নাঈম ফিরোজের ৫ কবিতা

প্রকাশিত : জুন ০১, ২০২৫

এখন পৃথিবীতে বৃষ্টি নেই

এখন পৃথিবীতে বৃষ্টি নেই—
যা অভিমানের ওপর দিয়ে উড়ে যায়—

এখন আমাদের এমন বয়স, যে দূর থেকেই প্রিয়জন ও বৃষ্টি দুইই দেখা ভালো।

মাঝে মাঝে আমাদের চারপাশে মৃত্যু তার শাদা ঘ্রাণ নিয়ে আসে নিমের ফুলে,

আর সকল পাথরের ঘুমে— চিহ্নিত থাকে আমাদের একা-একা বলা কথাগুলো

নৈর্ঋত দিকে মানুষের জলচোখ উবে যায়

উবে যায়— গোলাপি কান্না, কোনো শিশুসুলভ মানুষের—

অবসন্ন মন, কোন দূরনিরাক নিপুণ নদীর দিকে হারায়—

কোনো একদিন আবার বৃষ্টিটিষ্টি হোক—

অমন লক্ষ্মীমন্ত বৃষ্টির দিনে
আমি তোমার সাথে আবার ভাত খেতে চাই—

এই চাওয়া
অতিথি পাখিদের অপরাজিত প্রতিজ্ঞার মতো—

বৃষ্টি মবলগ

কোকিলের কানে গাইছি গান
এ কোন কতলের আহ্বান?

এখনো কানের গোড়ায় কান পেতে বসে আছি অফুরান
গাইবো যে শাদা ম্লানিমার কোনো অচিন গানের শান

এখনো ভিন্তাজ বৃষ্টি হয় চিতলের রুপোয় আবহমান বাংলায়
আর ইডেনের অভ্যন্তরীণ চাপালিশ গাছের পাতায়

সেখানে অজস্র অস্তগামী পরীক্ষার্থী
হাইকোর্টের সম্ভাব্য অফিস সহকারীগণ
মাছির গতিতে আঙুলডানায় তুলে নিচ্ছে
পয়মন্ত বকুল আর শালিখের ঘুম যত

বৃষ্টিও যবনিকাপাত ঘটায়
মবের মতো ঝড়ে এই হাওয়া জল
তোমারও অসীমে প্রাণমন লয়ে

হে অমাময়ী, হে বামাচারিণী

মৃত্যুর সুনীল ইশতেহারে
এক সেকুলার সিন্ধু ঈগলের মতো আছড়ে পড়ছি আমি

এই দেখো!

সান্ডা

দীঘল বৃষ্টিতে রাস্তাঘাট ভিজে গেল
মহুল গাছটা নেচে গেল সুররিয়াল

এই ঝোড়ো অঝোর ধারায় অনেক কিছুই হয়ে গেল
কোকিলের গান ফিরে এলো পলাশীর রেইনট্রি গুলায়

এসব ঝাপটায় বাতাসে ভ্যাপসা গরম ভাসে বেশ
পাতা ঝড়ে জল পড়ে হরিণ হয়ে ছোটে রক্ত শইলে

এই গণআন্দোলনতন্ত্রী দেশে বিপুল গরমাগরমের পর
রহমত তার বৃষ্টির ডালা খুলে দিলেন

আই এম লাইক— হোয়াট দ্য গ্যাপ ম্যান
চারিদিকে এত ভোকশোধবোধ কেন?

বুয়েটে ইঞ্জিনিয়ারিং না পইড়া
ঢাবিতে আন্তর্জাতিক সম্পক্ক পইড়া
আবার সেইটা ছাইড়া ল` তে মারা পইড়া

একচল্লিশে আইসা
আমার এদ্দিনে মনে হইতেছে,

আমি কবুল কইরা নিসি আমার ভুলজম্মরে

ভাইস্তা জীবন আমার

চারিদিকে কাকা সব কা কা ক রে
চারিদিকে কাকিসব করে রব

চিল ম্যান, বৈশাখ বা জৈষ্ঠ্যমাস কোনোটাই জ্যেষ্ঠতার ক্রমানুসারে সাজায় নাই আমাদের বহুত পেইন

প্যারাময়তায় লীন এই অনির্বচনীয় ঢাকায়, ম্যান

কোইত্থে কোন দিন আহে কীয়ের রাইত যায়
আমরা উবদা খায়া ভ্যাটকায়া পইড়া থাকি

আবহমান বাংলা একটা পাতিহাঁসচেতনা যেন—

আমাদের সোনার জীবন সোনার মুদ্রা সব অনুজ্জ্বলতায়

প্রতিভাত হলে, ধইরা নাও—

আমরা ঠাণ্ডা হয়া গেলাম

আমরা সান্ডা হয়া গেলাম

ঝড়ের ঝি

ক্লিভেজের পাশে, নরোম রিপলের খাঁজে— জান্তব ঢেউয়ের তরঙ্গপাদে— একা!

ঝিঝড়— কী এইটা? এইটা কিছু হইলো?

ঝিঝড় মানে কী?

ঝিঝড়— এক খরঝড়— উষ্ণ ঝড়— ঝি এক শে— শক্তিমত্ত— পয়মন্ত শে— সোমত্ত ও নওল শে—

ঝড়কন্যা যখন প্রথম এসেছিলোকো সভ্যতায়— খ্রীস্টপূর্ব গ্রীষ্মের লাশ চারিদিকে আর তার মড়কে উপচে পড়ছিল তার শেতল হাওয়া—

কার গো ললিত কন্যে তুমি, ওগো— তুমি কে গা?

আর তুমি, হ্যাঁ তুমি মি. নাঈম ফিরোজ— এক ম্যানিকিন পাখিপালকের ছেলে,

হে ঝড়ো পোলা, দুষ্টুটা—
উট হয়ে ঊরুভঙ্গ হচ্ছো যে বড়?

—অনেক অনেক অনেক অন্য ক্লিভেজের পাশে, নরম রিপলের খাঁজে— জান্তব ঢেউয়ের তরঙ্গপাদে— একা!

দম্ভ-দুধমধ্যে পড়ে আছো, ওহে উড়িধান
ক্লিন্ন-যুযুধান ছেড়ে বেড়িয়ে এসো,
দেখো, কুহুতানে ঝরে

তোমারও প্রাণেরও ঝড়!

অস্ত্রেরা ঘুমিয়ে পড়ো

অস্ত্রস্তব্ধতা, কাকে তোমার পৃথিবী মনে হয়?
সশব্দে—
অনিঃশেষ গল্পের মতো আমাদের ঘুম আরো জমে উঠছে
রোদের চোখ থেকে বেরিয়ে পড়ে জিয়ল নদীর সারি!
সিজফায়ার— পথিকের ক্লান্তি
ক্ষমা চায় রবীন্দ্রপন্থায়
সিজফায়ার— পিকাসোও আলোফিতেয়
মোছেন রাতের ছবি, ইন্তিফাদা
জঙ্ হে— কাকে তোমার পৃথিবী মনে হয়?
অস্ত্রেরা থামে, কাকতাড়ুয়ার কান্না থামে না,
কাকবৃত্তীয় ছন্দে সে কান্দে
লেমনঘাসে রক্তাভ এক শহরের মগ্নমানচিত্র উপগত—
ফিলিস্তিন— রেকাবির প্রান্তীয় আলপনাতে
তুমি ফুটে উঠেছো আমার জন্য, রোজকার ডিনারে
জীবন— ক্রিসেন্থি (মাম)
আর (বাবা) জারুলের স্নেহে
এখন এক মাকড়সা— বেগুনি আনকাবুত
অস্ত্রেরা ঘুমিয়ে পড়ছে
তবু স্বাধীনতার ময়ূর যেন উড়ছে
আর মুছে যাচ্ছে মরণের দিনলিপিতে
সিজ ফায়ার!
অস্ত্র থামাও!
আগুন ভুলে যাও!
ইয়াদ রাখো— তোমাদের এই যুদ্ধের প্রাপ্তি কেবলই মৃত এক মাকড়সা— বেগুনি আনকাবুত!