বঙ্গবন্ধুকে নিবেদিত অমিত কুমার কুণ্ডুর কবিতা
প্রকাশিত : আগস্ট ১৭, ২০২০
সেরা এক মহারাজ
শত বছরের পরাধীনতার শিকল ভাঙার পরে
শত জনমের স্বাধীনতা এলো আমাদের গেঁয়োঘরে
শত প্রতিকূল পরিবেশ থেকে অনুকূল হলো দেশ
শত ঝঞ্ঝাট কত বিভ্রাট চিরতরে নিঃশেষ।
এরকম হবে, ভেবেছিল জাতি কিন্তু হলো না সেটা
ভেতরে ভেতরে দেশে বেড়ে ওঠে বিষধর কেউকেটা
এক কালো রাতে কেড়ে নিল তারা সোনার দেশের তাজ
বাঙালি হারাল সর্বকালের সেরা এক মহারাজ।
তিনি আজ নেই তবুও আছেন সবুজে সবুজে মিশে
এই হৃদয়ের রক্তের মাঝে তাই খুঁজে পাই দিশে
মধুমতি আজ যার ছোঁয়া পেয়ে গৌরবে বহমান
তিনি আমাদের জাতির জনক মুজিবুর রহমান।
আজকে যারা স্বাধীন দেশে বাস করে
আজকে যারা সুখেই আছে স্বপ্ন অনেক মন জুড়ে
অনেক দামি টিভি-ফ্রিজ আছে ঘরের কোণ জুড়ে
অপার সুখের জীবনযাপন যাচ্ছে কেটে দিন ভালো
চোখ ধাঁধানো প্রাসাদ তাতে লাল গোলাপি নীল আলো।
আজকে যাদের আয় বেড়েছে অনেক বেশি রব আছে
ব্যাংক হিসাবে টাকার পাহাড় বাড়ি-গাড়ি সব আছে
আজকে যাদের দাপট অনেক জয়ের নেশা অন্তরে
বগলদাবায় মন্ত্রী মামা আমলা রাষ্ট্রযন্তরে।
আজকে যাদের বাড়ির ধারে কলেজ আছে সরকারি
হাটবাজারে দখল আছে যা যা আছে দরকারি
আজকে যাদের হচ্ছে রোপণ হাইব্রিডের বীজ ভূমে
যা প্রয়োজন সব রয়েছে নিজের কাছে নিজভূমে।
কেমন করে তাদের মনে অধীনতার ছাপ পড়ে
দূর্বিষহ সেদিন কি আর পড়লে মনে চাপ পড়ে
কিংবা যারা দেখেনি সেই ব্রিটিশ শাসন, পাকিস্তান
নিজের বাড়ি পর হতো আর দখল হতো বাকি স্থান।
লাটসাহেবের লাটসাহেবি নীল চাষে দিন কাটত যে
আমার দেশের চাষি মজুর তাদের হয়ে খাটত যে
উর্দু হতো শেখার ভাষা মায়ের ভাষা বাদ পড়ে
ভিনদেশিদের হুকুম তামিল করতে হতো রাত ভরে।
সেই অবিচার স্বাধীন দেশে এরা কি আর বুঝবে রে
স্বাধীনতার মহত্ত্বটা নিজ হৃদয়ে খুঁজবে রে
তাই অনেকে যদিও এই স্বাধীন দেশে বাস করে
তবুও তারা মন মগজে পাকিস্তানের চাষ করে।
বুঝবে না সে বুঝবে না রে শেখ মুজিবের মহত্ত
রক্তবীজের ছানাপোনা বলতে পারে অকথ্য
তাদের কথায় কান দিতে নেই, মান দিতে নেই তাদেরকে
স্বাধীনতার শত্রু তারা বুঝতে পারো যাদেরকে।
সবাই শপথ নিন
দীর্ঘ ন’মাস রুদ্ধশ্বাসে অপেক্ষা করে দেশ
কোথাও ছিল না সহজ-সরল নিরাপদ পরিবেশ
মানুষ ছিল না শান্তিতে ঘরে আঁধারে নামত ভয়
দিন পার হতো দুশ্চিন্তায় কখন কী জানি হয়!
সুন্দরী মেয়ে মুখে কালি মেখে লুকিয়ে থাকত ঘরে
কখন আবার কোন হায়েনার নষ্ট নজর পড়ে!
যোদ্ধা ছেলের বাবার কাটত আতংকে সারাদিন
কী জানি কী হয় দুশ্চিন্তায় বুকে ব্যথা চিনচিন।
মানুষের মনে শান্তি ছিল না স্বস্তি ছিল না বুকে
অসহায় রোগী ওষুধ না পেয়ে মারা যেত ধুঁকে ধুঁকে
শহরে ও গ্রামে মতলববাজ দালালরা ছিল বেশ
আইয়ুব খানের টুপিতে ঢাকত তাদের বাহারি কেশ।
বীরের রক্তে দু’হাত রাঙাত নারীদেহে দিত হাত
পিশাচ উন্মাদনায় কাটত ওদের কুপিত রাত
লুটের মালের ভাগবাটোয়ারা চলত নিত্যদিন
ওদের জন্য ঘৃণা ছুড়ে দিতে সবাই শপথ নিন।
পাশাপাশি জেনো এদেশ পেয়েছি লক্ষ জীবন দানে,
লাখো মা বোনের যুদ্ধে হারানো খুব দামি সম্মানে।
এদেশ আমার রক্ত ঝরানো লক্ষ প্রাণের দান
এদেশের পিতা বঙ্গবন্ধু মুজিবুর রহমান।
মুজিবুর মুজিবুর
মুজিবুর মানে মহাসমুদ্র হাজার যুগের ঢেউ
মুজিবুর থেকে শ্রেষ্ঠ বাঙালি কখনো আসেনি কেউ
বাংলাদেশের আকাশ-বাতাস নদ-নদী পথঘাট
শহর নগর বন্দর থেকে ‘গাঁও-গেরামের’ হাট
অনু-পরমাণু জলের কণায় বাজে যে মোহন সুর
কান পেতে শোনো, সেই সুরধ্বনি মুজিবুর মুজিবুর।
মধুমতি তীরে কায়িক শরীরে আসবে না ফিরে তবে
এই মাটি-জল ছায়া-সুশীতল সৌরভে-গৌরবে
তিনি তো আছেন, শ্বাস-প্রশ্বাসে পাই সেই অনুভ‚তি
ধমনীর ধ্বনি, বোঝাতে সে কথা নেই ত্রুটি-বিচ্যুতি
হাজার যুগের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বাঁশিতে নতুন সুর
হিমালয় সম মহান মানব মুজিবুর মুজিবুর।
আমাদের জাদুকর
ওই আসে দেখো জাদুকর এক প্রবল জ্যোতির্ময়
চারিদিকে জয় ডঙ্কা বাজছে নেই নেই কোনো ভয়।
সেই জাদুকর আলোতে রাঙাবে দীর্ঘ অন্ধকার
তাঁর ছোঁয়া পেয়ে ভেঙে শেষ হবে শোষকের কারাগার।
চাঁদসূর্যের জ্যোতি নিয়ে এল দুখি বাঙালির ঘরে
আয় রে খোকাকে করব বরণ বাকি কাজ হবে পরে।
এই আহ্বান আজকের নয় অনেক বছর আগে
করেছিল জানি পূর্বপুরুষ প্রেমপ্রীতি অনুরাগে।
তখন এদেশ পরাধীন ছিল ভিনদেশিদের হাতে
নীলকরদের নিপীড়নে থাকি শঙ্কিত দিনে-রাতে।
সেই কালো যুগে আলো হয়ে আসে একটি আলোক অসি
সেই তো আমার শেখ মুজিবুর সেই তো সূর্য শশী।
সেই শিশু ক্রমে বড় আরো বড় সূর্য সমান হয়ে
স্বাধীন দেশের বিজয় পতাকা আনল স্বদেশে বয়ে।
মুজিবের ডাকে আমরা স্বাধীন গর্বিত নর-নারী
বিজয় আনতে এক নদী লাল রক্ত দিয়েছি পাড়ি।
মুজিবের ডাকে পরাধীন থেকে স্বাধীন স্বদেশে হাসি
সকলের প্রিয় বঙ্গবন্ধু, তোমাকেই ভালোবাসি।
স্বাধীন জাতির পিতা
স্বাধীন জাতির পিতা মুজিবুর রহমান
বাংলাদেশের বুকে রয়েছেন বহমান
কখনো যায় কি ভোলা ভুলতে কি পারি
মুজিব জাতির পিতা তিনি কান্ডারি।
দৃঢ় সংগ্রাম করে স্বাধীনতা এনেছেন
আপন দেশ ও জাতি মনে-প্রাণে জেনেছেন
ধান-শালিকের দেশে রয়েছেন মিশে
মুক্তি মুজিব ছাড়া আর পাই কিসে?
মুক্তির তটরেখা ছুঁয়েছেন তিনি
বাঙালির আদর্শ রূপে শুধু চিনি
লৌহ মানব তবু সুকোমল প্রাণ
মুজিবের বুক জুড়ে এ মাটির ঘ্রাণ।
যতদিন এই দেশ এ জগত আছে
বীররূপে থাকবেন বাঙালির কাছে
মুজিবের দিকে চেয়ে উঁচু হয় শির
সালাম জাতির পিতা সুমহান বীর।
























