ভেনেজুয়েলার উপকূলে ১৫ হাজার মার্কিন সেনা মোতায়েন

ছাড়পত্র ডেস্ক

প্রকাশিত : ডিসেম্বর ২৫, ২০২৫

ভেনেজুয়েলার ওপর রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক চাপ বাড়াতে দেশটির তেলের ওপর কঠোর অবরোধ আরোপের নির্দেশ দিয়েছে হোয়াইট হাউস। বুধবার রয়টার্সকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে একজন উচ্চপদস্থ মার্কিন কর্মকর্তা এ তথ্য জানিয়েছেন।

তিনি জানান, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন দুই মাস ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানি বন্ধ করতে সামরিক বাহিনীকে পূর্ণ শক্তি নিয়োগের নির্দেশ দিয়েছে। বর্তমানে ক্যারিবীয় অঞ্চলে একটি বিমানবাহী রণতরী, ১১টি যুদ্ধজাহাজ, এক ডজনেরও বেশি এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান এবং ১৫ হাজারেরও বেশি সৈন্যের বিশাল সামরিক সমাবেশ ঘটিয়েছে পেন্টাগন।

যদিও সামরিক পথ এখনও খোলা রাখা হয়েছে, তবে ওয়াশিংটন আপাতত অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা এবং জ্বালানি অবরোধের মাধ্যমেই নিকোলাস মাদুরো সরকারকে কোণঠাসা করার কৌশল গ্রহণ করেছে।

হোয়াইট হাউসের এই পদক্ষেপে ১৯৬২ সালের কিউবান মিসাইল সংকটের প্রতিচ্ছবি দেখছে বিশ্লেষকরা। কারণ তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডি যুদ্ধের শব্দ ‘অবরোধ’ এড়িয়ে যেতে ‘কোয়ারেন্টিন’ শব্দটি ব্যবহার করেছিলেন। বর্তমান মার্কিন প্রশাসনের লক্ষ্য হলো, জানুয়ারির শেষ নাগাদ ভেনেজুয়েলাকে এক ভয়াবহ অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের মুখে ফেলা, যাতে তারা আমেরিকার শর্ত মেনে বড় কোনো রাজনৈতিক আপসে বাধ্য হয়।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প জনসমক্ষে কিছুটা অস্পষ্টতা বজায় রাখলেও গোপনে তিনি নিকোলাস মাদুরোকে ক্ষমতা ছেড়ে দেশত্যাগের জন্য প্রবল চাপ দিচ্ছেন বলে রয়টার্সের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। এরই মধ্যে মার্কিন কোস্টগার্ড ক্যারিবীয় সাগরে ভেনেজুয়েলার অপরিশোধিত তেল বোঝাই দুটি বিশাল ট্যাংকার জব্দ করেছে এবং ‘বেলা-১’ নামে আরও একটি নিষেধাজ্ঞাপ্রাপ্ত জাহাজ আটকের জন্য অতিরিক্ত বাহিনীর অপেক্ষায় রয়েছে।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রশাসনের পক্ষ থেকে ভেনেজুয়েলার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রে মাদক পাচারের গুরুতর অভিযোগ আনা হয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে গত কয়েক মাস ধরে মার্কিন বাহিনী দক্ষিণ আমেরিকা থেকে আসা এবং মাদক বহনের সন্দেহে থাকা বিভিন্ন নৌযানের ওপর সরাসরি বোমা হামলা চালাচ্ছে, যাকে অনেক দেশই বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড হিসেবে আখ্যা দিয়ে নিন্দা জানিয়েছে।

এছাড়া ট্রাম্প প্রায়ই ভেনেজুয়েলার মাদক অবকাঠামোতে সরাসরি হামলার হুমকি দিচ্ছেন এবং কারাকাস অভিমুখে সিআইএ-র বিশেষ গোপন তৎপরতার অনুমোদন দিয়েছেন। মঙ্গলবার জাতিসংঘে ভেনেজুয়েলার রাষ্ট্রদূত স্যামুয়েল মনকাডা এই পরিস্থিতির তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, “ভেনেজুয়েলা বিশ্বের জন্য কোনো হুমকি নয়, বরং মার্কিন সরকারই এখন বৈশ্বিক নিরাপত্তার জন্য আসল হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।”

জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা বুধবার এই সম্ভাব্য অবরোধের নিন্দা জানিয়ে বিবৃতিতে বলেন, আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী এ ধরনের শক্তি প্রয়োগকে অবৈধ সশস্ত্র আগ্রাসন হিসেবে গণ্য করা হয়। মার্কিন সামরিক সরঞ্জামের বিশাল উপস্থিতি, বিশেষ করে এফ-৩৫ যুদ্ধবিমানের মতো মারণাস্ত্র মোতায়েন নিছক নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করার গণ্ডি পেরিয়ে এক বড় ধরনের সামরিক সংঘাতের ইঙ্গিত দিচ্ছে।

পেন্টাগন দাবি করেছে, তাদের এই কার্যক্রমের মূল উদ্দেশ্য মাদুরো সরকারকে সম্পদহীন করা এবং তাদের আয়ের প্রধান উৎস তেল রপ্তানি পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়া। আন্তর্জাতিক এই উত্তেজনার ফলে বিশ্ববাজারে তেলের দাম এবং দক্ষিণ আমেরিকার ভূ-রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এখন বড় ধরনের ঝুঁকির মুখে পড়েছে। সূত্র: রয়টার্স