রথো রাফি

রথো রাফি

মজনু শাহ`কে উৎসর্গীকৃত রথো রাফির কবিতা ‘আমাদের হাসিকান্না’

প্রকাশিত : মার্চ ২৬, ২০২৪

সুদূর ইতালি থেকে আমার বন্ধু প্রায়ই কল করে আমাকে:
‘পাহাড়ের চেয়েও, রাফি, ভার হয়ে থাকে শরীর অবসাদ ও ব্যথায়।’
আমার বন্ধুটি দেশে থাকতে ছিল আমারই মতো,
মানে সমস্যার ঝড়োহাওয়াতেও উটের মতো
চোখ খোলা সারাক্ষণ, খুদকুড়োর আশায় কাজের সন্ধানে
ছুটন্ত দিনরাত, আর এখন গাধাখাটা এক প্রবাসী বাবা।

কথায় কথায় সে জানায়: ‘আমার শিশুটা না তার পিতার সঙ্গ চায়!’
আমাকে আরও জানায়, ‘এই বদমাশ ঋণের পাহাড়টা না হয় থাক
আরও ধীরে ক্ষয় হলেও ক্ষতি নেই... ওরা আসুক, তবু আসুক এখানে।’

বাবা নই আমি, হয়তো তাই মৃদু হেসে উঠি, কাব্যি করি: ‘ছোট পাথর
মাথার ওপর কি আস্ত একটা পাহাড় সয় না?’
সেও হাসে। টের পাই, ওই সুদূর বাবা ডাক দৃশ্যমান করে তুলতেই
এই হাসির হাওয়ায় ঋণের পুরোনো পাহাড়টাকে
তুলোর মতোই উড়িয়ে দিতে চায় সে এই মধ্যরাতে।

আর হাসতে হাসতে কথা শুধু বাঁকায়, ‘জানেন, আমার চোখ আছে
যদিও তারা নিজের শিশুকেই দেখতে পায় না।’
আর আমিও অনুভব করার চেষ্টা করি তার হাতদুটি
আধমণ একমণ ওজনের প্যাক দিনভর যন্ত্রের মুখে
তুলে দেয়ার কোন সুখের ফোস্কায় ভরে ওঠে রাতের পর রাত!
তবু আমিও হাসতে হাসতে তার কানে কবিতার পঙক্তি ঢেলে দিতে থাকি
‘বদমাশ পাহাড়টা ঘাড়ে নিয়ে ছোটপাথর, দেখো, ঝর্ণা বানায়
শিশুহাঁসগুলোর জল তছনছ করা দেখবে বলে।’

সে হাসে, আর বলে, ‘হাসির শব্দ ও দৃশ্যের দূরত্ব, রাফি,
শুধু আমিই জানি।’ তাকে বলি, ‘দেশেই থাকেন আর
বিদেশেই যান, এখনো বহু বিবাহিতের যৌনজীবন বলে কিছু নেই!’

এ কথা বলতেই হা হা হাসিতে ফেটে পড়ে সে
আর আমাকেও স্মরণ করিয়ে দেয়: ‘আপনার কিন্তু বিয়ে
করা দরকার, খুব, খুব দেরি হয়ে যাচ্ছে, রাফি।’ গলা ফাটিয়ে
মাঝরাতে আমরা হাসি আর হাসি, আর সীমাহীন
এই হাসির ভেতরে কেঁপে ওঠে আমাদের দেশ, বিদেশ
আর বঙ্কিম বর্তমান। বেঁকেচুরে যায় আমাদের যত হাসিকান্না!