-র সাথে যৌথভাবে নিউ ইয়র্ক, লস এঞ্জেলেস, টেক্সাস ও ডেট্রয়েডে মুভির স্ক্রিনিং করছে। টেম্পলের তরফে বলা হইছে, তারা আশা করে যে এই মুভি প্রাচীন ও আধুনিক— দুই টাইপের ধর্মান্ধতার মধ্যে একটা সম্পর্ক দেখাইতে হেল্প করবে, এবং এইটা হবে একটা `স্যাটানিক আপরাইজিং` বা `শয়তানের বিদ্রোহ।`

তবে হ্যাঁ, `স্যাটানিক টেম্পল` মানে শয়তানের কাছে আত্মা বেইচা দেওয়া পার্টি না। স্যাটানিজমের আইডিয়াটা বেসিক্যালি ধর্মের বিরুদ্ধ শক্তি হিশাবে শয়তানের রুপকরে আমলে নিয়া এক ধরনের নাস্তিবাদী আন্দোলন।

আলাপ এই পর্যন্তই। হ্যাপি ওয়াচিং।