মুনিয়া

মুনিয়া

মগজভর্তি অন্ধকার নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে মানুষ

পর্ব ১২

প্রকাশিত : মে ০৪, ২০২১

কথাসাহিত্যিক মারুফ ইসলাম ‘দহনদিনের লিপি’ শিরোনামে আত্মজীবনীর মতো করে গদ্য লিখছেন ছাড়পত্রে। আজ প্রকাশিত হলো ১২ পর্ব।

২৮ এপ্রিল ২০২১ বুধবার
একটা ধারাবাহিক চিঠি সিরিজ লিখছিলাম `বুধবারের চিঠি` শিরোনামে। বহুদিন হয়ে গেছে, সেই চিঠি আর লেখা হয় না। কত বুধবার পেরিয়ে গেছে, আমার মনে নেই। তিতির নামের একজনকে উদ্দেশ্য করে চিঠিগুলো লিখতাম। এ পর্যন্ত খুব সম্ভবত ১৮টি পর্ব লিখেছি।

আজ সেলিম ভাই নক করে বুধবারের চিঠির কথা স্মরণ করিয়ে দিলেন। আমি বললাম, হ্যাঁ, আবার শুরু করা উচিত। দেখি, সামনের বুধবার থেকে কন্টিনিউ করা যায় কিনা।

সেলিম ভাই আমাকে নস্টালজিক করে দিলেন। পেছনে ফেলে আসা বকুল বিছানো পথ, বর্ষার ছাতা, দুপুরের লাঞ্চবক্স, সিটি ক্যাফের নানরুটি...আরও কতকিছু মনে পড়ল আমার!

এসব থেকে মুক্তি পেতে আমি ফেসবুকে ঢুকলাম আবার। ফেসবুকজুড়ে শুধু মুনিয়া আর মুনিয়া। মুনিয়া আমার প্রিয় পাখিদের একটি। কবে থেকে? যেদিন প্রথম পড়লাম জীবনানন্দের কবিতায় সেদিন থেকে:
আকাশে সাতটি তারা যখন উঠেছে ফুটে
আমি এই ঘাসে বসে থাকি; কামরাঙা-লাল মেঘ যেন মৃত মুনিয়ার মতো...

কুড়ি বছর পরে কবিতাতেও আছে:
ব্যস্ততা নাইকো আর,
হাঁসের নীড়ের থেকে খড়
পাখির নীড় থেকে খড়
ছড়াতেছে; মুনিয়ার ঘরে রাত, শীত আর শিশিরের জল।

মৃত মুনিয়ার শরীর ব্যবচ্ছেদ হচ্ছে মর্গে, আর এদিকে তার চরিত্রের ব্যবচ্ছেদ চলছে ফেসবুকে। অবাক হয়ে লক্ষ্য করলাম, আমরা কী অদ্ভূত অসভ্য এক ব্যবস্থা গড়ে তুলেছি আমাদের পরিবারে, সমাজে এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। আমাদের পরিবার কাঠামো এমনভাবে তৈরি করেছি, যার মধ্য দিয়ে একটা শিশু বেড়ে ওঠার সময় কোনো আলোর স্পর্শ পায় না। আমাদের সমাজকাঠামো এমনভাবে তৈরি, যার মধ্য দিয়ে বড় হবার সময় কোনো মানুষ আলোর স্পর্শ পায় না। আমাদের শিক্ষাকাঠামো এমনভাবে তৈরি করেছি যার মধ্য দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় কেউই আলোর স্পর্শ পায় না। আমাদের চারপাশে তাই কোটি কোটি আদিম অন্ধকারাচ্ছন্ন মস্তিষ্কঅলা মানুষের চলাফেরা। এদেরকে নিয়েই আমাদের পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র। এদেরকে নিয়েই আমাদের ফেসবুক।

এই সুপারফিশিয়াল, আদিম, অসভ্য, বর্বর মানুষ প্রজাতি বুঝতেই পারছে না, কেউ একজন রক্ষিতা হলেই তার খুন হয়ে যাওয়া বৈধ হয়ে যায় না। একটি নৈতিক অপরাধ, আরেকটি ফৌজদারি অপরাধ। আপনি ফৌজদারি অপরাধকে নৈতিক অপরাধ দিয়ে জাস্টিফাই করতে পারেন না। এটুকু বোঝার মতো বোধবুদ্ধি আপনার হয় নাই, অথচ আপনি এমএ বিএ পাশ করে বসে আছেন। বড় বড় ইউনিভার্সিটির বড় বড় ডিগ্রি নিয়ে আত্মগরিমায় ভুগছেন!

চারপাশজুড়ে এত এত মানুষ মগজভর্তি অন্ধকার নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে! হায়! এদের জন্যই সম্ভবত যীশু বলেছিলেন, লেট দেয়ার বি লাইট। চলবে