নাটক ও নাট্যকলা: দীর্ঘ পথ চলা

পর্ব ৫

রাহমান চৌধুরী

প্রকাশিত : জুলাই ২৪, ২০২০

সুপ্রাচীন কাল থেকেই পৃথিবীর প্রতিটি গোষ্ঠীর মানুষ তাদের সভ্যতার বিকাশের প্রাথমিক পর্বে প্রাকৃতিক নানা বিপর্যয়ের সামনে দাঁড়িয়ে ধর্মীয় ধারণা গড়ে তুলেছিল। প্রাচীন রোমে ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি ছিল না খ্রীস্টপূর্ব দ্বিতীয় শতকে সাম্রাজ্য বিস্তারকালে। বরং গ্রীস আর এশিয়া মাইনরের অনেক দেবতা নাম পাল্টে রোমানদের দেবতা হয়ে গিয়েছিল। গ্রিক দেবদেবী জিউস, হেরা, এথিনা, ক্রনাস, হেডিস, আরেস; রোমে এস হয়ে গেল যথাক্রমে জুপিটার, জুনো, মিনার্ভা, স্যাটার্ন, প্লুটো, মার্স। জুপিটারের নাম থেকে ‘জুন’ মাস, স্যাটার্ন থেকে ‘স্যাাটারডে’, দেবী ফেব্রিস থেকে ফেব্রুয়ারি মাসের উৎপত্তি। খ্রীস্টপূর্ব দ্বিতীয় শতকে সরকার নির্দেশ জারি করে ধর্মের উপর বিদেশী প্রভাব নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে। সরকার বহু দেবতার উপাসনা নিষিদ্ধ করে। ধর্মীয় বাড়াবাড়ি নিয়ন্ত্রণের জন্য কিছু কিছু উপসনা শুধু রাষ্ট্রীয়ভাবে করা যাবে বলে নির্দেশ দেয়া হলো। সরকার রাষ্ট্রীয় কিছু ধর্মীয় অনুষ্ঠানকে ভক্তি-শ্রদ্ধা প্রদর্শনের পরিবর্তে আনন্দানুষ্ঠান উৎসবে পরিণত করে। কথাটা অবশ্য প্লাটো বলেছিলেন তাঁর ‘আইনসমূহ’ গ্রন্থে যে, রাষ্ট্রের স্বার্থে কী ধরনের ধর্ম পালন করা হবে সেটা ঠিক করবে রাষ্ট্র।

প্লাটোর আত্মীয় ক্রিটিয়াস লিখেছিলেন ভিন্ন কথা, কিছু ধূর্ত এবং জ্ঞানী মানুষ দেবদেবী আবিষ্কার করেন মানুষের মধ্যে শ্রদ্ধামিশ্রিত ভয় জাগানোর জন্য। গ্রীস এবং রোমের ভোগবাদী দার্শনিকরা অনেক আগেই বলেছিলেন, দেবতারা বাস করে অন্য জগতে; সেখানে বসে তারা মানুষের কথা ভাবে না। খ্রীস্টপূর্ব দ্বিতীয় শতকে রোমান বহু দার্শনিক বলেছিলেন, বিভিন্ন দেবদেবী বা ধর্মের নিয়ন্ত্রণ মুক্ত হয়ে মানুষের সুখলাভের জন্য রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। বরং খ্রীস্টপূর্ব প্রথম শতকের শেষে দেবদেবীর পূজা বাদ দিয়ে সম্রাটের পূজা করার কথা বলেন একদল চাটুকার। সম্রাট অগাস্টাস সে দাবি মেনে নেননি। খ্রীস্টীয় প্রথম শতকে ক্যালিগুলা সম্রাটের মূর্তি পূজার প্রচলন করতে খুব প্রচেষ্টা চালালেন।

সম্রাট অগাস্টাস আর ক্যালিগুলার মধ্যবর্তী সম্রাট ছিলেন টাইবেরিয়াস। টাইবেরিয়াসের শাসনকালে যিশুখ্রিষ্টকে ক্রুশবিদ্ধ করা হয়। টাইবেরিয়াস নিজে অবশ্য এর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না। যিশু সম্পর্কে ইতিহাসে সঠিক তথ্য পাওয়া যায় কম, নানারকম বিপরীত তথ্য রয়েছে যিশুর জীবনী সম্পর্কে। যিশু ছিলেন মূলত প্যালেস্টাইনের গ্যালিলি গ্রামের এক কৃষক সন্তান। প্যালেস্টাইন তখন রোম সাম্রাজ্যের দখলে। প্যালেস্টাইন তখন ইহুদি ধর্মের কেন্দ্রস্থল। সাম্রাজ্যের শাসকদের সঙ্গে ধর্ম নিয়ে ইহুদিদের সঙ্গে তেমন বিরোধ দেখা দেয়নি। কিন্তু সরকার যে অসম্ভব রকম করভার চাপিয়ে দিয়েছিল তা নিয়ে যিশু প্রতিবাদ করেন। যিশুর সঙ্গে আরো অনেকে ছিলেন এই লড়াইয়ে। ইহুদিদের অনেকে সাম্রাজ্যবাদের দোসর ছিলেন যারা সুদ আর ক্রীতদাসের ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। যিশু রোম সাম্রাজ্যের শোষণের পাশাপাশি স্থানীয় ইহুদি সুবিধাভোগীদের বিরুদ্ধে কথা বলতে আরম্ভ করেছিলেন। যিশু নিজে কিন্তু ইহুদি ধর্মে বিশ্বাসী ছিলেন, তিনি ইহুদিদের উপসনালয়ের পবিত্রতা রক্ষার জন্য লড়াই করেন। সত্যিকারভাবে প্যালেস্টাইনের ইহুদি উপসনালয়গুলি তখন ধনীদের ব্যবসা আর আর্থিক লেনদেনের জায়গা হয়ে দাঁড়িয়েছিল।

যখন রোমানদের শাসনে যিশুখ্রিস্ট বিদ্রেহ করলেন ইহুদি সুদখোর আর বণিকদের বিরুদ্ধে, পাশাপাশি রোমের শাসনের অত্যাচারের বিরুদ্ধে; জেরুজালেমের ইহুদি-বণিকরা যিশুকে নিয়ে এলো শাসক পন্টিয়সের কাছে। যিশু স্পষ্টই বলেছিলেন, দরিদ্রের ধন আজ লুণ্ঠিত হয়ে জমেছে ধনীর গৃহে। চাবুক হাতে তিনি জেরুজালেমের মন্দির থেকে লুটেরা ব্যবসায়ীদের বিতাড়িত করার উদ্যোগ নিয়েছিলেন। স্বাভাবিকভাবেই ইহুদি উপাসনালয়ের পুরোহিত সেটা পছন্দ করেননি। দাসমালিকদের নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন যিশু। যিশুর বিচারের সময়ে শাসক পন্টিয়স যিশুর ধর্ম নিয়ে মাথা ঘামাননি। পূর্বেই বলা হয়েছে রোমানরা ধর্ম নিয়ে মাথা ঘামাতো না। কিন্তু ধনী ইহুদিদের দাবির মুখে আর সাম্রাজ্যের স্বার্থ রক্ষার জন্য পন্টিয়স ত্রিশ থেকে ছত্রিশ বছর বয়সের যিশুকে ক্রুশবিদ্ধ করতে বাধ্য হলেন। যিশুকে ক্রুশবিদ্ধ করার আগে চাবুক দিয়ে পিটিয়ে তাঁর শরীর রক্তাক্ত করা হয়। যিশুকে যখন ক্রুশবিদ্ধ করা হয়, যিশুর নাম তখন জেরুজালেমের বাইরে প্রসিদ্ধ ছিল না। ফলে ব্যাপারটা নিয়ে তেমন হৈ চৈ হয়নি। যিশুর সঙ্গী বা সমসাময়িক মার্ক, লুক যিশুর মৃত্যুর পর যিশুর পক্ষে এমনভাবে প্রচার চালান যে ইহুদি ধর্মের পবিত্রতার রক্ষক যিশুর নামে খ্রীস্টধর্ম চালু হয়ে যায়। পরে পল আর পিটার যিশুর নামে খ্রীস্টধর্মকে আরো জনপ্রিয় করে তোলেন। প্রথম দিকে দরিদ্র দাসরাই খ্রিস্টান হতেন। কারণ ক্রুশবিদ্ধ যিশুর রক্তাক্ত দেহ তখন তাদের কাছে বিদ্রোহী মানুষের পরাজয়ের প্রতীক। দাসরা ছিল রোমক সমাজের প্রধান উৎপাদনী শক্তি। তাঁদের কাছে খ্রীস্টের আবেদন এসে পৌঁছেছিল উচ্চ নাদে। খ্রীস্টধর্ম তখন ধনীদের বিরুদ্ধে ঘৃণা প্রচার করে চলেছে। যিশুর নামে যা প্রচারিত হচ্ছিলো, মূলত তার বহু কিছু ছিল বাইবেলের পুরানো ভাষ্য, ইহুদি ধর্মীয় নেতাদের বাণী; যাঁরা বহু পূর্বে ধনীদের উদ্দেশ্যে অভিশাপ বর্ষণ করে গেছেন।

ইসাইয়া সেখানে বলেছেন, ধনী পুরোহিতরা হচ্ছে মূর্তিমান পাপ। বলেছেন, ধনীর হাত রক্তে কলঙ্কিত। তিনি বলেন, ধনীরা বিবেকহীন রক্তচোষা, জনতার সর্বস্ব লুণ্ঠনকারী। ইতিহাসের দ্বান্দ্বিক চরিত্র হলো, যদিও ইহুদি ধনীরা যিশুকে হত্যা করে জেরুজালেমের শাসক পন্টিয়স প্যালেটের সহযোগিতায় কিন্তু যিশু নিজে ইহুদি ধর্মের বাইরে ভিন্ন ধর্মমত প্রকাশ করে যাননি। বরং ইহুদি ধর্মের ইসাইয়ার বাণীর পবিত্রতা রক্ষা করতে চেয়েছিলেন দরিদ্র মানুষের পক্ষে। ইহুদিদের ধর্মগ্রন্থ থেকে যিশুর নামে ধনীদের বিরুদ্ধে সেই বক্তব্যেরই প্রতিধ্বনি চলতে থাকে প্রথম। ধনীর প্রতি শুধু ঘৃণা প্রকাশ করেই কিন্তু গোড়ার খ্রীস্টধর্মের প্রবর্তকরা নিজের কর্তব্য শেষ করেনি, যিশুকে ভিন্নভাবে উপস্থাপন করেছেন। বলা হয়েছে যিশু স্বয়ং চাবুক হাতে জেরুজালেমের মন্দির থেকে ব্যবসায়ীদের বিতাড়িত করেছিলেন। যিশু ব্যবসায়ীদের আর্থিক লেনদেনের টেবিল উল্টে দিয়ে বলেন, ‘আমার পিতার গৃহকে বাজারে পরিণত করো না। তোমরা পবিত্র উপাসনালয়কে চোরের আড্ডা করে তুলেছো।’ যিশু আরো বলেছেন, ‘যার তরবারি নেই, সে যেন নিজের পরিচ্ছদ বিক্রয় করে তরবারি কেনে’। যিশু মানুষের প্রচারের ফলে এভাবে হয়ে দাঁড়ালেন মূর্তিমান যোদ্ধা, যাকে ক্রুশবিদ্ধ করেও হত্যা করা সম্ভব হয়নি। ইশ্বরের পুত্রকে মৃত্যুদণ্ড দিতে চেয়ে ব্যর্থ হয়েছে শাসকরা, তিনি চলে গেছেন ভিন্ন জগতে। ফিরবেন আবার সমাজকে অনাচার থেকে রক্ষা করতে। মানুষের চিন্তা বা কল্পনায় যিশু খ্রীস্ট্রধর্মের প্রবর্তক হিসেবে প্রথম আবির্ভূত হয়েছিলেন ব্যক্তিসম্পত্তির বিরুদ্ধে লড়বার জন্য। যিনি বলছেন, ‘যা আছে তা ত্যাগ করতে হবে, না হলে আমার শিষ্য হবার পথ নেই’। যিশু বারবার বলছেন, ‘হ্যাঁ, আমার কাছে আসবার একটিই পথ; সর্বস্ব ত্যাগ’। যিশু তখন বারবার সম্পত্তি বিলিয়ে দেবার নির্দেশ দিচ্ছেন। ধনী-দরিদ্রের ভেদ ঘোচাবার জন্য ধনীকে সব ছাড়তে হবে এই হচ্ছে তার নির্দেশ। যিশু সত্যিই তা বলেছিলেন কিনা সেটা প্রধান প্রশ্ন নয়, যিশুর নামে প্রথম ব্যক্তিসম্পত্তি উচ্ছেদ আর সমাজতন্ত্রের ঘোষণা এলো। যিশুর নামে খ্রীস্টধর্ম গোড়ায় এসব প্রচার করছিল ম্যাথু, মার্ক আর লুক। দাসরা উদ্বুদ্ধ হয়েছিল খ্রীস্টের নামে এসব বাণীতে। ফলে দাসরা খ্রীস্টধর্ম গ্রহণ করেছিল সুযোগ সুবিধা মতো। দরিদ্র সাধারণ মানুষরাও যিশুর ভক্ত হয়ে দাঁড়ালো।

নাট্যকার সেনেকা ছিলেন যিশুর সমসাময়িক মানুষ। যিশুর আগে জন্মে মারা যান যিশুর পরে। তিনি ছিলেন প্রখ্যাত দার্শনিক। তিনি তাঁর রচনায় এক স্বর্ণ যুগের কথা বলেছেন। তিনি লিখেছেন, সভ্যতার একেবারে প্রথমদিকে স্বর্ণযুগ বিদ্যমান ছিল যখন মানুষ সুখী ছিল। মানুষ ছিল সহজ সরল, বিলাসিতা বলে কিছু ছিল না। কিন্তু পরে মানুষের লোভ ও ব্যক্তিগত সম্পত্তির আবির্ভাব মানুষের আদিম পবিত্রতা নষ্ট করে। যতদিন তারা পবিত্র ছিল সরকার বা আইনের প্রয়োজন ছিল না। তারা বিদ্বান ব্যক্তিদের শ্রদ্ধা করতো আর গুণী ব্যক্তিদের উপদেশ মেনে চলতো। কিন্তু যখন মানুষ ব্যক্তিগত সম্পত্তির মালিকানা পেল, তখন তারা বিলাসী, দুর্নীতিপরায়ণ ও লোভী হয়ে উঠলো। খ্রীস্টধর্মের প্রাথমিক চিন্তাধারার ভিত্তি হয়ে উঠেছিলেন সেনেকা। কাল মার্কসের বহু আগে বিশ্বে ব্যক্তিগত সম্পত্তির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ঘোষিত হয়েছিল। বিস্ময়কর যে রোমান সাম্রাজ্যের সম্রাট মার্কাস অরিলাস ছিলেন একজন দার্শনিক, যিনি ভ্রাতৃত্ব আর বিশ্বজুড়ে কল্যাণমূলক বা ‘কমনওয়েলথ’-এর বাণী প্রদান করেছিলেন। তিনি খ্রীস্টীয় দ্বিতীয় শতকের মধ্যবর্তী সময়ের সম্রাট ছিলেন। তিনি লিখেছেন যে, বিশাল এই বিশ্বের এক কোণে পড়ে আছে ইউরোপ আর এশিয়া। ইহজগতের সবকিছুই ক্ষুদ্র, পরিবর্তনশীল আর ক্ষয়িষ্ণু। তিনি মনে করতেন রোম তাঁর শহর, তাঁর দেশ; কিন্তু তিনি একজন বিশ্ব-নাগরিক। গ্রিক ভাষায় লিখিত নিজের বারো খণ্ডের দর্শন গ্রন্থে তিনি এসব কথা বলে যান। কিন্তু তার কয়েক শতকের ভিতরেই রোম সাম্রাজ্য খ্রিস্টান ধর্মের বন্ধনে বাঁধা পড়ে গেল।

যখন এসব ঘটছে তখন রোম সাম্রাজ্য দুর্নীতি আর বিলাসিতার আখড়া হয়ে উঠেছে। খ্রীস্টীয় দ্বিতীয় শতকের মাঝামাঝি দাসমালিকদের বিরুদ্ধে দাসরা বিদ্রোহ করে। বিরাট এক অভ্যুত্থান দেখা দেয় উত্তর আফ্রিকায়। বিদ্রোহীরা বেশ কয়েকটি শহর দখল করে নেয়। সম্রাটদের ক্ষমতা দুর্বল হয়ে পড়ে। খ্রীস্টীয় তৃতীয় শতকের মধ্যভাগে গল, স্পেন, মিশর এবং এশিয়ার প্রায় সমস্ত অংশ রোম থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। দিওক্লিতিয়ান তখন রোমের সম্রাট হলেন। বিদ্রোহীদের নির্মমভাবে দমন করে তিনি সাম্রাজ্যে কিছু সময়ের জন্য শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনেন। দিওক্লিতিয়ানের পর সাম্রাজ্যের শাসনক্ষমতা দখল করে সেনাপতি কন্স্টানটাইন। কন্স্টানটাইন বুঝতে পারলেন, চাবুক মেরে আর মৃত্যুদণ্ড দিয়ে দাসদের বা সাধারণ মানুষকে আর আজ্ঞা পালনে বাধ্য করা যাবে না। তিনি দেখলেন, বাকি ধর্মগুলির চেয়ে খ্রীস্টধর্ম উত্তম, তার দ্বারা শোষিতদের নিজের বশে রাখা সম্ভব। দাস আর দরিদ্রদের বিরাট একটা অংশ তখন এই ধর্মমত গ্রহণ করেছে। তিনি দেখলেন, দাসদের প্রিয় ধর্মই সাম্রাজ্যকে বাঁচাতে পারে। কারণ মার্ক আর লুক যা লিখে গিয়েছিলেন বিদ্রোহী যিশু সম্পর্কে, খ্রীস্টীয় প্রথম শতকের মধ্যবর্তী সময়ে পল আর পিটারের হাতে তার ভাষ্য অনেকটা পাল্টে গিয়েছিল। পল আর পিটার যিশুকে মহান করে তোলার জন্য তাঁর চরিত্র আঁকলেন ঋষির মতো করে। পল আর পিটারের ভাষ্যে ছিল, খ্রিস্টান ধর্মের ভ্রাতৃত্ববোাধ, ক্ষমাগুণ, স্বর্গ-নরক সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা, ধনী দরিদ্র নির্বিশেষে সকলকে সমান চোখে দেখা ইত্যাদি। ফলে কন্স্টানটাইন খ্রীস্টধর্মকে সাম্রাজ্যের সরকারি ধর্ম বানালেন।

খ্রীস্টধর্মকে সরকারি ধর্ম বানাবার পর, সম্রাট কন্স্টানটাইন বিরাট সভা আহ্বান করলেন খ্রীস্টান পাদ্রীদের। খ্রীস্টধর্মের বেশির ভাগ বাণী তখনো মুখে মুখে প্রচারিত হতো। নতুন ধর্মযাজকদের দায়িত্ব হলো খ্রীস্টধর্মকে এবার শাসকদের মতো করে ব্যাখ্যা করা, মার্ক আর লুকের ভাষ্য সম্পূর্ণ পাল্টে দেয়া। যিশু তখন আর বিদ্রোহী নন, তিনি নির্বিবাদী মহৎ প্রাণ। যদিও ইহুদিরা যিশুকে হত্যা করেনি, হত্যার প্রধান দায় ছিল রোমান শাসকদের। কিন্তু নতুন ভাষ্যে বলা হলো, নিষ্ঠুর ইহুদিরা সেই মহৎ প্রাণ ঈশ্বরের পুত্রকে বাঁচতে দিলো না। সেখানে রোমান শাসক পন্টিয়স আর তার স্ত্রীকে দেখানো হলো যিশুর প্রতি সহানুভূতিশীল মানুষ হিসেবে। বলা হলো, পন্টিয়স যিশুকে ক্রুশবিদ্ধ করতে চায়নি, কিন্তু নতুন খ্রীস্টধর্মের প্রবর্তক যিশুকে প্রাণদণ্ড দিতে বাধ্য করে জেরুজালেমের ইহুদিরা। নতুনভাবে যিশুর সব দিকগুলি ব্যাখ্যা হতে থাকলো নতুন ধর্মযাজকদের হাতে। নির্লোভ মহৎ প্রাণ যিশু মানুষকে বলে গেছেন, যার যা তাই নিয়ে সন্তুষ্ট থাকো, পরের সম্পত্তি লোভ করো না। যদি তোমার গালে কেউ চড় দেয়, তাকে আঘাত না করে ভিন্ন গালটি তার দিকে বাড়িয়ে দাও। ক্ষমা মহত্তের লক্ষণ। যিশুর মতো ধৈর্যশীল, ক্ষমাশীল মানুষকে হত্যা করলো ইহুদিরা। কী দুর্ভাগ্য! কতোটা নিষ্ঠুর ইহুদিরা! নতুন ভাষ্যে বা মিথ্যা প্রচারের ফলে ইহুদি বণিকদের কয়েকজনের অপরাধের পুরো দায় চলে গেল এবার পুরো ইহুদি সম্প্রদায়ের উপর। ফলে সারা বিশ্ব জুড়ে ইহুদিদের নিধন করা আরম্ভ হলো। প্রাচ্যে এবং পাশ্চাত্যে বছরের পর বছর তাই ঘটেছে, খ্রিস্টানদের হাতে ইহুদি নিধন চলেছে।

মুসলমানদের সঙ্গে ইহুদিদের প্রথম দিকে নানা বিরোধ থাকা সত্ত্বেও, মুসলমানরা মধ্যযুগে বা তার পরেও ইহুদিদের আশ্রয় দিয়েছে নিজেদের দখল করা অঞ্চলে। বিশেষ করে মধ্যযুগে স্পেনে ইহুদিরা মুসলিম শাসকদের কাছে পেয়েছিল বিশেষ সম্মান। খ্রিস্টানদের অত্যাচারে ইহুদিরা কয়েত শতাব্দী ধরে নিজ আবাস ছেড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়েছিল সারা বিশ্বে। নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখবার জন্য হলো সুদের কারবারি। ‘মার্চেন্ট অব ভেনিস’ নাটকে শাইলকের চরিত্রকে শেক্সপিয়র সেভাবেই আঁকলেন নাটকের শেষ দৃশ্যে। খ্রিস্টানদের অত্যাচারের কথা, ইহুদিদের প্রতি খ্রিস্টানদের তীব্র ঘৃণার কথা বলা হলো সেখানে। শাইলক নিজেই ইহুদি জাতির চরিত্রের ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন নাটকের শেষে। খ্রিস্টানদের তীব্র ঘৃণা দ্বারা শাইলকের মানসিক জগত কীভাবে বিপন্ন ছিল সেই ব্যাখ্যা পাওয়া গেল নাটকের শেষে শাইলকের সংলাপে। খ্রিস্টানদের তীব্র অত্যাচার আর ইহুদি বিদ্বেষ কীভাবে ইহুদিদের মানবিক চরিত্রে পরিবর্তন এনছিল নাট্যকার শেক্সপিয়র তার বিশ্লেষণ টানলেন নাটকের শেষে শাইলকের সংলাপের ভিতর দিয়ে। নাটক যে সমাজব্যবস্থার নতুন ব্যাখ্যা দাঁড় করায়, ক্ষমতাবানদের শোষণকে আর মানব চরিত্রকে বিশ্লেষণ করে; মার্চেন্ট অব ভেনিস তার উজ্জ্বল প্রমাণ।

ধর্মীয় ইতিহাস বর্ণনা বর্তমান রচনার প্রধান আলোচনার দিক নয়। কিন্তু খ্রীস্টধর্ম কীভাবে ইউরোপের নাট্যজগতের উপর চেপে বসেছিল তা নিয়ে কথা বলার জন্য সে সময়কালটা সম্পর্কে একটা ধারণা দেয়া গেল। খ্রীস্টধর্ম প্রচারের সেই যুগেও দ্বিতীয় শতকে নাট্যচর্চা অব্যাহত ছিল কমবেশি। নাটকগুলি হয় হাস্যরস বা গ্রীক নাটকের নানারকম দুর্বল অনুকরণ। স্বাভাবিকভাবেই সার্বিক ক্ষেত্রে রোমের অবক্ষয় বা পতনের আরম্ভ তখন থেকে। দ্বিতীয় শতকেই শুধুমাত্র নাট্যশালা, স্নানাগার আর সৌধ তৈরি করতে গিয়ে বহু নগরই আর্থিক অনটনে তাদের সমৃদ্ধি হারায়। তৃতীয় শতকে নগরগুলি হারায় তাদের নিরাপত্তা। নতুনভাবে খ্রীস্টধর্ম প্রচারিত হতে থাকলো কনস্টানটাইনের আমলে প্রাচীন রোমে। তিনি ধনসম্পদ দিয়ে খ্রীস্টধর্মকে পৃষ্ঠপোষকতা করতে থাকেন। তিনি খ্রীস্টীয় তিনশো ছাব্বিশ সালে নিজের নামে বস্ফোরাস প্রণালীর তীরে বায়জানটিয়ামে কনস্টান্টিনোপল নগর প্রতিষ্ঠা করেন। সাম্রাজ্যের রাজধানী পুরানো রোম শহর থেকে সেখানে স্থানান্তরিত করা হয়। রাজধানী রোম থেকে কনস্টান্টিনোপলে নিয়ে আসায় কিছু সঙ্কট হয়েছিল। নতুন রাজধানী পাশ্চাত্যের দেশসমূহ থেকে দূরে ছিল। ফলে ব্যবস্থা হলো, দুটো রাজধানী থাকবে। দুজন সম্রাট দুই রাজধানীতে বসে সাম্রাজ্য চালাবেন। পরবর্তীকালে চতুর্থ শতকেই সম্রাট জুলিয়ন খ্রীস্টধর্মকে বাতিল করে পূর্বের দেবদেবীর পূজা প্রচলন করতে চাইলেন। খ্রিস্টানরা তাঁকে বলতো, পাষণ্ড জুলিয়ন। কিন্তু জুলিয়ানের পর যিনি সম্রাট হলেন, সেই থিওডিসিয়স ছিলেন আবার গোড়া খ্রিস্টান। থিওডিসিয়স খ্রিস্টানদের সহায়তায় কিছুকালের জন্য পূর্ব আর পশ্চিম রোম সাম্রাজ্যকে একত্র করে কিছুদিন শাসন চালালেন। খ্রীস্টধর্ম তখন ভয়াবহ প্রভাব বিস্তার করে আছে। খ্রীস্টধর্মকে রুখবার শক্তি ইউরোপে তখন কারো নেই। যখন এরকম ঘটনা ঘটছে তখন প্রাচীন যুগ পার হয়ে মধ্যযুগ চলে এসেছে ইউরোপে। মধ্যযুগে রোমের শিল্প সংস্কৃতি বা নাটক সবকিছু খ্রীস্টান চার্চের অধীনে বিলীন হয়ে গেল।

মধ্যযুগের শাসকশ্রেণীর নিয়ন্ত্রণে চলে গেল শিল্প-সাহিত্য, দর্শন ও রাজনীতি। ইউরোপের মধ্যযুগটা ছিল গির্জা দ্বারা শাসিত। খ্রীস্টধর্ম আবির্ভাবের পর শাসনব্যবস্থার কেন্দ্র বিন্দু হয়ে দাঁড়ালো গির্জা। মধ্যযুগের শাসকরা বিশ্বাস প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে ইশ্বরের কাছে নিজেদের সম্পূর্ণ সমর্পণ করে। সেজন্য জ্ঞান-বিজ্ঞান ও নাট্যচর্চা বন্ধ হয়ে গেল কয়েক শতাব্দীর জন্য। গ্রীসের ধ্রুপদী নাটক সহ সকল ধরনের শিল্পকলা আর সাহিত্য চর্চা, সকল রকম বিজ্ঞানের গবেষণা সম্পূর্ণরকম বন্ধ করে দেয়া হলো। প্রাচীন যুগে যে-ধর্মীয় অনুষ্ঠানকে ঘিরে নাটকের জন্ম, মধ্যযুগে সেই ধর্মীয়-প্রতিষ্ঠানই আবার আইন করে নাটক মঞ্চায়ন নিষিদ্ধ করে দিলো। নাট্যচর্চা কোনো কারণ ছাড়াই যে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান দ্বারা নিষিদ্ধ হয়েছিল তা নয়। কারণ ছিল সামাজিক আর অর্থনৈতিক। নাট্যচর্চা সে-সময়ে হয়ে পড়েছিল খ্রিস্টানদের চোখে খুবই অশ্লীল। রচিত নাটক বা কোনো বিষয়বস্তু ছাড়াই নাট্যদলের পাত্রপাত্রীরা নিজেদের শরীর প্রদর্শন বা বিকৃত অঙ্গভঙ্গি করে দর্শকদের বিনোদন দেয়ার চেষ্টা করতো। নাটক বা নাট্যকর্মের সঙ্গে যুক্ত অনুষঙ্গসমূহ প্রাচীন রোমে এতোটাই অশ্লীল হয়ে পড়েছিল যে, গথ বা জার্মানদের দ্বারা রোমের পতনের জন্য শাসকরা অনেকেই নাট্যকর্মকে দায়ী করেছিল। কারণ নাট্যশালা, স্নানাগার বা সৌধ নির্মাণের বিলাসিতা করতে গিয়ে রাষ্ট্রের নিরাপত্তার দিকে দৃষ্টি দেয়া হয়নি। নাট্যকর্ম তার দার্শনিক জায়গাটা বা নাটক মঞ্চায়নের মূল উদ্দেশ্য হারিয়ে ফেলেছিল বলেই তা হয়ে উঠেছিল নিছক বিনোদন। নিছক বিনোদন শেষ পর্যন্ত টিকতে পারে না, দর্শককে আর আকর্ষণ করে না। ফলে একটা সময় আসে যখন যৌনতা বা অশ্লীলতা প্রদর্শনের মধ্য দিয়ে দর্শককে আকৃষ্ট করার চেষ্টা চলে। ঠিক সেটাই ঘটেছিল মধ্যযুগের রোমে নাট্যচর্চার ক্ষেত্রে। খ্রিস্টান শাসিত পশ্চিম রোমের যে পতন ঘটেছিল, মনে করা হয়েছিল সেটা সেই বিভিন্ন অশ্লীলতা প্রদর্শনের পাপের ফল।

খ্রিস্টান ধর্মযাজকরা তখন যে নাট্যকলার বিরুদ্ধেই শুধু যুদ্ধ ঘোষণা করেছিল তা নয়, পৌত্তলিকতা ও যে-কোনো উৎসব বা অনুষ্ঠানের প্রবল বিরোধী ছিল। জ্ঞানবিজ্ঞানের চর্চা তো বন্ধই করা হয়েছিল। চার্চের আইনকানুন আর হুকুম দ্বারা চলতো পুরো রাষ্ট্র। সম্রাটের চেয়ে পোপের ক্ষমতা ছিল বেশি। সম্রাটকে বহুক্ষেত্রে পোপের হুকুম মেনে চলতে হতো। খ্রীস্টধর্মের শাসনের এরকম সময় দাসদের বিদ্রোহ ভয়াবহ রূপ নিয়েছিল, পাশাপাশি ছিলো জার্মানদের আক্রমণ। সাম্রাজ্যের মধ্যে প্রতিষ্ঠিত হলো স্বাধীন জার্মান মানে কেলটিকদের রাজ্য, খ্রীস্টীয় পঞ্চম শতকে পতন হলো পশ্চিম রোম সাম্রাজ্যের। কিন্তু বাইজানটিয়াম বা কনস্টান্টিনোপলকে ঘিরে খ্রিস্টানদের পূর্ব রোমান সাম্রাজ্য টিকে রইলো আরো হাজার বছর। ইউরোপে মধ্যযুগের সূত্রপাত হলো সেদিন থেকে যেদিন পশ্চিম রোম সাম্রাজ্যের পতন ঘটেছিল। পশ্চিম রোম সাম্রাজ্যে দাস ব্যবস্থা ভেঙে জন্ম নিয়েছিল সামন্ত সমাজ ব্যবস্থা। পূর্ব রোমান সাম্রাজ্যের খ্রিস্টানরা জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চার পথে বাধা হয়েই রইলো। কন্স্টানটাইন যখন বাইজানটিয়ামকে ঘিরে কনস্টান্টিনোপল নগর পত্তন করেন তখন তিনি আশা করেছিলেন, নতুন রাজধানী একটি গ্রীকো-রোমান শহর হয়ে উঠবে, আইন প্রশাসনে ব্যবহৃত হবে ল্যাটিন ভাষা। দ্বিতীয়ত প্রাচ্যের জ্ঞান, শিক্ষা ও সভ্যতার ছোঁয়া পেয়ে সে প্রকৃত অর্থে বড় হয়ে উঠবে। গ্রীসের নাটক আর সাহিত্য জগতের স্পর্শ পাবে নতুন রাজধানী। তিনি পাশাপাশি এটাও ভেবেছিলেন পূর্ব রোমান সাসাম্রাজ্য হবে খ্রিস্টান ধর্ম প্রচারের জায়গা। কিন্তু তার ধর্ম প্রতিষ্ঠার ইচ্ছা ঠিক রইলো, হারিয়ে গেল জ্ঞানবিজ্ঞানের চর্চা। খ্রিস্টান পুরোহিতরা হয়ে পড়লো রক্ষণশীল। সেই রক্ষণশীলতা অরো বেড়ে গেল ইসলাম ধর্মের আবির্ভাবে।

ইসলাম ধর্মের নবীর মৃত্যুর শত বছরের মধ্যে মুসলমানরা পারস্য সাম্রাজ্যকে পরাস্ত করে এবং বহুকাল বাইজানটাইন সাম্রাজ্যের ভেতরে থাকা সিরিয়া ও মিশর অধিকার করে নেয়। মুসলমানরা তাদের সাম্রাজ্য বিস্তৃত করে পূর্বে ইস্পাহান থেকে পশ্চিমে ত্রিপোলিতানিয়া পর্যন্ত। ভূমধ্যসাগরীয় জগতের নিরাপত্তা নাটকীয়ভাবে চলে যায় মুসলমানদের হাতে, ফলে কনস্টান্টিনোপলকে প্রকৃত বিপদের সম্মুখিন হতে হয়। খ্রিস্টান চার্চের তিনটি প্যাট্রিয়কেট বা পবিত্রভূমি আলেকজান্দ্রিয়া, অ্যান্টিয়খ ও জেরুজালেম মুসলমানদের হস্তগত হয়। খ্রিস্টান ধর্মের স্তম্ভস্বরূপ সেই কেন্দ্রগুলিতে প্রচলিত হয় মুসলিম রীতিনীতি, গ্রীক ভাষার বদলে প্রাধান্য লাভ করে আরব ভাষা। ধ্রুপদী রোমান সাম্রাজ্যের অর্থনীতি গড়ে উঠেছিল প্রধানত ভূমধ্যসাগরীয় বাণিজ্যকে কেন্দ্র করে। মুসলমানদের দ্বারা তিউনিসিয়া অধিকারই ছিল ভূমধ্যসাগরীয় রোমান বাণিজ্য ধ্বংস করার ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। নুরিয়ার সোনার খনিগুলি থেকে যে সোনার চালান কনস্টান্টিনোপল-এ আসতো তার উপর ভিত্তি করেই ভূমধ্যসাগরীয় বাণিজ্য চলতো। কিন্তু ছয়শো চল্লিশ খ্রিস্টাব্দে মিসর মুসলমানদের দখলে চলে গেলে পূর্ব রোমান সাম্রাজ্য এ সোনার খনি থেকে বঞ্চিত হয়। বাণিজ্যের বিলুপ্তি বা হ্রাস পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই মুছে যায় নগর ও শহরের রমরমা, পৌর আইন-কানুন আর পৌর প্রতিষ্ঠান সমূহ এবং মুদ্রার কমতি দেখা দেয়। চার্চের প্রতিপত্তি তাতে বাড়ে বৈ কমে না। কথাগুলি বলবার কারণ, মূলত অর্থনীতি দ্বারা সবকিছু নিয়ন্ত্রিত হয়। শিল্প-সাহিত্য চর্চার উপর প্রভাব ফেলে তা; সামাজিক প্রতিষ্ঠান এবং ধর্মের ক্ষেত্রে তার নানারকম প্রভাব থাকে। সঙ্গে সঙ্গে এটাও বলা দরকার, ইতিহাসের গতি-প্রকৃতি বাদ দিয়ে নাটকের আলোচনা হতে পারে না। নাট্যশিল্পকে সঠিকভাবে বুঝতে হলে; ইতিহাস, অর্থনীতি, সমাজবিজ্ঞান না বুঝলে চলবে না। নাটক মাত্র চায়ের টেবিলের আলোচনার বিষয় নয়, নাটক বা নাট্যকলা একটি দর্শন এবং একই সঙ্গে একটি সামাজিকবিজ্ঞান। চলবে