বিপুল জামানের ৫ কবিতা

প্রকাশিত : নভেম্বর ১৭, ২০১৯

আগুনস্বভাব

আমি রক্তজবা ছুঁয়েছিলাম
মুছড়ে পড়েছিল সেটা
তারপর থেকে আমি কখনও ফুলের পাশ দিয়া হাঁটিনি
আমি ইট হাতে নিয়েছিলাম
ঝামা হয়ে গিয়েছিল তখুনি— ইট আর ইট থাকেনি
আমি বুঝেছি, আমার ভেতরে আগুন
আমি পৃথিবীতে ফাগুনের কাজে আসিনি
সেই থেকে আমি হাঁপরে বেঁধেছি বাসা
হাতিয়ার তৈয়ার করেছি
দুর্বলেরে সবল করতে আমি ধিকিধিকি জ্বলেছি
আবার জননীর হাতে জ্বলে আমি ক্ষুধার অন্ন রেঁধেছি
তারপর আরো দিন গেছে, আমি শিখেছি আগুনও ফাগুনের কাজ করে
গোলাপ, সংগীত হার মেনে গেল যে শীতের রাতে— সেদিন আমিই স্বয়ংবর জিতেছি,
আগুনের অমিত তেজ উষ্ণতা দিয়েই দয়িতারে আমি পেয়েছি।

অপূর্ব পূর্বমুহূর্তে

একপাল নিস্তব্ধতার মাঝে বসে কি অনুবাদ করব বলো আজ
গৌরবের সাড়ম্বর ডঙ্কাবাজি দেখায় নিরুপায় বর্ধিত সংসাজ
আমি নিতান্ত নিরুপায় দলছুট
প্রিয়তমা, ভেবে দেখ একবার নেহাতই ক্লীববান দস্তুর গ্রহণ করতে চাও কি না
আমি ছিনিয়ে নিতে শিখিনি, তবু আহ্বানে সমুদ্রমন্থন করতে পারি কোজাগরি রাতে

অস্ত্র হিসেবে ছুরির থেকে গোলাপ ভালো

তুমি আসলে যোদ্ধা বুঝলাম
কিন্তু ভেবেছো আঘাত করো কাকে
যারা দূরে থাকতে চায় তারা দূরে চলে গেছে
ভালোবেসে যে রয়ে গেছে পাশে
আঘাত করছো তারে পেয়ে কাছে
যতবার তুমি চালিয়েছো ছুরি অপর বক্ষ লক্ষ্য করে
ততবার তুমি খুন করেছো আপনি আপনারে
ছুরির ধারালো ধারে
স্বজনেরা সব চমকে উঠে চলে গেছে ভয়ে দূরে
বরং গোলাপ নিয়ে দেখতে পারো
হয়তো সুবাস নিরাময় দেবে ক্ষতস্থানে কারো

অস্ত্র হিসেবে ছুরির থেকে গোলাপ হাজার গুণে ভালো

কিনারা

ছেঁড়াদ্বীপের কিনারায় তুমি-আমি-আমরা সবাই
এই সুবিশাল নৈসর্গিকতায় এইক্ষণে নিজেদের আরো বিলায়মান মনে হয়
পতন ঠেকাতে তুমি আঁকড়ে ধরলে আমায়, আমি দিলাম নিজেকে ছড়ায়ে সমগ্র পৃথিবী জুড়ে
দু’হাতের মুঠোয় পেলে না বলে আঁকড়ে ধরলে অন্য কিছু— যখন যা পেলে
যেখানে যা পেলে জমা করলে,
শহরটা বানালে ব্যক্তিগত জাদুঘরে
এই যে আঁকড়ে ধরতে চাও, এর মানে তুমি দুর্বল— তা নয়
তুমি আসলে মুঠোয় ধরতে চাও এই বিরাট জাদুঘর, কী বলো?

নেহাত ব্যক্তিগত ভাগাড়
অথচ দেখো, এমন তুমুল বর্ষায় তুমি কোথায়
কি লাভ এমন বিহ্বল চঞ্চলতায়
তুমি নেই তোমার শহরে আমি নেই তোমার শ্রাবণে
অহেতুক লগ্ন ব্যর্থ হয়ে যায়
অলঙ্ঘনীয়ভাবে ক্রমশ বাড়ছে গহ্বর,
একে একে টুপ করে পড়ে যাব সবাই

যখন তুমি কবিতা চাও

যখন তুমি বলো, আমার একটা কবিতা চাই
তখন আমার মনে হয়, আমি নিজেই একটা কবিতা হয়ে যাই
কবিতা নিয়ে কি করবে তুমি?
পড়বে?
গাল ঘষবে?
চুমু খাবে কবিতায়?
কেন?
কবিতা কি পাল্টা করবে আদর?
কবিতা কি আমার মতো তোমার জন্য কাতর?
তবু আমি কবিতা লিখি
তোমার কাছে পাঠাই আমার দোসর
কারণ আমি জানি, কবিতাকে তুমি `আমি` ভাবো
আমায় ভেবে কবিতাতে ছোঁয়াও তুমি অধর
শুধু তুমি জানলে না, যখন তুমি কবিতা চাও
বলো, আমায় একটা কবিতা দাও
যখন তুমি ব্যাকুল হয়ে বলো, আমার একটা একান্ত কবিতা চাই
তখন আমার ইচ্ছা হয়, আমিই আমার কবিতা হয়ে তোমার কাছে যাই।