দিশেহারা বাম জোটের কালো দিবস

রিফাত বিন সালাম

প্রকাশিত : ডিসেম্বর ২৬, ২০১৯

সম্প্রতি ৩০ ডিসেম্বরকে কালো দিবস হিসেবে আখ্যা দিয়েছে বাম গণতান্ত্রিক জোট। জোটের বক্তব্য অনুযায়ী, আগামী ৩০ তারিখ আওয়ামী লীগের ভোট ডাকাতির এক বছর পূর্ণ হবে। স্বাভাবিকভাবেই নির্বাচন নিয়ে জোটের এই মূল্যায়ন বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু কালো দিবস ঘোষণার ঠিক পরেই আবার সেই একই নির্বাচনী ব্যবস্থায় পুনরায় ঢাকা সিটি করপোরেশনের মেয়র নির্বাচনে প্রার্থী ঘোষণা করেছে জোটের অন্যতম শরিক দল "বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)"।

 

২৬ ডিসেম্বর রাজধানীর পল্টনে সিপিবি কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রার্থী হিসেবে ঢাকা উত্তরে সিপিবি নেতা ডা. সাজেদুল হক রুবেল এবং দক্ষিণে ছাত্র ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি মানবেন্দ্র দেবনাথের নাম ঘোষণা করে সিপিবি। যাকে ভোট ডাকাত বলে আখ্যা দিয়েছে সিপিবি, সেই ডাকাতের কাছেই আবার "আস্থা" চেয়েছে দলটি। নির্বাচনের প্রতি জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনতে সরকার ও নির্বাচন কমিশনের প্রতি চারটি লিখিত দাবিও উত্থাপন করে দলটি। সিপিবির এমন দ্বিমুখী অবস্থান নিয়ে জোটের পক্ষ থেকে বা জোটভুক্ত দলগুলোও কোনো দ্বিমত প্রকাশ করেনি। সেক্ষেত্রে ধরে নেয়া যায়, ঢাকা সিটি করপোরেশনের মেয়র নির্বাচনকেও অংশগ্রহণমূলক করার চেষ্টায় তৎপর আছে বাম গণতান্ত্রিক জোট। তাদের এমন দিশেহারা অবস্থানে দলের নানা স্তরের নেতা-কর্মী-সমর্থকরাও দিশেহারা।

 

এরআগে, ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশভাবে জয় পায় অর্থাৎ নির্বাচন কমিশন আওয়ামী লীগকে জয়ী বলে ঘোষণা করে। নির্বাচনে ২৯৯ আসনের মধ্যে ২৮৮ আসন পেয়ে সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট।

 

একটা নির্বাচন তখনই প্রাথমিকভাবে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বৈধতা পায়, যখন যে নির্বাচনে রাষ্ট্রের অধিকাংশ নির্বাচনমুখী দলগুলো অংশ নেয়। আর সেক্ষেত্রে বাম গণতান্ত্রিক জোট ও ড. কামাল হোসেনের অবদানের কথা কোনোদিনও ভুলবে না আওয়ামী লীগ। অন্যদিকে বিএনপি এবং এরশাদের অবদানকেও ছোট করে দেখার সুযোগ নাই।

২০১৮ সালে নির্বাচন কমিশনের সকল আইন মেনেই নির্বাচনে অংশ নেয় বাম গণতান্ত্রিক জোট। নির্বাচনের আগে নির্বাচনী ব্যবস্থা নিয়ে তাদের কোনোরকম জোরালো আন্দোলন ছিল না, উল্টো নির্বাচনের আগে আওামী লীগের সাথে সংলাপও করে জোট নেতারা। এছাড়া বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) কার্যালয়ে গিয়েছিলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। সিপিবি সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম ও সাধারণ সম্পাদক শাহ আলমের সঙ্গে বৈঠক করেন ওবায়দুল কাদের। ওই বৈঠক নিয়েও সে সময় কোনো ধরনের সমালোচনায় যায়নি বাম গণতান্ত্রিক জোট।

 

২০১৮ সালের ২৪ জুলাই দৈনিক প্রথম আলো এক প্রতিবেদনে জানিয়েছিল, "বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) কার্যালয়ে গেলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। এ সময় তিনি সিপিবি সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম ও সাধারণ সম্পাদক শাহ আলমের সঙ্গে বৈঠক করেন। বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি, কোটা আন্দোলন, আগামী নির্বাচন ও বিভিন্ন রাজনৈতিক জোট নিয়ে তাঁদের আলোচনা হয়েছে বলে দুই দলের রাজনৈতিক সূত্র জানিয়েছে।"

 

আসন্ন ৩০ তারিখের কালো দিবস উপলক্ষে বাম গণতান্ত্রিক জোটের প্রধান বক্তব্য হলো- "আওয়ামী ফ্যাসিবাদী দুঃশাসন হটাও"
কোনো সরকারের আমলকে "ফ্যাসিবাদী দুঃশাসন" বলার অর্থ, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো সরকারের অধিনস্ত হয়ে যাওয়া। অথচ সেই একই ব্যবস্থায় আবার মেয়র নির্বচানের উদেশ্য কি হতে পারে? পুনরায় আরেকটা কথাকথিত অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন দেখবে জনগন!

 

মার্ক্সবাদের নামে সিপিবি এবং বাম গণতান্ত্রিক জোট আবারও আরেকটা অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন উপহার দিচ্ছে জনতাকে। যদিও অন্যদিকে জনতাকে ফ্যসিবাদের নামে রাস্তাতেও নামাতে চাচ্ছে! যা শেষ পর্যন্ত পুঁজিবাদের প্রধান হাতিয়ার।

 

(যে আটটি দল দিয়ে বাম গণতান্ত্রিক জোট গঠিত হয়েছে- ১. বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি, ২. বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল, ৩. বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, ৪. বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (মার্কসবাদী), ৫. গণসংহতি আন্দোলন, ৬. বাংলাদেশের ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগ, ৭. গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টি, ৮. বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক আন্দোলন)