দিন যায় কথা থাকে

পর্ব ২৬

হামিদ কায়সার

প্রকাশিত : মার্চ ১৮, ২০১৯

তারা কেউ গান শুনিয়েছেন। কেউ লিখেছেন হিরন্ময় কবিতা। কেউ আবার গল্প-উপন্যাসের মালা গেঁথে সাজিয়েছেন বাংলা সাহিত্যের ঢালি। কেউ বা নিরলস জ্ঞানচর্চায় যোগ করেছেন বুদ্ধিবৃত্তির নতুন মাত্রা। তাদের সেই দিন আজ আর নেই, কেউ হারিয়ে গেছেন মহাকালে, কেউ বা এক পা বাড়িয়ে রেখেছেন সেই পথে। তবে তাদের কথা আছে; তাদের কর্মে আর সৃজনশীলতায় তো বটেই, আমার কাছেও— কাগজের ভাঁজে ভাঁজে, শব্দগুচ্ছের আড়ালে, বিভিন্ন সময়ে গৃহীত সাক্ষাৎকারে। হয়তো সেই কথাগুলো আবারো জেগে ওঠতে পারে আপনার মননস্পর্শ পেলে। চলুন পাঠ নেয়া যাক

মনে রাখা দরকার, একজন অনুবাদক হিসেবে আমি কিন্তু আসলে পালন করছি সূত্রধরের ভূমিকা। কাজেই ভূমিকাতে অনূদিত বিষয়বস্তুর পরিপ্রেক্ষিতে, পটভূমি বিস্তারিত এবং বিশদ হওয়া প্রয়োজন। তা না হলে পাঠক বিভ্রমে পড়ে যেতে পারে— মানবেন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়

এ দেশের আধুনিক সাহিত্য-মনস্কদের কাছে, বিশেষত তরুণদের কাছে মানবেন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় একটি সমীহ যোগানো নাম। ল্যাটিন আমেরিকার সাহিত্য কিংবা গাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেজের সাহিত্যকে তিনি বাংলা ভাষা-ভাষীদের কাছে পরম যত্নে পৌঁছে দিচ্ছেন ধারাবাহিকভাবে। উত্তম অনুবাদ তৎসঙ্গে যথোপযুক্ত ভূমিকা থাকার কারণে সে সমস্ত প্রত্যেকটি বইই উৎকর্ষের দিক থেকে চূড়ান্তমানের— তাই ঢাকায় হঠাৎই যখন সহিত্য প্রকাশের অফিসে যেতেই মফিদুল হক ভাই বললেন, ‘উনি মানবেন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়’— স্বভাবতই চমকে উঠলাম। কারণ, ভারত থেকে এত নিঃশব্দে সচারচর কেউ আসে না। তখন তখনই সিদ্ধান্ত নেয়া হলো উনার একটি সাক্ষাৎকার নেব। কিন্তু ছোট্ট টেপরেকর্ডারটা যে এত বড়ো একটা বিশ্বাসঘাতকতা করে ফেলবে, কে জানতো? সবকিছুই তো ছিল ঠিকঠাক। ক্যাসেটের ফিতে যথারীতি ঘুরছিল, রেকর্ড হওয়ার লাল সংকেতটা জ্বলছিল— এমন কি এক পিঠ রেকর্ড হওয়ার পর ক্যাসেট থেমে গিয়েছিল বলে ক্যাসেটটা ঘুরিয়েও দিয়েছিলাম— কিন্তু, তিন দিন পর যখন ক্যাসেট থেকে কথাগুলো তুলতে গেলাম; সব উৎসাহ দপ করেই নিভে গেল। কোনো কথাই তো ওঠেনি আর সাক্ষাৎকার যেদিন গ্রহণ করেছিলাম, সেদিন বিকেলেই তিনি চলে গেছেন নিজের দেশে, কাজেই নতুন করে সাক্ষাৎকার নেয়াটাও সম্ভব নয়, সেটা সমীচীনও হবে না। শেষ পর্যন্ত দ্বারস্থ হলাম স্মৃতির; সেতো আর ছোট্ট টেপ রেকর্ডারের মতো যন্ত্র নয়— মন ও প্রাণের সমবায়। সবসময় প্রতারণা নাও করতে পারে।

ল্যাটিন আমেরিকান সাহিত্য অনুবাদের জন্য সুখ্যাতি অর্জন করা মানবেন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়কে মনে আছে কৌতূহল থেকেই প্রথম প্রশ্নটা করেছিলাম, ‘হঠাৎ ল্যাটিন আমেরিকান সাহিত্য অনুবাদ করার জন্য তিনি প্রণোদিত হয়েছিলেন কেন?
মানবেন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়: বিষয়টা এভাবে বলা যায়, পাশ্চাত্য সাহিত্যের খোঁজ-খবর আমরা সবসময়ই রাখি। রাখতাম সেই ছাত্রাবস্থায়; যে ইংরেজি জার্মানি ভাষায় সর্বশেষ কি লেখা হচ্ছে। এর বাইরের দেশের সাহিত্যের কোনো কিছুই জানতাম না বা সেটা জানার সুযোগ ছিল না। কিন্তু, কলেজ জীবনের শেষ পর্যায়ে, আমি তখন সিনেমার খুব পোকা— ল্যাটিন আমেরিকান বিশেষ করে ব্রাজিল পর্তুগিজ-এর ছবি দেখে দেখে সে দেশের সাহিত্যের প্রতিও কৌতূহলী হয়ে ওঠলাম। কিন্তু বইয়ের দোকানে সে সব দেশের বই পাওয়া যেত না। বন্ধুবান্ধবদের কাছ থেকে এক দুটা যোগাড় করে পড়তাম। বিদেশ থেকে নিয়ে আসতো কেউ কেউ। এরপর বিদেশে যাওয়ার পর ল্যাটিন সাহিত্য পড়ার সুযোগ পেলাম।

হামিদ কায়সার: বিদেশ গেলেন কোথায়, কেন?
মানবেন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়: কানাডায়। পড়তে গিয়েলিাম। বইয়ের দোকানে ঘুরে-টুরে মনে হলো, পড়বই যখন ঠিকভাবে পড়া উচিত। ল্যাটিন আমেরিকান ভাষার উপর একটা কোর্স নিলাম। তারপর পড়লাম ধারাবাহিকভাবে। ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষ থেকে বিংশ শতাব্দী, কুবার বিপ্লব। আফ্রিকার সাহিত্যের ওপরও একটা কোর্স নিলাম। একটা নিয়মের মধ্যে ধারাবাহিকভাবে ল্যাটিন সাহিত্যের রস আস্বাদন করলাম। এরপর উপলব্ধি করলাম, দেশের লোকদেরও জানানো দরকার পাবলো নেরুদা, কার্পেন্তিয়ার, হুয়ান রুলফো, জোর্জে আমাদু প্রমুখ যারা আছেন তাদের সাহিত্য বিষয়ে। দেশে ফিরে এসে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দিলাম। বাইরে সাহিত্য নিয়ে যে দৃষ্টিভঙ্গিটা এদেশে ছিল ঐ যে পাশ্চাত্যমুখী প্রবণতা— তা পরিবর্তনের প্রয়োজনীয়তা বোধ করলাম। সে জন্য যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সিলেবাসও পাল্টালাম, অন্তর্ভুক্ত হলো ল্যাটিন সাহিত্য। এই প্রেক্ষিতেই উদ্যোগ নিলাম বাংলা অনুবাদের। এটা শুধু একার কাজ না, অনেকের দরকার। নিজে অনুবাদ করেছি, অন্যদেরকে দিয়েও করিয়েছি। সেই সঙ্গে ভূমিকাও লিখেছি যত্ন করে।

হামিদ কায়সার: হ্যাঁ, আপনার অনুবাদ গ্রন্থগুলোর মধ্যে সুলিখিত ভূমিকা থাকে। বুদ্ধদেব বসুর অনুদিত গ্রন্থগুলোর ভূমিকাও অসাধারণ, প্রত্যেকটি স্বতন্ত্র প্রবন্ধের মর্যাদাতো পেয়েছেই, সেগুলো বাংলা সাহিত্যেরও সম্পদ।
মানবেন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়: আমি কিন্তু বুদ্ধদেব বসুরই ছাত্র। মনে রাখা দরকার, একজন অনুবাদক হিসেবে আমি কিন্তু আসলে পালন করছি সূত্রধরের ভূমিকা। কাজেই ভূমিকাতে অনূদিত বিষয়বস্তুর পরিপ্রেক্ষিতে, পটভূমি বিস্তারিত এবং বিশদ হওয়া প্রয়োজন। তা না হলে পাঠক বিভ্রমে পড়ে যেতে পারে। যাদু ও মায়া-বাস্তবতা সম্পর্কে যার সম্যক ধারণা নেই— সে কী করে ল্যাটিন আমেরিকান সাহিত্যের প্রকৃত রস আস্বাদন করবে?

হামিদ কায়সার: তো বলা যায়, আপনি ল্যাটিন সাহিত্য নিয়ে রীতিমতো একটি আন্দোলনই গড়ে তুললেন?
মানবেন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়: সচেতনতা তৈরি করা যাকে বলে। আমি ছোটদের মধ্যেও আগ্রহ তৈরির চেষ্টা করেছিলাম। ‘হরবোলা’ নামে একটি বার্ষিকী প্রকাশ করা শুরু করেছিলাম। ল্যাটিন আমেরিকা, ব্রাজিল-এর গল্প-কবিতা থাকতো। পরে প্রকাশ করি ‘জানালা’। এসব যখন প্রকাশিত হলো, তারপরই পশ্চিমবঙ্গ সরকারের অনুরোধে বের করি ‘জীয়নকাঠি’ নামের একটি সংকলন।

হামিদ কায়সার: সব ঐ ল্যাটিন আমেরিকান সাহিত্য?
মানবেন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়: হ্যাঁ, হরবোলায় প্রকাশিত গল্প নিয়ে দেজ     পাবলিশিং থেকে বেরিয়েছে ‘হরবোলা’ নামে একটি গল্পের সংকলন।

হামিদ কায়সার: কবিতারও তো একটি সংকলন আছে?
মানবেন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়: হ্যাঁ, ‘এই স্বপ্ন এই গন্তব্য’। নিকানো পাররারকে আমিই কোলকাতাকে নিয়ে এসেছিলাম। তার পড়া শুনে সবাই মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিল। কবিতার ক্ষেত্রেও বলবো আমি নতুন জানালা খুলে দিতে পেরেছি। ইউনোস্কো কার্নেভাল যে আলাদা রকম কবিতা লিখছেন, পূর্ব ইউরোপে যেমন মিরাস্লাভ হুলুপ, হের্বেটি, শিম্বার্সকা প্রমুখ কবিরা যে সম্পূর্ণ ভিন্ন ধারার কবিতা লিখছেন— এদেরকে এদেশের পাঠকদের কাছে তুলে ধরতে পেরে এক ধরনের আনন্দ পেয়েছি।

হামিদ কায়সার: বাংলাদেশের তরুণ পাঠক-পাঠিকারা কিন্তু এ নতুনত্বের স্বাদ ভালোভাবেই নিয়েছেন।
মানবেন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়: ওখানেও। শুরুতে কিন্তু তেমন একটা আগ্রহ ছিল না। ধীরে ধীরে তরুণদের মধ্যে বেশ আগ্রহ তৈরি হলো। এখন তো এসব বিষয়ে থিসিসও লেখা হচ্ছে। অথচ আমার সহপাঠী যারা পূর্ব ইউরোপে পড়তে গিয়েছিল— তাদের মধ্যেও এই ধারার সাহিত্যের প্রতি আগ্রহ ছিল না। এখানে মূলত সত্তরের পর এ আগ্রহটা প্রবল হলো।

হামিদ কায়সার: অনুবাদে আপনি এতো স্বচ্ছন্দ অথচ মৌলিক কাজে তেমন জড়াননি।
মানবেন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়: আমি কিন্তু মৌলিক লেখালেখি দিয়েই শুরু করেছিলাম। সিগনেট প্রেস থেকে ‘সাপগুলো অথবা ঘরবাড়ি’ নামে একটি কবিতার বই বেরিয়েছে। ১৯৫৮, ৬০, ৬১ সালের দিকে লিটল ম্যাগাজিনে আমি বেশ কিছু উপন্যাস রচনা করেছিলাম। উপন্যাসের প্রকরণের কথা ভাবলে সেগুলোর একটা আলাদা মূল্য অন্তত আমার কাছে আছে। কর্ম নিয়ে, টেকনিক নিয়ে আমি এক্সপেরিমেন্ট করেছি। তখন প্রকাশকরা ছাপাতে আগ্রহ দেখায়নি। কিন্তু এখন সেসব প্রকাশিত হচ্ছে এবং ভিন্ন তাৎপর্য নিয়ে উপস্থিত হচ্ছে। ‘চন্দ্রাহত’, ‘পুনরুদ্ধার’, নিয়ে কেউ কেউ লিখেছেও। তাছাড়া আমি খেলা বিষয়ক গল্প-উপন্যাস লিখছি অনেক দিন থেকেই। ‘খেলা অমনিবাস— ১, ২’ বেরিয়েছে। খেলা বিষয়ক গল্পের বই হলো, ‘গণ্ডি’, ‘কানামাছি’, ‘খেলসমাচার’।

হামিদ কায়সার: খেলা নিয়ে লিখছেন! বিশেষ করে কি কি খেলা?
মানবেন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়: ক্রিকেট, টেনিস, ফুটবল— তবে বিষয়টা খেলা হলে কি হবে এসবের মধ্যেও টেকনিক ফর্ম নিয়ে বেশ ভেবেছি এক্সপেরিমেন্ট করেছি।

হামিদ কায়সার: হ্যাঁ, আপনি অনেক মৌলিক কাজ করেছেন, কিন্তু একজন অনুবাদক হিসেবে আপনার খ্যাতি পরিচিতি এতটাই ব্যাপক এবং পরিব্যপ্ত যে, মৌলিক পরিচয়টি অনেকাংশেই যেন তাতে ঢাকা পড়ে গেছে। তা যা হোক, আপনি বাইরের সাহিত্য সম্পর্কে ব্যাপক জানেন, সে তুলনায় বাংলা ভাষার বর্তমান পরিস্থিতিকে আপনি কি চোখে দেখছেন?
মানবেন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়: এখন কিন্তু অন্যরকম লেখা হয়। যিনিই লেখেন তাকে অন্যরকম ধারা সুর তৈরি করে নিতে হয়। যিনি নতুনভাবে উপস্থাপন করেন আস্তে আস্তে তার পাঠক তৈরি হয়ে যায়। সাহিত্যের ব্যাপারটা হলো পাঠকের সাথে লেখকের একটা বিনিময়— কমলকুমার মজুমদারের বই চলে না, সেটা অন্য, কথা সেটা ব্যতিক্রম। কিন্তু লেখকের দায়িত্ব যেমন পাঠকের রুচি তৈরি করা; পাঠকেরও দায়িত্ব আছে লেখক তৈরি করা; লেখক পাঠকের এই যোগসাজশে আবহাওয়া বদল হতে থাকে। সমসাময়িক অনেক লেখাই হয়তো আমরা বুঝতে পারি না। বিচারটা করে মহাকাল। কবিতাতেও এক্সপেরিমেন্ট হচ্ছে, গল্প-উপন্যাসেও। দুই বাংলাতেই— এই প্রবণতাটা উৎসাহব্যঞ্জক।

হামিদ কায়সার: বাংলা ভাষায় বিদেশি অনেক গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্য অনুবাদ হয়েছে, হচ্ছে— এ দেশের পাঠকের কাছে পৌঁছাচ্ছে; তেমনি বাংলাভাষার উৎকৃষ্ট সম্পদগুলোও কি ভিন ভাষাভাষীদের কাছেও পৌঁছানো প্রয়োজন নয়?
মানবেন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়: অবশ্যই প্রয়োজন? আমি তো মনে করি,  আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের ‘খোয়াবনামা’, দেবেশ রায়ের ‘তিস্তাপারের বৃত্তান্ত’র মতো বইগুলো একাধিক ভাষায় অনুবাদ হওয়া প্রয়োজন। অবশ্য ইলিয়াসের ‘খোয়াবনামা’ ইংরেজিতে অনুদিত হচ্ছে ইকবাল হাসনূর কাগজে। একজন মহিলা অনুবাদ করছেন। চমৎকার নাকি অনুবাদ হচ্ছে। ‘চিলেকোঠার সেপাই’, হাসান আজিজুল হকের গল্পও যদি অনুবাদ হয়— খুব ভালো হয়। শুধু ইংরেজি কেন বাংলা সাহিত্যের সবসেরা সম্পদগুলো ফরাসি, জার্মানি সব ভাষাতেই অনুবাদ হওয়া দরকার। এমনকি আমাদের এখানে অন্যান্য যা ভাষা আছে, তাতেও। আমরা ইউরোপ-আমেরিকার সাহিত্যে কি হচ্ছে না হচ্ছে তার একেবারে সাম্প্রতিক খবর বলে দিতে পারবো, কিন্তু একেবারে গায়ের পাশে ওড়িয়া, কানাড়া, তামিল, উর্দু ভাষায় কি হচ্ছে— কিছুই বলতে পারব না। ওরাও বলতে পারবে না আমাদের সম্পর্কে। আমি ইটালির ভাষায় মহাশ্বেতা দেবির ‘বসাইটুটু’ অনুবাদ করিয়েছি। মহাশ্বেতার বই দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে অন্য দেশেও পৌঁছেছে। আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের ‘খোয়াবনামা’ও যত বেশি ভাষায় অনুবাদ হয় তত ভালো।

হামিদ কায়সার: ‘খোয়াবনামা’ আপনার খুব পছন্দের উপন্যাস?
মানবেন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়: অসম্ভব ভালো লেখা। এই যে দেখছেন না যত ফালনামা আমলনামা আর খোয়াবনামা পেয়েছি, কিনে নিয়েছি— ইলিয়াস নাকি লেখাটা তৈরি করতে গিয়ে অসম্ভব খাটা-খাটুনি করেছে। ও-বাংলাতেও ‘খোয়াবনামা’ খুব আলোচিত উপন্যাস। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছেলেমেয়েদের কাছে তো অসম্ভব প্রিয়।

আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের প্রসঙ্গ উঠতেই হঠাৎ কথা বলার ছন্দ দুজনেরই হারিয়ে গেল। তারপর আরো কি কি বলছিলেন, মানবেন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় আখতারুজ্জামান ইলিয়াস প্রসঙ্গে— তিনি মহৎ লেখক, তার সৃষ্টি সারা বিশ্বেই ছড়িয়ে যাওয়া উচিত। ... আমার চোখে তখন ভেসে উঠছিল টিকাটুলি থেকে বাসে ওঠা ঢাকা কলেজগামী একজন কলেজ মাস্টারের মুখ, ভ্যাপসা গরমে লোকের ভিড়ে হ্যান্ডেল ধরে গাদাগাদির মধ্যে দাঁড়িয়ে আছেন— অথচ মুখে নেই সামান্য বিরক্তির চিহ্ন; উলটো মানুষের কষ্টের সঙ্গে একাত্ম হতে পারার একটা গর্বের হাসি যেন ঝুলে আছে সে ঠোঁটে।

১৩ জুলাই ২০০০, সংবাদ সাময়িকী, দৈনিক সংবাদ