নাসরীন জাহানের অনুগল্প ‘যখন মনে হচ্ছে তুমি চলে যাচ্ছ’

প্রকাশিত : ফেব্রুয়ারি ০১, ২০২৪

অনেক সুন্দর একটা বাতাস উঠলো। জানালার পর্দা খুলে বহুদিন পর একটা বুনো গন্ধ পেলাম। আর তারপরই দীর্ঘদিন পেরোনোর পরে তোমার খবর পেলাম, শুনলাম তুমি হাসপাতালে। কোলন ক্যান্সার হয়েছে। প্রায়ান্ধকার ঘরের মেরুণ পর্দা ছাপিয়ে আমার হাজব্যান্ডের মুখ স্পষ্ট হচ্ছিল না।

দেশের বাইরে কোথায় যাওয়া যায়, এ নিয়ে কথা বলতে একেবারে অফিসের কাজ বাদ দিয়ে বেডরুমে এসে বসেছিল।
আমার মাথায় ভিবজিওর, নিজের চেতনে অবচেতনে ঘুরছিল। করোটির কা কা ছিড়ে নিচ্ছিল কালভদ্র।
হঠাৎ কফিতে টান দিয়ে বলল, যাবে? হুম যাবো তো।

সেখানে নয়, হাসপাতালে। চমকে উঠলাম, বিহবল হাত থেকে গরম কাপ ছাড়িয়ে সটকে যেতে থাকে হাত, ফলে চুপ হয়ে যাই।

বললে আমি সব খবর জানি। বলি, আমি তো কিছু বলি নি, কিন্তু,, বললে, যখন দেখবে,হৃদয়ের সাথে প্রাণ মিশে গেছে,
আর কোন শব্দ নেই,, গলা থেকে স্বর বেরোয় না। আমি কী আমার আগের স্ত্রীকে ভুলতে পেরেছি? তাই বলে তোমাকে কম ভালোবেসেছি? আমাদের মধ্যে শব্দ হয়েছে? এখন তোমার প্রাক্তন অসুস্থ, আর কত সরাসরি বলব?

পুরো ছায়াপথ প্রাক্তন শব্দকে মাথায় নিয়ে আমি হাসপাতালে যখন তোমাকে দেখতে এলাম, যেনবা পুরো সুস্থ এমন ভঙিমায় তুমি আমার হাতে লোরকা তুলে দিয়ে বললে, এখনো কবিতা পড়ো?

তার মানে তুমি জানতে আমি আসব? বললে না। কিন্তু অপেক্ষা ছিল। ঘামের গন্ধে গুনগুন করছিল বাতাস। সেভলনের সাথে পুরোনো ঘাম, আর স্মৃতি পেরিয়ে বিহবল সেই হোচট খাওয়া পথ, পেরিয়ে জুলেখা বাদশাহ মেয়ে তার ভারী অহংকার,,,কত সহজ বিষয় নিয়ে আমরা হেসে গাড়িয়ে পড়তাম।

বলতে রাতের আলো লুকিয়ে থাকে,, দিনের সূর্যের ভেতর,, শুনে বলতে বাহ! আহা! সেইদিন। তোমার কোন খারাপ নেশা ছিলো না,আজ এই অবস্থা?

তুমি বলো, আসলে দারিদ্র্য আমাকে সাধ্যের বাইরে লড়িয়েছে,অবশ্য তাও ঠিক নয়,আজকাল কত কাজ করো, এখন মনে হচ্ছে,যে নারীর মুখ পথশ্রমে ক্লান্ত সে দেখতে আগের চেয়ে বেশি সুন্দরি হয়।

অদ্ভুত শিহরণ জাগে। মুখভর্তি দাড়ি বিশ্বসাহিত্য পড়ুয়া মানুষটার কথার মধ্যেও কী জাদু এখনো! যেন গান,বলতে থাকলে সম্পর্ক শুকিয়ে গেলে জলে কিছু হয়?

তেমন নেশা আমারও ছিলো না। বিয়ের পরে হাজব্যান্ডের সাথে টানার অভ্যাসে আমিও টানা সিগ্রেট পিপাসু হয়ে গেছি।
তোমার চোখ যায় চেয়ে রইল আমার চোখের দিকে। ভুলে সিগ্রেট ধরিয়ে টান দিয়ে দ্রুত ফেলে
বারান্দায় ছুটে যাই।

ফিরে যখন কফির অর্ডার দেব ভাবছি,, দেখি, আমার ফেলে দেয়া সিগ্রেট এ তুমি আগুন ধরাচ্ছ।