নেমেসিস

মোহাম্মদ খালিদ সাইফুল্লা ফয়সল

প্রকাশিত : নভেম্বর ২১, ২০১৯

একটা খুন হলো। ধানমন্ডির ৭ এর ভিটা নুভা বিল্ডিংয়ে। এবং, খুন হলেন দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয়, আলোচিত এবং উঁচু অবস্থানে থাকা একজন লেখক, নাট্যকার এবং পরিচালক। জায়েদ রেহমান।

পর সকালে বাংলাদেশের হোমিসাইড ডিপার্টমেন্টের এর দুর্দান্ত কর্মকর্তা ঘন্টা দুয়েকের মধ্যে ই ধরে ফেললেন খুনি কে। সেই সাথে, খুনের সাথে সম্পর্ক থাকা ঐ লেখকের ঘরের একজনকে গ্রেফতার করে ফেললেন।

শুরু হলো তদন্ত আর পুরো দেশ জুড়ে উত্তাল ঢেউয়ের মতো ছড়িয়ে গেলো এই সংবাদ। যেহেতু, খুনি ধরা পড়ে গিয়েছে, অতএব, ফাইল বন্ধ। কেইস ক্লোজড।

একই সাথে, ঐদিন রাতে এক বড় সড় দূর্ঘটনা ঘটলো এক প্রকাশনীতে। প্রকাশনীর এক প্রকাশকের কাছে এলো লেখকের নিজের আত্নজীবনী।

যেখানে লেখক নিজের জীবনের সব নষ্ট আর অন্ধকার ঘটনা আলোকপাত করেছেন। লেখকের নিজের লেখা এই বইটি যেন ছিলো অভিশাপের আর্শীবাদ!

কিন্তু না! তদন্তকারী কর্মকর্তা, জেফরি বেগ যখন তদন্ত শুধু করলেন, তখন খুনীর তালিকা এক, দুই, তিন করে.... ছয়-সাত জনে পৌঁছালো।

একজন লেখককে খুন করতে এতোজন লোক প্রস্তুত?

 

আমার এখন পর্যন্ত, বাংলা সাহিত্যের থ্রিলার জগতের অন্যতম দুর্দান্ত, টানটান উত্তেজনা এবং মোহের আকর্ষণে ভালো লেগে যাওয়া অন্যতম হচ্ছে বই ‘নেমেসিস।’

আমার মতে, বাংলা ভাষায় মৌলিক থ্রিলার গোছের সাহিত্যের ক্ষেত্রে বিরাট পটপরিবর্তনের সূচনা বোধ হয় এই বইয়ের মাধ্যমে, নেমেসিস এর দ্বারা।

 

থ্রিলার তো এদেশে অনেকে লেখেন। কিন্তু দুঃখের ব্যাপার, তাদের বেশিরভাগ হয় বিদেশী থ্রিলারের কিঞ্চিত বা সামগ্রিক ছায়া অবলম্বনে রচিত। ফলে সেগুলোর আর মৌলিকত্ব থাকে না। সেগুলো হয়ে যায় রুপান্তর বা অনুবাদের নামান্তর। কিন্তু সেদিক থেকে নেমেসিস সম্পূর্ণ আলাদা।

 

কারণ, এটির কাহিনী ও কাঠামো একেবারে মৌলিক এবং লেখকের নিজস্ব চিন্তাপ্রসূত। এই বইয়ের মাধ্যমে মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন ভাই প্রথম জানান দিয়েছিলেন যে, তিনি শুধু থ্রিলার অনুবাদে নয় বরং মৌলিক থ্রিলার রচনায়ও সমান পারদর্শী।

 

নিজের ব্যক্তিগত পাঠ প্রতিক্রিয়ায় বলবো যে, লেখক মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন ভাই বেশ সার্থকতার সাথে ই দেখিয়েছেন যে, বাংলাদেশের চিরচেনা প্রেক্ষাপট আর পরিচিত জায়গা দিয়েও থ্রিলার উপন্যাসের রহস্যের জাল বোনা সম্ভব।

জেফরি-বাস্টার্ড সিরিজের প্রথম পর্ব হল নেমেসিস। এই নেমেসিসের মাধ্যমেই বাংলা ভাষাভাষী পাঠকের সাথে প্রথম পরিচয় ঘটেছে জেফরি ও বাস্টার্ড নামক দুই অসাধারণ চরিত্রের যারা খুব অল্প সময়ের মধ্যে থ্রিলার ভক্তদের মনে একটা নিজস্ব ভালোলাগার জায়গা তৈরি করে নিতে সক্ষম হয়েছে।

এই থ্রিলারের কাহিনী আবর্তিত হয়েছে দেশের অতি বিখ্যাত এক লেখকের মৃত্যু রহস্যকে কেন্দ্র করে, আপাত দৃষ্টিতে যার সহজ সমাধান অনায়াসে করে ফেলে জেফরি। কিন্তু এক পর্যায়ে কাহিনী নতুন দিকে মোড় নেয়। নানা ঘটনা প্রবাহে রহস্য আরও ঘনীভূত হয়। আর এক পর্যায়ে জেফরির সামনে উন্মোচিত হয় অচিন্তনীয় কিছু সত্যের, যা বলতে গেলে গোটা হত্যা রহস্যের গতিপথ বদলে দেয়।

বইপ্রেমী, থ্রিলারপ্রেমী এবং সব সাহিত্যপ্রেমীদেরকে বাংলা থ্রিলার সাহিত্যের অন্যতম মারাত্নক দুর্দান্ত এক কাহিনী পড়ার আমন্ত্রণ জানাচ্ছি। এবং, কথা দিচ্ছে যে, পাঠক আপনি বিন্দু থেকে বিন্দুমাত্র হতাশ এবং বিরক্ত হবেন না।

 

চরিত্রঃ জায়েদ রেহমান, বর্ষা রেহমান, জেফরি বেগ, এসই সিদ্দিকী, বাস্টার্ড..... সহ প্রমুখ।

একুশে বইমেলা ২০১৮