বিবি সাজেদা

বিবি সাজেদা

বিবি সাজেদার রঙ্গগদ্য ‘খেয়াল কইরা, নইলে আছাড় খাইবা’

প্রকাশিত : সেপ্টেম্বর ২৭, ২০২১

ময়মনসিং বিভাগের অন্তর্গত জামালপুর একটি জেলা। এই জেলারই কোনো এক গ্রামে বাস করে সুফিয়া খালা। আমার প্রতিবেশী। মুখরা রমণী। খায় দায়, কাজকর্ম করে। লোকের ধার ধারে না। সেই সুফিয়া খালারেই আজ ভোরে দেখলাম, পরনের কাপড় হাঁটুর ওপরে উঠায়া ধানক্ষেতের আগাছা পরিষ্কার করতেছে।

কিছুক্ষণ আগাছা পরিষ্কার করার পর সুফিয়া খালা আসলো ক্ষেতের আইলে। আমারে ডাক দিয়া কয়, ও ময়না, হুক্কা খাবিনি?
জানতাম সুফিয়া খালা পাতার বিড়ি খায়, এখন আবার হুক্কাও ধরছে! বড়ই তাজ্জব ব্যাপার! কিছুক্ষণ গপসপ করার জন্য আমিও সুফিয়া খালার লগে বসলাম ঠ্যাং ছড়ায়া। কইলাম, এই যে খালা তুমি যে হাঁটুর উপ্রে কাপড় তুইলা ক্ষেতে কাজ করতেছ, তোমার কী শরম লাগে না?

খালা হুক্কায় দম দিয়া আমার দিকে এমনভাবে তাকাইলো যেন আমি মহাভারত অশুদ্ধ কইরা ফেলছি। কয়, তুই শিক্ষিত হইছিস নাকি? শুনছি অনার্স পাশও দিছোস। কিন্তু একটা পাস দিয়া তো তুই আরো বেশি মূর্খ হইছিস।

এহেন কথা শুইনা আমার খুব লজ্জা লাগলো। খালা কইলো, আমাদের দেশে ভূঁইফোড় নারীবাদীর অভাব নাই সেইটা আমি জানি। সেইসব নারীবাদীরা কয়, মাই বডি, মাই চয়েজ। বইলা তারা পাশ্চাত্য পোশাকে নিজেরে আবৃত কইরা আধুনিকা সাজে। তুই তো দেখি সেই দলেরই একজন।

খালার এই তিতা সত্য আমার হজম হইলো না। কোনো কথা খুঁইজা না পায়া আমি ধানক্ষেতের দিকে তাকায়া রইলাম। সুফিয়া খালা কইলো, শোন, কিছু কথা কই। তোর কাজে লাগবো ভবিষ্যতে। জানি, আলগা নারীবাদের হাওয়া তোর পোশাকে ও মনে দুই জায়গাতেই লাগছে। আইজ আমি হাঁটু পর্যন্ত কাপড় উঠায়া কাজ করতাছি বইলা বিষয়টা তোর কাছে বাজে লাগছে। কিন্তু জানিস তো, এইটাই আমাদের সংস্কৃতি। তোরা আধুনিকতার নামে যে শার্ট-প্যান্টসহ পশ্চিমা পোশাকের উদ্ভট সমাহার দিয়া শরীর দোকানঘর বানায়া রাখিস, ওইটা হইলো অপসংস্কৃতি।

খালা বলেই চলে, আরেকদল মাইয়া আছে দেখিস, তারা ধর্মের নামে বস্তাবন্দি হইতাছে। এই ভাদুইরা গরমেও হিজাব বোরকা লাগাইয়া ঘুরতাছে। ওইটাও অপসংস্কৃতি। সুফিয়া খালা হুক্কায় টান দিয়া ধোয়া ছাড়তে ছাড়তে কইলো, নারীবাদী হবি ভালো কথা, কিন্তু নারীবাদী হইতে গিয়া যদি ছায়াবেশ্যা হোস, নিজের সংস্কৃতির পুটু মারিস তা তো এই সুফিয়া মানবো না।

পাশ্চাত্যের নারী জাগরণ যদি মেরী ওলস্টেন ক্রাফট দিয়া শুরু হয় তাইলে আমাদের দেশের নারী জাগরণ শুরু হইছে আরো হাজার হাজার বছর আগে দ্রৌপদী দিয়া। একইসাথে পাঁচজন স্বামী রাখা আজকালকার নারীবাদী মহিলারাও চিন্তা করতে পারে না। কিন্তু দ্রৌপদী ঠিকই পাঁচজন স্বামী শাসনে রাখছিল। পাশ্চাত্যের নারীগো দেখ, একজন স্বামী রাখতেই তারা নাজেহাল হইয়া যায়। কিন্তু দ্রৌপদী অর্জুনের মতো বীরপুরুষসহ তার আরো চার ভাইরে একলগে রাখছিল। রাইগা গিয়া সে অর্জুনরে গেট আউট পর্যন্তও বলছিল। তোরা পারবি?

খালার কথা আর যেন থামেই না, তোরা তো একখানা প্রেম করিস। তাও আবার লুকায়া। কেমন নারীবাদী তোরা হইলি যে প্রেমিকরে লুকায়া রাখিস? লজ্জা করে না? একত্রবাসও হয়তো ঢাকা শহরে কেউ কেউ করিস, কিন্তু সেইটা কইতে পারিস না। কোনো জায়গায় প্রেমিকার লগে ঘুরতে গেলে পরিচয় দ্যাস বন্ধু,বান্ধবী, ভাই, বোন এগুলা বইলা। প্রেমের চে বড় ধর্ম আর নাই পৃথিবীতে, কিন্তু তোরা প্রেম করেও সেইটা স্বীকার করতে চাস না। ভীতু মন লইয়া যে প্রেম করিস ওইটা নামেই শুধু প্রেম। সেক্সের আখড়া। মন মগজ আর ওতে একাত্ম হইতে পারে না।

আরেকটা বড় কথা তোরে কই, সেইটা হইলো, তোরা ঘটা কইরা নো ব্রা ডে পালন করিস। পুরুষের চোখে নিজেরে হট, সেক্সি এন্ড স্পাইসি প্রমাণ করতে তোরা নিজেরাই ব্রা পরিস। নিজেরাই দোকান থাইকা কিনা আনিস। কোনো কোনো পুরুষ অবশ্য নারীদের ব্রা উপহার দেয়, কিন্তু ওটা তোরা পরিস বলেই দেয়। এখন তোরা নিজেরাই যে ব্রেসিয়ারের মধ্যে যৌবন আটকায়া একটামাত্র দিন আবার ঘটা কইরা নো ব্রা ডে পালন করিস, এইটা হইলো সাইধা হোগা মারা দেয়া। আমি বাপের জন্মেও ব্রেসিয়ার পরি নাই, আমার মা, চাচী, খালা, দাদী, নানীরা জীবনেও কোনোদিন ব্রেসিয়ার পরে নাই। তাই আমাদের ওই ফ্রি নিপল মুভমেন্টের প্রয়োজনও হয় নাই।

তোরা আসলে নারীবাদীতার নামে কি চাস সেইটা পুরোটা আমার বুঝে আসে না। যতটুকু বুঝে আসে সেইটা হইলো, তোরা নারীবাদীতার নামে ছায়াবেশ্যা হইতে চাস। এই বইলা সুফিয়া খালা উইঠা দাঁড়াইলো, হুকাটা ক্ষেতের আইলে থুয়া আবার আগাছা পরিষ্কারে মনোনিবেশ করিলো।