দেবাশীষ তেওয়ারী

দেবাশীষ তেওয়ারী

দেবাশীষ তেওয়ারীর কবিতা ‘নিয়তির পাঠশালা’

প্রকাশিত : মে ২৩, ২০২১

১.
নিয়তির বাড়ি আমাদের গোয়ালপাড়ায়। মা শুদ্ধ বাপ-বেটার স্বপ্ন দেখার ফুসরৎটুকু জ্বালিয়ে খায় এ গাঁয়ের মধ্যবয়সি নটি খুইচ্যার মতো। তিন মাইল হেঁটে ইসকুলে একদিন ধানক্ষেতে একদিন এই পড়ে মেট্রিকে একবার ইন্টারে তিনবার— ব্যাস, এমন শিক্ষিত হয়ে
গ্লাস গ্লাস শ্যাম্পেনে না ভিজে, না লাগিয়ে
স্বমৈথুনে ক্লান্ত হতে হতে দেখি,
সূর্য প্রণামের প্রাতঃস্নাতিকারা যে যার ইচ্ছেমতো লুকিয়ে পড়ে ঝা-চকচকে ফর্সা হাতের মুঠোয়।
জন্মদমে মিছে পর্যটন, ঘড়ির হৃদয় কিভাবে উন্মুখ তার
ঠাওর হাতড়ে সবান্ধবে চলে যায় ক্যানাবিস পাড়া।
গাঝাড়া দিয়ে ওঠার জন্য গুম মেরে পড়ে থাকি রাগে
টাকাকড়ি নাই তাই অতশত না বুঝে নিয়তির কাঁধে চেপে শিবিরে শিবিরে পালিয়ে বেড়াই।
বজ্রবৃষ্টি ঠাণ্ডা রোদ এ-সমস্তই আমাদের চেনা বর্ণমালা
ফুটিফাটা বুকে সহ্য করি বোনের খাবলা।
ভাইয়ের জোয়ানির উচ্ছিষ্ট তাগদ।
নিয়তির নীল বাগিচার দিকে অসভ্য খোঁয়াড়ে
পুকুরপাড়ের কদম গাছটা মায়ের রান্নার ছাই হতে দেখি
বুকের বাষ্পে চোখ চাপড়িয়ে ভাবি, আর কতদূর!
আর কতদূর নেবে তুমি নিয়তি!

আমি জন্মে জন্মে নিশপিশ করা সোনালি কঙ্কনের মতো অন্যকোনো বেদনায় ছুটে যাব নিষ্কৃতিবিহীন,
পৃথিবীর রূপকথার সফল দৈত্যদের জমায়েতে, রিফিউজি ফসিলের দাগে। ঊর্ধ্বে তাকানোর মন্ত্র ছাড়া এ ডাঙায় অন্যকোনো তন্ত্র নেই
না থাক ইট-কাঠের সভ্যতা আমাকে স্ব-রোষ দেখালে
নিয়তির বাপ তুলে, বাল দেখিয়ে গাল দেব।

২.
ত্রৈলোক্য নুনের হাটে ইদানীং কেনাবেচা করে পেশাজীবী দোকানিরা। যে ছেলেটি কালতক কবিতা লিখত সে এখন কেইলা বিলের কাঁশবন কেটে শিং-মাগুরের চাষ করে দ্যাখে, পিদিম জ্বালানো সেই সাঁঝের গেরামে ফোকটামি করে অগুণতি ফাটা বাল্ব। নাকি এসবই জাগতিক বুদবুদ থেকে দু’একটা জ্যামিতিক রেখা? যা-হোক সে কথা ভুলে আর পারতেছি না
খামোখা নিশ্চিন্তের ভান করে ওই নিয়তির মেদ ইসকুলের ছাত্র হতে!

৩.
জন্ম শোকের তেমন কোনো দিশা নাই! ঠারে ঠারেই চলতে হয়। বাবার মেমোরি থেকে কিছু কিছু সোনা পেরে সাঁ সাঁ শোঁ শোঁ নেশাহাওয়ার জলসার রাতে
গাছে গাছে ঝুলে থাকা স্ব-ফলের মতোন ঋতুর হিশেবে
ঝিঁম ধরতেই হয় আর তখনই বিদ্যুতের মতো ভেলকির কোকিলেরা অনন্তের গান গেয়ে ওঠে...

৪.
ক.
আমি মিডলবেঞ্চের গুল্ম ছিলাম, দুই ধারে
ফার্স্ট ডিভিশন আর থার্ড ডিভিশনে পর্যটন করে গেছে সর্বাঙ্গীন বর্ষণের মেঘবালিকারা।

খ.
তাগনে আগুন মেঘেরাই ওড়াউড়ি করে
ডাক দ্যায়
আয় বজ্র গুল্ম খাই
আয় বজ্র কষ্ট গাই
আর গুল্মেরা প্রলুব্ধ হয় তুখোড় বৃষ্টির লোভে।

৫.
বাজারের বটতলে রোদেলা নির্জন
চল নিয়তির ঘরে গিয়ে দুটো টাকা বাকি খাই
দেখবি কিভাবে ভেসে ওঠে সুজনের মুখ
যদিও তার নদীর গল্প এখন দেনাদার বলে
নিলামের ঢোল রটিয়ে দিয়েছে কাল। নিয়তির ঘরে
নগদে বাকিকতে সুজন ও নদীর গল্প
নিয়তির খালে বয়ে যায়।