বাংলাদেশে করোনা ভাইরাসের সত্যিকার ঝুঁকি

আশরাফুজ্জামান শ্যামল

প্রকাশিত : মার্চ ২১, ২০২০

আজ থেকে দিনকয়েক আগের ঘটনা। ঘটার সময় কেউ ব্যাপারটার তাৎপর্য ওভাবে বোঝেনি। বাংলাদেশের এক বৃদ্ধ ভদ্রলোক বিদেশফেরত কারো সংস্পর্শে এসেছিলেন। সেই সময়টাতে ধুলোর চেয়েও শতগুণ ছোট কিছু বস্তু সুড়সুড় করে তার নাকমুখে ঢুকে পড়ে। বস্তুগুলো প্রায় গোলাকার, তাদের গায়ে কেমন বিশ্রী খাঁজকাটা, আর চারদিকে এক পরত থিকথিকে ঝিল্লী। খাঁজগুলোর জন্য বিজ্ঞানীরা এদেরকে ডাকেন করোনা ভাইরাস। করোনার এক অর্থ মুকুট, ভাইরাস মানে বিষ। এই মুকুটঅলা বিষগুলো বৃদ্ধের ফুসফুসে জায়গা করে নিল চুপচাপ।

আমাদের শরীর প্রচণ্ড রক্ষণশীল। দেহে কোনও ধরনের বহিরাগত দেখলেই সে হামলা চালায়। ফুসফুসে এই নবাগতদের দেখে বৃদ্ধের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হুংকার দিয়ে উঠল। যে জায়গাটাতে ভাইরাসেরা বাসা বেঁধেছে, সেখানে গিয়ে তারা বিষাক্ত বিভিন্ন রাসায়নিক ঢালা শুরু করল। বেচারা ভদ্রলোকের সত্তর বছর পুরোনো ফুসফুসের অত সহ্যক্ষমতা ছিল না। নিজের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার এই আক্রমণ সে নিতে পারল না মোটেই। ফুসফুসে জায়গায় জায়গায় ক্ষত হয়ে ভেতরে পানি জমতে শুরু করল। আমাদের ফুসফুস বেলুনের মতো। প্রাণভরে শ্বাস নেয়ার সময় পুরোটা সম্পূর্ণ ফুলে ওঠে। কিন্তু বুড়োর ক্ষতবিক্ষত বেলুনভর্তি পানি। সেই জিনিস ফুলিয়ে বুক ভরে শ্বাস নেয়া অসম্ভব। এই করতে করতে অবশেষে ভদ্রলোক একটুকু শ্বাসের অভাবে ফুসফুসের পানিতে ডুবে মরলেন।

এই হচ্ছে বাংলাদেশে করোনা ভাইরাসে প্রথম মৃত্যুর ঘটনা। আমার মনে হয়, এই ঘটনার প্রেক্ষিতে আমাদের একটু সামনের দিনগুলো সম্পর্কে চিন্তা করা উচিত। করোনা সংক্রান্ত অনেক সংখ্যাটংখ্যা এর মধ্যে আপনাদের মুখস্থ হয়ে গেছে। আন্তর্জাতিক জরিপ সংস্থা ওয়ার্ল্ড ওমিটারের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এ পর্যন্ত ১৮৫টি দেশ ও অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে করোনা ভাইরাস। বাংলাদেশ সময় শনিবার সকাল দশটা পর্যন্ত ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১ হাজার ৩৯৮ জনে। মোট আক্রান্তের সংখ্যা ২ লাখ ৭৫ হাজার ৯৪৪ জন। আক্রান্তদের মধ্যে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছে ৯১ হাজার ৯১২ জন।

করোনা ভাইরাসের মতো মহামারি আপনি আপনার জীবদ্দশায় দেখেননি, এবং সামনেও দেখবেন তার সম্ভাবনা কম। এটা সম্পূর্ণ নতুন ধরনের এক পরিস্থিতি, যার সাথে আপনার-আমার কারো আদৌ পরিচয় নেই। বাংলাদেশে করোনার ধাক্কাটা আসতে আর দিনকয়েক। ধাক্কাটা হবে প্রচণ্ড এবং অকস্মাৎ।

সাধারণত রোগীর থেকে অসুখ কখন বেশি ছড়ায়? আগে এই প্রশ্নটার উত্তর নিয়ে একটু ভাবুন। বাস্তব অভিজ্ঞতা বলে, রোগী যখন খুব অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে বন্দি থাকে, সেই সময়টায় তার থেকে অসুখ বেশি ছড়ায়। এজন্য হাসপাতাল থেকে ফিরে হাতমুখ ভালো করে ধুতে বলা হয়।

আজ থেকে আঠারো বছর আগে চীনে আরেকবার করোনা ভাইরাসের উপদ্রব হয়েছিল। সেই অসুখটার নাম ছিল সার্স। ছোটবেলায় সমাজ বইতে হয়তো পড়ে থাকতে পারেন। তার উপসর্গও ছিল একইরকম, ফুসফুসে গিয়ে ঝামেলা করা। আর সেই অসুখের ভাইরাসটার সাথে এই নতুন শয়তানটার অনেক মিল আছে।

সেই পুরোনো সার্স কিন্তু ওইভাবেই ছড়াত। ভাইরাস ধরার কিছুদিন পর রোগীর মধ্যে উপসর্গ দেখা দিত, কিছুদিন পরে খুকুর খুক নিয়ে তিনি হাসপাতালে ভর্তি হতেন। নিউমোনিয়া যত চূড়ান্ত হতো, ভাইরাস তত বেশি ছড়াত। এজন্য পুরোনো সার্স নিয়ে সবচেয়ে বেশি ভয়ে ছিলেন ডাক্তার-নার্সরা।

আবার এই একই কারণে পুরোনো সার্সকে নিয়ন্ত্রণ করা অত জটিল কিছু ছিল না। যেহেতু হাসপাতালের রোগীদের মাধ্যমেই বেশিরভাগ রোগ ছড়াচ্ছে, কাজেই হাসপাতালগুলোতে নজরদারি করলেই হয়। এই নজরদারি করে করেই সার্স অসুখটা মিইয়ে গেল। এই নতুন করোনা ভাইরাস সেরকম নয়। এ ভাইরাস ছড়ানোর সেরকম দিনক্ষণ নেই, উপসর্গ না থাকলেও মানুষ ভাইরাস ছড়াতে পারে। অর্থাৎ একজন মানুষ দিব্যি হাসছে, কাজ করছে, কথা বলছে, আবার হাসির সাথে সাথে মানুষের মধ্যে ভাইরাসটা সমানে ছড়িয়ে যাচ্ছে। এ পরিস্থিতি নতুন করোনা নাভাইরাসের ক্ষেত্রে খুবই সম্ভব।

এর মানে ভালো করে বুঝুন। জোয়ান তাগড়া কেউ হয়তো ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। তার এককণা উপসর্গ নেই। তিনি তার স্কুল-কলেজ বা অফিসের দুজন এমনকি চারজনের মধ্যে ভাইরাসটা ছড়িয়ে দিতে পারবে। সেই দু-চারজন ছড়াবে আরো আটজনের মধ্যে। তারা আরো ষোলজন। বত্রিশজন। চৌষট্টিজন। এই করে করে ফুলেফেপে করোনার তাণ্ডব নিমেষেই ছড়িয়ে যাবে। বোঝাই যাবে না কোত্থেকে সে এসেছে।

এই দু`দিন আগে একটা গবেষণাপত্র বের হলো, চীনে করোনা ভাইরাস কীভাবে ছড়িয়েছে কী বৃত্তান্ত, তাই নিয়ে। সেখানে গবেষকরা একটা গাণিতিক মডেল করে দেখিয়েছেন, এই ‘অদৃশ্য’ ভাইরাস আক্রান্তরা প্রায় আশি ভাগ অসুখের জন্য দায়ী। সংখ্যার হেরফের হলেও মোটামুটি একইরকম ফলাফল এসেছে চায়নার তিয়েনশিনে, সিঙ্গাপুরে, যুক্তরাষ্ট্রে। উপসর্গবিহীন সাধারণ চেহারার লোকজন বিপুল বিক্রমে ভাইরাস ছড়িয়ে যাচ্ছেন। আপনি এবার মাথা চুলকে বের করুন দেখি, এরকম একটা মহামারিকে আপনি কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করবেন।

কাকে আপনি চোখে চোখে রাখবেন? কেউ কাশি দিলে তার থেকে দূরে সরবেন ভাবছেন? হয়ত কিছুটা লাভ হবে, কিন্তু এদিকে কাশি-না-দেয়া কেউ হয়ত আরো জোরেসোরে ভাইরাস ছড়িয়ে যাচ্ছে। এ লেখাটার প্রচ্ছদছবিটা দেখুন। করোনা শুরুর একদম প্রথম দিককার ছবি। এটা একটা গবেষণাপত্র থেকে নেয়া। ওপরে আমি কিছু আঁকিবুঁকি করেছি। বামপাশের অক্ষ কেটে দিয়েছি। ছবিতে দুটো ব্যাপার মনে হয় দেখছেন। এক নম্বর, সবুজ-ফিরোজা রঙের কিছু বার আস্তে আস্তে ওপরের দিকে উঠে আবার নেমে যাচ্ছে। দু`নম্বর, হলুদ রঙের কিছু বার তার কিছুদিন পরে একই কাজ করছে।

দুটো রঙের বারই ভাইরাস আক্রান্তদের সংখ্যা। পার্থক্য হলো, হলুদ বারটা বোঝায় হাসপাতালে পরীক্ষা করতে গিয়ে যাদের ভাইরাস ধরা পড়েছে। অন্যদিকে সবুজাভ বার হচ্ছে যাদের এখনো অসুখ হয়নি, কিন্তু ভাইরাস তাদের ঠিকই আছে। কিছুদিন পরেই ধরা পড়বে। যে জায়গাটাতে লাল সরলরেখাটা টানা, তার বামে ডানে দেখুন। এই সরলরেখার বামদিকে কোনও হলুদ নেই। অর্থাৎ এখনো হাসপাতালে কারোই সেরকম করোনা ধরা পড়েনি। কিন্ত এই লাল সরলরেখার আগে কিন্তু সবুজাভ বার ঠিকই আছে। এর মানে কী?

এর মানে, যখন চীনে একটা ভাইরাস আক্রান্তও ধরা পড়েনি, তখনও অনেকের মধ্যেই ভাইরাসটা ছিল। সপ্তাহখানেক সে মোটামুটি মানুষের মধ্যে ঘুমিয়েছে। সে সময়টাতে শুধু সবুজ বারই আছে, কোনও হলুদ নেই। কিন্তু সপ্তাহটা যাওয়ারই অপেক্ষা। তারপরই হলুদ বার তরতরিয়ে বাড়তে শুরু করল। লাল দাগের সময় চীন কর্তৃপক্ষের টেস্ট করা রোগীর সংখ্যা ছিল একশো। কিন্তু আসলে ভাইরাস আক্রান্তের সংখ্যা কত ছিল জানেন? দেড় হাজার।

আপনি, এই যে আপনি, যিনি আমার এই লেখাটা পড়ছেন, এটা মোটেও অসম্ভব নয় যে, আপনিও ফুসফুসে ভাইরাস নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। সপ্তাহ ঘুরতেই আপনি খুকুর খুক শুরু করবেন, সচেতন না হলে মানুষের মধ্যেও ছড়িয়ে বেড়াবেন। হাতে গোনা যে কয়জনের দেহে রোগ ধরা পড়ে, তাদের চেয়ে অনেক বেশি সংখ্যক মানুষ ভাইরাস দেহে নিয়ে উপসর্গ ছাড়া থাকেন। এদের দেহে ভাইরাস অসুখ শুরু করে আরেকটু দেরিতে। দেরি বলতে ওই সপ্তাহখানেকই। ব্যাস, দেশময় অসুখের একটা বিস্ফোরণ ঘটে।

আইইডিসিআরের বক্তব্য অনুসারে বাংলাদেশে এখন কেইস সংখ্যা সতের। আসল কেইস সংখ্যা কত? যুক্তরাষ্ট্রে ভাইরাসটা প্রথম আঘাত হানল ওয়াশিংটনে। গবেষকেরা ভাইরাসটার আরএনএ ঘাঁটাঘাঁটি করে দেখিয়েছেন, যখন ওয়াশিংটনে ভাইরাসের একটা রিপোর্টও ছিল না, সেই শূন্য কেইসঅলা অবস্থায় আসলে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ছয়শো বিশ। এই মুহূর্তে বাংলাদেশে করোনার ঘুম আস্তে আস্তে ভাঙা শুরু করেছে। অন্যান্য দেশের হিসেব থেকে আমরা যা বুঝি, অসুখের বিস্ফোরণ আল্লাহ না করুক সপ্তাহখানেকের মধ্যেই হওয়ার কথা। যদি আপনি এটা মানতে না চান যে বিস্ফোরণ হবে, তাহলে যে পরিণতি কী হবে, সেটা অন্তত ভাবুন।

আমাদের দেশের ঘনবসতি, দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ইত্যাদি বাদ দেন। শুধু দুটো ব্যাপার চিন্তা করুন। এক, বিগত এক মাসে বাংলাদেশে প্রায় লাখখানেক প্রবাসী বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে এসেছে। আমার জানামতে, অধিকাংশই কোনও ধরনের কোয়ারান্টিন ছাড়া জনস্রোতে মিশে গেছে। দুই, করোনার আক্রমণটা যে আসলে কতটা ভয়াবহ, সেটা বলাও এই মুহূর্তে আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। এর কারণ পরীক্ষা করা হয়েছে শুধু হাতেগোনা কয়েকজনের ওপরে। পৃথিবীর প্রত্যেকটা দেশেই এখন টেস্টের সরঞ্জামের অভাব। তা আমি সবার আগেই মানি। কিন্তু তারও তো একটা মাত্রা আছে। যেমন দক্ষিণ কোরিয়ায় প্রতি দশ লাখ মানুষের জন্য মোটে পাঁচ হাজারটা টেস্ট। ইতালিতে মোটে এক হাজার, মালয়শিয়ায় একশো। বাংলাদেশে দুইটি।

চাচ্ছিলাম বিভিন্ন দেশের এই দশ লাখ মাথাপিছু টেস্টগুলো একটা গ্রাফে এঁকে আপনাদের দেখাব, কিন্তু এই দুই সংখ্যাটা এতই বিকট দেখালো যে ধ্যাত্তেরি বলে বাদ দিলাম। একদিক থেকে বলতে পারেন, এর পেছনে যুক্তি আছে। এখনও আমাদের কর্তৃপক্ষরা সমাজের মধ্যে করোনা ভাইরাস ছড়ানোর প্রমাণ পাননি, এজন্য তারা গণহারে টেস্ট করেননি। কিন্তু আমরা তো পৃথিবীর আর দশটা দেশের অবস্থা দেখেছি। প্রত্যেক দেশেই প্রবাসী দিয়ে শুরু হয়। সপ্তাহ যেতে না যেতেই রীতিমত মড়ক লেগে যায়। ইতালি ইরান স্পেইন ফ্রান্সে এটাই তো হচ্ছে। এর সাথে যোগ করুন অনর্গল অনিয়ন্ত্রিতভাবে দেশে প্রবাসীদের ফিরে আসার ব্যাপারটা। বিস্ফোরণ যে একটা আসছে, এবং আসছে খুব শিগগিরই, তাতে বোধহয় সেরকম সন্দেহ নেই।

স্বাস্থ্যব্যবস্থার ওপর চাপ নিয়ে আমি আলাদা করে কিছু লিখতে চাই না। একজন ডাক্তার আমার চেয়ে সেটা আরো ভালো বলতে পারবেন। শুধু একটা ব্যাপার বিশেষ করে আমাকে বেশ ভাবায়, সেটা হলো, করোনা ভাইরাস রোগীদের একটা গুরুত্বপূর্ণ অংশকে, শতকরা পাঁচ ভাগের মতো আইসিইউতে ভর্তি হতে হয়। এমনিতেই আমরা আমাদের দেশের গুরুতর অসুস্থ রোগীদের খুব কম একটা ভাগকেই আইসিইউ সুবিধা দিতে পারি। করোনা বিস্ফোরণের পর সেটাই আরো শতগুণে বাড়বে আরকি। ডাক্তারদের ভাগযোগ করে মুমূর্ষু রোগীকে অক্সিজেন দিতে হবে এ প্রেক্ষিতে বিজ্ঞানের দৃষ্টিকোণ থেকে করণীয় খুব পরিষ্কার।

মনে রাখবেন, করোনা অপ্রতিরোধ্য। অন্যান্য দেশ থেকে পাওয়া অভিজ্ঞতা, যুক্তিপ্রমাণ ইত্যাদি বলে, সে আমাদের মধ্যে এর মধ্যেই জেঁকে বসেছে, শুধু বিস্ফোরণটা ঘটানো বাকি। একমাত্র অলৌকিক কিছু ছাড়া মনে হয় না আমরা একে থামাতে পারব। সেটা অসম্ভব। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর ভাষায়, দাবায় হয়তো রাখতে পারব। ভাইরাসকে দাবায় রাখা মানে এমন একটা ব্যাপার করা, যাতে সে আমাদের মধ্যে একটু আস্তে আস্তে ছড়ায়। আমরা যদি এর ছড়ানোর হার এক চিলতেও কমাতে পারি, তাহলে আমাদের স্বাস্থ্যব্যবস্থার ওপর চাপ এক চিলতে কম পড়বে। হয়ত আর দুটো বুড়ো একটু অক্সিজেন পেয়ে বাঁচতে পারবে। এভাবে কিছুদিন ব্যাটাকে সংগ্রাম করে মাটিচাপা দিয়ে রাখতে পারলে হয়ত সে আর অত সুবিধা করতে পারবে না।

এই আস্তে ছড়ানোর জন্য এখন শুধু হাত পরিষ্কার আর মাস্ক যথেষ্ট নয়। হাঁচি-কাশিঅলার থেকে দূরে থাকা যথেষ্ট নয়। কারণ আগেই বলেছি, এই ভাইরাস সম্পূর্ণ দৃষ্টিগোচর থেকে ছড়াতে পারে। ভাইরাসের হাত থেকে দেশকে বাঁচানোর উপায় হচ্ছে, যাবতীয় জনসমাগম পরিহার করা। সম্ভব হলে ঘরের মধ্যে বসে থাকা। সবচেয়ে ভালো হয়, বাসায় এক আগুন লাগা আর ডাকাত পড়া ছাড়া বের না হওয়া। যত নিরাপত্তা আজকের দিনটাতে দেবেন, ভাইরাস তত আস্তে ছড়াবে। এরকম মডেলও আমি দেখেছি, যেখানে শুধু একদিন আগে এরকম জাতিগত সিদ্ধান্ত নেয়ার কারণে ভাইরাসের আঘাত প্রায় চল্লিশ ভাগ কমে গেছে। একটা দিনের জন্য।

সবচেয়ে ভালো হতো যদি আমরা প্রবাসীদের ব্যাপারটা আরেকটু ভালো সামলাতে পারতাম। সেটাই তাইওয়ান বা সিঙ্গাপুর করেছে। কিন্তু এখন আর দেরি না করে ভাইরাসটার গতিপথ রুখতে হবে। আমি জানি, এরকম উপদেশের বিরুদ্ধে সহস্র অভিযোগ তোলা যাবে। সেসব অভিযোগের উত্তর আমার কাছে নেই। একজন গবেষক হিসেবে আমার কাজ হচ্ছে শুধুমাত্র এই আসন্ন ঝুঁকিটা দেখিয়ে দেয়া। আপনার অনেক পরিচয় থাকতে পারে, অফিসের উঁচুপদের কর্মকর্তা, সমবায় সমিতির মালিক, ধর্মীয় নেতাগোছের কেউ। আমি চাই আপনি যখন আপনার অধীনস্থদের জন্য সিদ্ধান্ত নেবেন, তখন এই ঝুঁকিটার কথা মাথায় রাখবেন। সিদ্ধান্ত কী নেবেন সেটা আপনার বিষয়, কিন্তু ঝুঁকি হলো এই।