পুঁজিবাদ, সিন্ডিকেট এবং বর্তমান বাংলাদেশ

হাসান আজারকাত

প্রকাশিত : নভেম্বর ২৪, ২০১৯

তৃতীয় বিশ্বের যেকোনো দেশেই আইন ও বিচারব্যবস্থার চেয়ে পুঁজি শক্তিশালী। এই যে পেঁয়াজ কেলেঙ্কারি হলো, সরকারের পক্ষ থেকে আওয়াজ আসলো, যে সিন্ডিকেটই কারসাজির পেছনে থাকুক না কেন বিচারের আওতায় আনা হবে। অথচ এই সিন্ডিকেটকে এখনও পর্যন্ত চিহ্নিতই করা হয়নি। কেন হয়নি? এর প্রধান কারণ সিন্ডিকেট লুটেরা সরকারেরই কাছের মানুষজন দ্বারাই গঠিত।

এইখানেই পুঁজির সাথে ক্ষমতার সম্পর্ক অবিচ্ছেদ্য। শুধু পেঁয়াজ নয়, সব সেক্টরেই এই দৌরাত্ম্য দৃশ্যমান। পুঁজিবাদী অর্থনীতি কখনোই অর্থনৈতিক নৈরাজ্যের দায় নিতে চায় না। তারা Inflation এর উপর দায় চাপায়। কিন্তু গোটা পুঁজিবাদী অর্থনৈতিক ব্যবস্থাই যে এই Inflation এর জন্য দায়ী, সেটা তারা এড়িয়ে যায়। পুঁজিতান্ত্রিক ব্যবস্থা জারি থাকলে Demand & Supply এর ব্যালেন্স সিন্ডিকেটের মাধ্যমে নষ্ট করে একটা অর্থনীতির প্রতিকূলে নৈরাজ্য তৈরি করা সম্ভব। এরপর সেই নৈরাজ্যকে কাজে লাগিয়ে হাজার হাজার কোটি টাকা লোপাট করা সম্ভব। যা পুঁজিবাদী অর্থনৈতিক ব্যবস্থা না থাকলে সম্ভব নয়। কিন্তু নিমিষেই বহুদিনের চর্চিত পুঁজিবাদী ব্যবস্থার বিলোপ সাধন সম্ভব নয়। এমন চিন্তা করা শুধু বোকামিই নয়, মারাত্মক ভুলও বটে।

একটা রাষ্ট্রে পুঁজির বিকাশ কেমন হবে সেটা নির্ভর সেই রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক পরিস্থিতির উপর। পূর্বেই উল্লেখ করেছি, ক্ষমতার সাথে পুঁজির সম্পর্ক অবিচ্ছেদ্য। কানাডার পুঁজিবাদী অর্থনৈতিক ব্যবস্থার সাথে বাংলাদেশের পুঁজিবাদী ব্যবস্থার কোনও মিল খুঁজে পাওয়া সম্ভব নয়। এর প্রধান কারণ, রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও চর্চা। কানাডায় একটা বামপন্থী দল ক্ষমতায় গেলে যত সহজে সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থায় উত্তরণ করতে সক্ষম হবে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে ঠিক ততটাই কঠিন হবে। কারণ কানাডায় পুঁজিবাদের বিকাশ সেই দেশের সমাজে কিছুটা হলেও ভ্যালু অ্যাড করে, জনগণকে আংশিক হলেও অর্থনৈতিক নিরাপত্তা দেয়। এই বিকাশটি সম্ভব হয়েছে সেখানকার গণতান্ত্রিক ক্ষমতা কাঠামোর জন্য। অপরপক্ষে বাংলাদেশের পুঁজিবাদের বিকাশ সম্পূর্ণ বিপরীত। সমাজে কোনও ভ্যালু তো অ্যাড করেই না, অর্থনৈতিক নিরাপত্তা তো দেয়ই না বরং উল্টো জনগণের মাথার উপর ব্যাপকহারে ঋণের বোঝা চাপিয়ে দিচ্ছে।

দিনকেদিন অর্থনৈতিক নৈরাজ্য বেড়ে যাচ্ছে। এর প্রধান কারণ রাজনৈতিক নৈরাজ্য, দেউলিয়াত্ব ও স্বৈরতান্ত্রিক ক্ষমতা কাঠামো। তাই সমাজতন্ত্রের বুলি আওড়ানোর আগে আমাদের ভাবা প্রয়োজন, কোনটা আগে জরুরি? স্বৈরতন্ত্রের উচ্ছেদ নাকি পুঁজিবাদী অর্থনৈতিক ব্যবস্থার। গণতন্ত্র আগে নাকি সমাজতন্ত্র? দীর্ঘদিনের চর্চিত নৈরাজ্যকর পুঁজিবাদী ব্যবস্থার রাতারাতি উচ্ছেদ নাকি পুঁজির বিকাশ অনুযায়ী তাকে প্রতিস্থাপন?