পাপিয়া জেরীন

পাপিয়া জেরীন

‘বৈভব মূলত ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, যার পুঁজি সাহিত্যমান’

প্রকাশিত : জানুয়ারি ২৪, ২০২০

বাংলাদেশের প্রকাশনাশিল্পে নতুন সংযোজন প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান ‘বৈভব’। গত বছর অমর একুশে গ্রন্থমেলায় ‘বৈভব’ যাত্রা শুরু করে। প্রতিষ্ঠানটির কর্ণধার দুজন, পাপিয়া জেরীনতানভীর মাহমুদ গাজী। ‘বৈভব’ এর পথচলা নিয়ে পাপিয়া জেরীনের সঙ্গে একটু গপসপ করলেন ছাড়পত্রের নির্বাহী সম্পাদক আবু তাহের সরফরাজ
 
আবু তাহের সরফরাজ: আমি মনে করি, বাংলাদেশে প্রকাশনাশিল্পে বৈভব একটি ব্যতিক্রমী সংযোজন। দেশে এক শ্রেণির প্রকাশক আছে যারা বাজার-কাটতি লেখক ছাড়া বই বের করে না। আরেক শ্রেণির প্রকাশক আছে যারা মাছের তেল দিয়ে মাছ ভাজে। মানে, লেখকের টাকায় বই বের করে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, বৈভব এসবের কোনোটাই করছে না। ভালো মানের লেখা পেলেই বৈভব সেটা প্রকাশ করছে। গত বইমেলা থেকে যাত্রা আরম্ভ করেছে বৈভব। তখন অনেকগুলো বই করেছিল, যেগুলোর বাজার-কাটতি তেমন ভালো নয়। কিন্তু মানের দিকে থেকে ছিল সুনির্বাচিত। এবছরও প্রচুর বই করছে বৈভব। পাণ্ডুলিপি নির্বাচনে মান ও রুচির ছাপ স্পষ্ট। কিন্তু শুধু মান দিয়েই কি প্রকাশক হিসেবে আপনার আনন্দ, নাকি প্রকাশনা থেকে আর্থিকভাবেও আনন্দ পেতে চান? যদি তা চান তবে বলল যে, গত বছর তো তেমন লাভের মুখ বৈভব দেখেনি। এরপরও এবছর বিশাল আয়োজন বৈভবের। একটু ব্যাখা করে বলবেন কি?
পাপিয়া জেরীন: বিশ্বব্যাপী প্রকাশনা ব্যবসার ধরন আর দেশীয় প্রকাশনা ব্যবসার ধরন ভিন্ন। প্রকাশনার কনজ্যুমার সাধারণত পাঠক, কিন্তু আমাদের দেশে একটা বড় সংখ্যক প্রকাশনার ক্ষেত্রে দেখা যায়, কনজ্যুমার হচ্ছেন লেখক। আবার যেসব প্রকাশনার কনজ্যুমার লেখক নন, তাদের ক্ষেত্রে দেখা যায় বইয়ের বাজার-কাটতি ভালো হলেও সাহিত্য মান সুনিশ্চিত নয়। বৈভব মূলত একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, যার পুঁজি সাহিত্যমান। আমরা ভালো সাহিত্যটাই বেচতে চাই এবং লেখকদের পেশাদার করে তুলতে চাই। ভালো সাহিত্যের বাজার-কাটতি চাই।

আবু তাহের সরফরাজ: জগৎ-সংসারে এত পেশা থাকতে হঠাৎ প্রকাশনাশিল্পে এলেন কেন?
পাপিয়া জেরীন: এমন কোনো প্রফেশনে থাকতে চেয়েছি, যেটা নিজের প্যাশনের সাথে রিলেটেড। লেখালেখি করে জীবিকা নির্বাহের বাস্তবতা যেহেতু আমাদের দেশে এখনো তৈরি হয়নি, তাই সামগ্রিকভাবে ভাবলাম, এই সেক্টরটাকে পেশাদারি করে তোলা দরকার।

আবু তাহের সরফরাজ: কিন্তু মোহতারাম, যে দেশের বেশিরভাগ পাঠক বাণিজ্যিক, সে দেশে কীভাবে আপনি ভালো মানের সাহিত্য কিম্বা জ্ঞানবিজ্ঞানের বই প্রকাশ করে প্রকাশনাশিল্পে পেশাদারি হইতে চান? বাজারি লেখা ছাড়া তো দেশীয় প্রকাশনাশিল্পে টেকা মুশকিল হয়ে পড়বে।
পাপিয়া জেরীন: ওই যে বললাম, সাহিত্যমানই আমাদের পুঁজি। আর সত্যি বলতে কি, রুচিমান পাঠক এ দেশে যে একেবারেই নেই, তা তো নয়। বৈভবের প্রকাশনা সেইসব পাঠকদের উদ্দেশে।   

আবু তাহের সরফরাজ: বৈভব থেকে এ বছর প্রকাশিত হতে যাচ্ছে এমন বইয়ের তালিকা দিন।
পাপিয়া জেরীন: ২০২০ বইমেলায় বৈভবের (স্টল নম্বর ৭১৮) নতুন বইয়ের তালিকা—
ফিকশন অ্যান্ড নন ফিকশন
এসএমএস যুগের আগে— আন্দালিব রাশদী
আলোয় অন্ধ শহর— সালাহ উদ্দিন শুভ্র
এখানে জাদু শেখানো হয়— মুরাদুল ইসলাম
একটি পরিত্যক্ত কেলভিনেটর ফ্রিজের গল্প— আন্দালিব রাশদী
সিকস্তি পয়স্তি— তুষার আবদুল্লাহ
মহারাজ— এস এম তুষার
তৃষ্ণাকুমারী— আবু তাহের সরফরাজ

প্রবন্ধ সংগ্রহ ১ বিনয় মজুমদার: কবিতার বোধিবৃক্ষ— মলয় রায়চৌধুরী
নজরুল বিষয়ক সংকলন চর্চার ধরন— মেহেদী উল্লাহ
জোছনার সাথে মোলাকাত ও অন্যান্য— জিয়া হাশান
কবিতাকলা ভবন— মৃদুল মাহবুব

পোয়েট্রি
দশ মহাবিদ্যা— সুব্রত অগাস্টিন গোমেজ
জল্লাদখানায় বইসা কবিতাপাঠ— রিফাত হাসান
চুরি করা কবিতা— মুম রহমান
রক্তাক্ত প্ল্যাকার্ড হাতে— সাদী শাশ্বত
হাতিরপুল কাঁচা বাজার— আলশাহারিয়ার জিদনী
আরব বসন্ত— মাহবুব মোর্শেদ
পিনাকী ধনুক— নীহার লিখন
পুষ্প আপনার জন্য ফোটে— মিছিল খন্দকার
জন্মান্ধ প্যাঁচা— নিষুপ্ত সাগর
ধরেছি রহস্যাবৃত মহাকাল— রাজিব আশরাফ
গোধূলির প্যানোরামা— আল ইমরান সিদ্দিকী
অদৃশ্য খোলস— বিপিন বিশ্বাস
বসা ভাতের ভৈঁরো— শামসেত তাবরেজী
নতুন পাণ্ডুলিপির দিনে— আবু সাঈদ ওবায়দুল্লাহ
দ্বৈপ— পাপিয়া জেরীন
অকৈতবের গান— অরূপ রাহী

আবু তাহের সরফরাজ: বৈভব নিয়ে আপনাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?
পাপিয়া জেরীন: পেশাদার লেখক তৈরি করা, ভালো ডিস্ট্রিবিউশন করা। এসবের মাধ্যমে বৈভবকে একটা লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করাই আমাদের টার্গেট। মাল্টিটাস্কার হিসেবে আমি ও তানভীর মাহমুদ গাজী, দুজনেই এই পেশাটা এনজয় করছি। প্রকাশনার জায়গাটা যেহেতু একটা মিশ্রমাধ্যম— প্রচ্ছদ, ডিজাইন, কম্যুনিকেশন, লিটারেচার, কনজ্যুমার-সাইকোলজি— সবকিছু নিয়েই কাজ করা যাচ্ছে।

আবু তাহের সরফরাজ: প্রার্থনা করি, বৈভব তার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাক। ভালো মানের সাহিত্য প্রকাশ করে দেশে রুচিমান পাঠকের সংখ্যা বাড়িয়ে তুলুক। ধন্যবাদ আপনাকে ছাড়পত্রকে সঙ্গ দেয়ার জন্যে।
পাপিয়া জেরীন: আপনাকেও ধন্যবাদ। আর ছাড়পত্রের জন্যে রইল শুভ কামনা।