ভূমিকম্পে নিহত ১০, বিশেষজ্ঞদের সতর্কবার্তা
ছাড়পত্র ডেস্কপ্রকাশিত : নভেম্বর ২২, ২০২৫
ঢাকা ও দেশের নানা জেলায় শুক্রবার সকাল ১০টা ৩৮ মিনিটে অনুভূত তীব্র ভূমিকম্পে অন্তত ১০ জন মারা গেছে। নরসিংদীর মাধবদী উপজেলাকে কেন্দ্র করে রিখটার স্কেলে ৫.৭ মাত্রার এ কম্পনে আহত হয় ছয়শোর বেশি মানুষ। সবচেয়ে বেশি পাঁচজন মারা গেছে নরসিংদীতে, ঢাকায় চারজন এবং নারায়ণগঞ্জে একজন।
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানায়, ভূমিকম্পটির উৎপত্তিস্থল ছিল ভূপৃষ্ঠ থেকে ১০ কিলোমিটার গভীরে, ঢাকা থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরে।
মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা ইউএসজিএস অবশ্য মাত্রা ৫.৫ বলে উল্লেখ করেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ঢাকার এত কাছে এর আগে এমন শক্তিশালী ভূমিকম্প হয়নি। তাই কম্পনের তীব্রতাও ছিল নজিরবিহীন।
ভূমিকম্পে ঢাকা ও নরসিংদীসহ বিভিন্ন স্থানে দেয়াল ও ভবনের অংশবিশেষ ধসে পড়েছে। বহু ভবনে ফাটল দেখা দিয়েছে, কোথাও কোথাও জমি দেবে গেছে। ভয় পেয়ে দ্রুত নিচে নেমে আসার সময় অসুস্থ হয়ে পড়ে অনেকে।
রাজধানীর নিকেতন এলাকার বাসিন্দা আশরাফুল আলম বলেন, “সেলুনে বসে ছিলাম। চেয়ার এত কাঁপছিল, মনে হচ্ছিল পড়ে যাব। দৌড় দিয়ে বাইরে আসি। এই শহরে কোথাও নিরাপদ মনে হয় না।”
ইউএসজিএসের হিসাব অনুযায়ী, প্রায় ৭ কোটির বেশি মানুষ মৃদু কম্পন এবং আরও প্রায় পৌনে ৭ কোটি মানুষ হালকা কম্পন অনুভব করেছে। ঢাকায় শক্তিশালী কম্পন টের পেয়েছে ১ কোটির বেশি মানুষ। নরসিংদীতে উচ্চ তীব্রতায় কম্পন অনুভব করেছে প্রায় ৩ লাখ মানুষ।
সংস্থাটি ভূমিকম্পটিকে প্রাণহানির ঝুঁকিতে কমলা এবং অর্থনৈতিক ক্ষতির ঝুঁকিতে হলুদ শ্রেণিতে রেখেছে।
বুয়েটের ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক মেহেদি আহমেদ আনসারী বলেন, “ঢাকার এত কাছে এর আগে বড় কম্পন হয়নি। ১৫০ বছর পরপর বড় ভূমিকম্প ফিরে আসে। তাই সবাইকে আরও সতর্ক থাকতে হবে।”
তিনি আরও বলেন, “২০২৩ সালে রামগঞ্জে ৫.৫ মাত্রার ভূমিকম্প হয়েছিল। কিন্তু সেটি ছিল ঢাকার প্রায় ২০০ কিলোমিটার দূরে। এবার উৎপত্তিস্থল ছিল মাত্র ২৫ কিলোমিটার দূরে। ফলে কম্পন ছিল অনেক বেশি তীব্র।”
২০২৪ সালে রাজউকের আরবান রেজিলিয়েন্স গবেষণায় বলা হয়, ঢাকায় ৬.৯ মাত্রার ভূমিকম্প হলে প্রায় ৮ লাখ ৬৪ হাজার ভবন ধসে পড়তে পারে। এ ঘটনায় ২ লাখ ২০ হাজার এবং রাতে ৩ লাখ ২০ হাজার মানুষের প্রাণহানির আশঙ্কা করা হয়েছে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আকতার মাহমুদ বলেন, “ঢাকার নিম্নাঞ্চল, যেমন হাজারীবাগ, শ্যামলী, ঢাকা উদ্যান, বছিলা, পূর্বাচল, উত্তরাসহ বালু নদ ও প্রগতি সরণি এলাকা; উঁচু এলাকার তুলনায় বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। নব্বইয়ের দশকের পর এসব নিম্নভূমি ভরাট করে গড়ে ওঠা আবাসিক-বাণিজ্যিক এলাকা বড় ভূমিকম্পে ভয়াবহ ক্ষতির মুখে পড়তে পারে।”























