Painting by John Fernandes

Painting by John Fernandes

বেশ্যাকন্যা

পর্ব ১৫

সরদার মেহেদী হাসান

প্রকাশিত : মার্চ ১১, ২০১৮

আমার চোখ দিয়ে যারা টাঙ্গাইল নিষিদ্ধ পল্লী ধারাবাহিকভাবে দেখে এসেছেন, আশাকরি আমার পরবর্তী লেখার মধ্যে তারা আরও চমক পাবেন। কারণ আমরা যেতে চাই, দেখাতে চাই এ পৃথিবীর বিশাল ভুখণ্ডের মাঝে রক্তের বিনিময়ে অর্জিত আমাদের জন্মভূমিতে রয়েছে অন্য আরেকটি জগৎ। একটি ছোট্ট পৃথিবী। একটি ধিকৃত জনগোষ্ঠি। পৃথিবীর আদি পেশায় নিয়জিত কিছু নারী-পুরুষ। কেউ রয়েছে অধিকার নিয়ে, কেউ এসেছে ভালোবাসার মানুষের দ্বারা প্রতারিত হয়ে, কেউবা এসেছে নিকটাত্মীয়দের মিথ্যা প্রলোভনে। আবার কেউ এসেছে মিথ্যা চাকরির প্রত্যাশায়। কেউ এসেছে অতিকামুকতায়। এসেছে, থেকেছে, গড়ে তুলেছে আদি কামের মহাজগৎ। এখানে জীবন মানেই মৃত্যুর দিকে তাকিয়ে থেকে, নিত্য নতুন বধূর নায়ে, ভবিষ্যতের স্বপ্ন-ধূসরতায় ফ্যাকাসে জীবন।

টাঙ্গাইলের ঘটনাগুলির রেশ এখনও কাটেনি। বারবার মনে হয়, আরও অন্যরকম কিছু একটা করার। আমি টাঙ্গাইল থেকে ফেরার পথে হাসি আপার কাছ থেকে বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ পতিতাপল্লী রাজবাড়ির দৌলৎদিয়া ঘাট নিষিদ্ধ পল্লীর যৌনকর্মীদের সভাপতি মর্জিনা আপার মোবাইল নম্বরটা নিয়ে এসেছিলাম। ঢাকায় এসে আমি টানা দু’সপ্তাহ ধরে মর্জিনা আপার মোবাইলে চেষ্টা করেও তার সাথে কোনও প্রকার যোগাযোগ করতে পারলাম না। এরপর টাঙ্গাইলের রুমি ভাইয়ের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি আমাকে রাজবাড়ি জেলার কেকেএস এনজিওর নির্বাহী পরিচালক আব্দুল জব্বার ভাইয়ের মোবাইল নম্বর দিলেন। জব্বার ভাই রাজবাড়ী জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি, দৌলৎদিয়া ইউপি চেয়ারম্যান এবং ওনার এনজিওর তত্ত্বাবধায়নে দৌলৎদিয়া পল্লীর মানুষদের সেবামূলক কর্মকাণ্ড পরিচালিত হয়।

জব্বার ভাইকে ফোন দিলাম। ওনার সাথে ফোনে কথা হলো। এবং রাজবাড়িতে ওনার অফিসে গিয়ে দেখা করতে বললেন। আমি রাজবাড়ী যাবার সিদ্ধান্ত নিলাম এবং রওনা দিলাম। রাজবাড়ী সদরে ওনার অফিসে গেলাম। উনি আমার সঙ্গে দেখা করে আমার ডকুমেন্টরিটি দেখতে চাইলেন। ওনার অফিসে বসে আমরা সবাই মিলে ডকুমেন্টরিটি দেখলাম। উনি বেশ খুশি। একসঙ্গে আমরা দুপুরের খাবার খেলাম। এরপর উনি আমার কাছে জানতে চাইলেন, আমি ওনার কাছে কি সাহায্য চাই। আমি দৌলৎদিয়া পল্লীতে গিয়ে একটা ডকুমেন্টরি বানাতে চাই। উনি জানতে চাইলেন, কবে শুটিং করতে চাই আমি। সেদিন উনি নিজেই উপস্থিত থাকতে চান আমার সুবিধার জন্য। আমার পূর্ব কিছু ধারণা নেয়া ছিল যে, উনি যদি আমার শুটিংয়ে উপস্থিত থাকেন তাহলে পল্লীর অধিকাংশ নারীরা ওনার সামনে আসতে চাইবে না। ওনাকে সবাই সম্মান করে ও ভয় পায়। কারণ এ পল্লীর সকল প্রকার উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড হয় ওনার এনজিওর মাধ্যমে। যাই হোক, আমি ওনাকে বললাম, বড়ভাই, আপনাকে আমার শুটিংয়ে যাবার দরকার নেই। আপাতত আমাকে পল্লীতে যাবার একটা ব্যবস্থা করে দেন। আমি কিছুদিন পল্লী ঘুরে দেখতে চাই। ঠিক আছে, বলে উনি মোবাইল থেকে মর্জিনা আপাকে ফোন করে দিলেন।

আমাকে বললেন, তুমি কবে থেকে সেখানে যেতে চাও মর্জিনাকে ফোনে জানিয়ে দিও। এছাড়া তোমাকে সহযোগিতা করার জন্য আমার অফিসের রশিদ সর্বাত্মক সহযোগিতা করবে। সেদিনের মতো আমি ঢাকা ফিরে এলাম। এর পরের সপ্তাহে আমি পুনরায় রাজবাড়ীর উদ্দেশ্যে রওনা হলাম। গাবতলি থেকে বাসে উঠে সরাসরি পাটুরিয়া ঘাট। সেখান থেকে দ্বিতল নৌযানে নদী ভ্রমণ। সেটা আসলেই মজার অভিজ্ঞতা। নদীর যে কী বিশালতা... নদী পার হলেই চোখে পড়ে পল্লীর নদী-ঘেঁষা সীমানা। আমি সরাসরি ওপার থেকে রিক্সা নিয়ে চলে গেলাম কেকেএস পরিচালিত এ পল্লীর শিশুদের পড়ালেখার জন্য স্থাপিত হাইস্কুলে। সেটা পল্লী থেকে প্রায় এক কিলো দূরে অবস্থিত। সেখানে কেকেএস এর শাখা অফিস রয়েছে। সেখান থেকে মূলত পল্লী, স্কুল ও হোমের কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। এ অফিসটি মূল পরিচালনার দায়িত্বে আছেন আমজাদ হোসেন। আমি গিয়েই তাকে ও আব্দুর রশিদ ভাইয়ের সাথে পরিচিত হলাম। ওনারা ওনাদের স্কুলের যাবতীয় কার্যক্রম আমাকে ঘুরিয়ে দেখালেন। এবং আমজাদ ভাই রশিদ ভাইকে আমার সাথে দিয়ে মর্জিনা আপার অফিসে পাঠিয়ে দিলেন।

চলবে...