বেশ্যাকন্যা

পর্ব ৪৫

সরদার মেহেদী হাসান

প্রকাশিত : এপ্রিল ১৭, ২০১৮

আমি হেসে উঠলাম, হা হা হা...। বললাম, তা মনেই হচ্ছে। আবার এও মনে হচ্ছে, তুমি কিছুক্ষণ আগে একটা খদ্দের বিদায় করে আসছো।
শিউলী বলল, কী যে বলো না বন্ধু। কিছুক্ষণ আগে গোসল করেছি তো, তাই তুমি ভাবছো...
যাই হোক, এখন বলো বাচ্চাটা কার?
আমার।
আবার মশকরা করো? তোমার বাচ্চারে দুধ খাওয়াও।
না না। ও এখন খাবে না।
সে কি বলল? তুমি দুধ দাও, সে খাবে।
হা হা হা... বন্ধু তুমি এত ছ্যাচড়া কেন?
হা হা হা... বন্ধু, এবার বলে দাও বাচ্চাটা কার?
হা হা হা... বাচ্চাটা আমার বোনের।
তোমার বোন? তাকে তো আমি কখনো দেখলাম না, সে কোথায় থাকে?
আমার বড় বোন, ঢাকায় থাকে। মানুষের বাড়িতে কাজ করে।
তোমার বোন এখন কোথায়?
ঢাকাতে।
ঢাকাতে? তাহলে এই বাচ্চাকে দেখবে কে?
আমি দেখবো।
বাচ্চা দুধ পাবে কোথায়? তোমার বোন এত ছোট্ট একটা বাচ্চাকে তোমার কাছে কিভাবে রেখে গেল?
আরে বাবা, এই বাচ্চা নিয়ে বোন কিভাবে মানুষের বাড়িতে কাজ করবে? তাই আমার কাছে রাইখা গেছে।

দৌলতদিয়া ঘাট নিষিদ্ধ পল্লীতে রকমারি ব্যবসার মিলনস্থল। মানুষজন হাজারো ধান্দার ফন্দিফিকির গেড়ে বসেছে এখানে। এখানে ভালোবাসা বেচাকেনার আড়ালে চলছে আকাশ-কুসুম ভাবনাযুক্ত স্বপ্নসাগর। শিউলির বড় বোন ঢাকাতে থাকে। তার স্বামী-সন্তান আছে কিনা তা জানি না। এরকরম জানা-অজানা অসংখ্য নারী রয়েছে ঢাকা শহরে। কাজ করছে আয়া-বুয়া-ঝি হিসেবে। এরা পেটের জন্য সব কিছু করতেই প্রস্তুত। এদের জীবনের থাকে না কোনও উচ্চাকাঙ্ক্ষা। থাকে শুধু ক্ষুধা নিবারনের হাহাকার। শিউলির বোন ঢাকার কোনও এক মেসে কাজ করতে গিয়ে অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে গর্ভধারণ করে এবং পরে সে এখানে এসে সন্তান প্রসব করে শিউলির কাছে রেখে যায়। এসব পল্লীতে মেয়ে সন্তানের মূল্য অনেক। এ ধরনের মেয়ে শিশুকে নিজের তত্ত্বাবধানে রেখে মানুষ করতে পারলে ভবিষ্যতে আয়-উপার্জনের একটা ভালো মাধ্যম হয় এখানকার বয়স্ক নারীদের। জন্মকালীন কোনও শিশুর ভাগ্য পোড়ে আবার কারও ভাগ্য গড়ে, সবই নির্ভর করে পরিবেশ পরিস্থিতির উপর। শিউলির মতো নারীরা যৌন পেশায় নিজেদের শরীর ঠিক রাখার জন্য বাচ্চা প্রসব করা থেকে বিরত থাকে। সেক্ষেত্রে এসব পল্লীর অনেক নারীরাই বিভিন্ন সময় বিভিন্নভাবে, বিভিন্ন পথে সন্তান কিংবা মেয়ে শিশু সংগ্রহ করার চেষ্টায় থাকে।

আমি জিজ্ঞেস করলাম, আচ্ছা, তোমার মেয়ের নাম রাখছো?
না, এখনো রাখিনি। এর মধ্যেই রাখবো। মেয়েটা দেখতে কেমন হয়েছে?
সুন্দর হয়েছে। মেম্বর কি বলে?
মেম্বর কয়, পল্লীর বাইরে তার একটা জায়গা আছে। সেখানে ঘর তুলে আমাকে চলে যেতে কয়।
ভালো তো। চলে যাচ্ছো না কেন?
যাব। খুব দ্রুতই চলে যাব। আচ্ছা বন্ধু, তুমি শুটিং করবা কবে?
এই তো, আর দু’এক মাসের মধ্যেই শুটিং করে ফেলবো।
শোনও বন্ধু, শুটিংয়ে আসা সকল মানুষদের রান্নাবান্না, খাওয়-দাওয়া সব হবে আমার বাসায়। আমি নিজে রান্না করবো। তোমার জন্য করবো ইলিশ মাছের ডিম।
ঠিকাছে। সমস্যা নেই। তুমি যেভাবে বলবে, সেভাবেই রান্না হবে। তোমার বাবু কি বলে?
ধুর, মেম্বার তো কয়েই দিছে, মেহেদী ভাইয়ের শুটিংয়ের সময় যেভাবে পারো সহযোগিতা করবা।
বাহ! খুব ভালো।
বন্ধু চলো, বাড়িতে যাই।
না না... এখন আর তোমার বাড়িতে যাব না। ঢাকা ফিরার সময় হয়ে এসেছে।
বাসায় না যাও, চা খাও?
তা খাওয়া যেতে পারে।

এই পল্লীর প্রধান গলির দু’ধারেই রয়েছে অসংখ্য দোকান। এর বাইরেও। এ পল্লীর যত ছোট ছোট গলির কোনও না কোনও অংশে গড়ে উঠেছে ছোট ছোট মনোহারি দোকান। আমরা শিউলির সাথে চা খেয়ে সেদিনের মতো বিদায় নিলাম।

চলবে