সংগৃহিত

সংগৃহিত

বেকার তত্ত্ব, ডান-বামের একই চোখ!

ছাড়পত্র ডেস্ক

প্রকাশিত : এপ্রিল ০৫, ২০১৯

দেশে বেকারত্বের পরিসংখ্যান যে পদ্ধতিতে করা হয় তাতেই বড় ধরনের গোজামিল থাকে, অতএব শুধু ওই পরিসংখ্যান দেখেই পুরোটা বিচার করা সমস্যাজনক। বাম-ডান সকল দলই এই একই ভুলটা করে। অন্তত যারা ভিন্ন অর্থনীতির জন্য সংগ্রাম করছেন, তাদের শুধু সরকারি জরিপ বলেই বসে থাকা চলবে না। পুরো বিষয়টা আমাদের কাছে পরিষ্কার না বলেই আমরা আজীবন রাষ্ট্রের ভুল তত্ত্ব গাইতে থাকি। প্রমাণ আমাদের হাতের কাছেই উপস্তিত-

 

স্বাভাবিক জ্ঞান কিংবা রাষ্ট্রীয় নিয়মে বলা হয়, বেকারত্ব একটি সামাজিক ব্যাধি অথবা সংকট। ইংরেজি আনএমপ্লোয়মেন্ট (Unemployment) শব্দটি থেকে বেকারত্ব শব্দটি এসেছে। একজন মানুষ যখন তার পেশা হিসেবে কাজ খুজে পায় না তখন যে পরিস্থিতির হয় তাকে বেকারত্ব বলে। ঠিক "জনতা" শব্দটার মতোই "বেকার" আরেকটা শব্দ অর্থাৎ সর্বহারা শ্রেণী থেকে বুর্জোয়াঁ শ্রেণী, সকলকে "জনতা" নামে চালিয়ে দেয়া হয়। বলা হয় জনতার আয় বেড়েছে! কিন্তু কোন শ্রেণীর আয় বেড়েছে? এই প্রশ্ন কেউ করে না।

 

যার বেতন ১০ লাখ, যার চাকরি নিরাপদ তাকেও আমরা কর্মজীবী বলছি আবার, যার বেতন ১ হাজার, চাকরি অনিরাপদ তাকেও আমরা কর্মজীবী বলছি! এই বিচার অন্যায়।

 

বেকারও একই শব্দ। বেকার বেড়েছে বা কমেছে সেই জরিপ আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে, কিন্তু আরো ঘটনা বাকি থাকে। যেমন- এই ঢাকা শহরে যারা কাজ করে, যারা নিজেকে বেকার বলে না, তারা কি আসলেই কাজ করছেন? সেগুলোকে কাজ বলে? নিরাপত্তা কই? রাষ্ট্রীয় বা প্রাতিষ্ঠানিক নিরাপত্তা আছে আমাদের? অতএব এই চাকরিগুলোকেও বেকারত্বের তালিকায় রাখা যায় কি না, সেটা ভাবতে হবে, নতুন করে। আর ভাবলেই দেশের অর্থনীতির ভয়াবহতা আরো চোখে পড়বে। কারণ রাষ্ট্র যখন বলে, দেশে বেকার ১০% বা ২০% বা ৩০%, তখন আসলে বেকার আরো কয়েকগুন বেশি। কারণ চাকরির নাই কোনো আইন, নাই নিরাপত্তা।

 

ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (ইআইইউ) এক বিশেষ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বর্তমানে বাংলাদেশের ৪৭ শতাংশ স্নাতকই বেকার। দক্ষিণ এশিয়ায় এর চেয়ে বেশি উচ্চশিক্ষিত বেকার আছেন কেবল আফগানিস্তানে, ৬৫ শতাংশ। এর বাইরে ভারতে এর হার ৩৩ শতাংশ, নেপালে ২০ শতাংশের বেশি, পাকিস্তানে ২৮ শতাংশ এবং শ্রীলঙ্কায় ৭ দশমিক ৮ শতাংশ। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) শ্রমশক্তি জরিপ ২০১০ অনুযায়ী, দেশে বর্তমানে শ্রমশক্তির পরিমাণ পাঁচ কোটি ৬৭ লাখ। এর মধ্যে পাঁচ কোটি ৪১ লাখ মানুষের কাজ আছে। এর অর্থ মাত্র ২৬ লাখ মানুষ বেকার। তবে জরিপেই বলা আছে, পরিবারের মধ্যে কাজ করে কিন্তু কোনো মজুরি পান না, এমন মানুষের সংখ্যা এক কোটি ১১ লাখ। এ ছাড়া আছে আরও এক কোটি ছয় লাখ দিনমজুর, যাঁদের কাজের কোনো নিশ্চয়তা নেই। বিশ্বব্যাংক মনে করে, সরকার কম দেখালেও প্রকৃতপক্ষে বাংলাদেশে বেকারত্বের হার ১৪ দশমিক ২ শতাংশ।

 

কিন্তু এই বিশ্বব্যাংক যারা পুঁজির দালাল, তারা আসলে যা দেখায়, তা আসলে একটা আলপিনের মাথা মাত্র, আস্ত আলপিন আরো বড়।