মলয়চন্দন মুখোপাধ‍্যায়ের দুটি কবিতা

প্রকাশিত : মে ২২, ২০২৩

অপেক্ষা

 

সুপ্রিয় সকাল থেকে বসে আছি দীর্ঘ মগডালে।
এখন গভীর রাত, টিকাটুলির পুলিশ
দিনের ডিউটি শেষে, গেছে দয়িতার আদর কাড়তে।
কেবল এফ.এম. জাগে, রাস্তার হ‍্যালোজেন জাগে
জাগে শ্মশানের ডাক্তার। এখন বিবশ হয়ে শুনি
মাতালের শ্রুতিনাট‍্য, কুকুরের মিঞা কি মল্লার।

 

আমার জন‍্য কোনো পুলিশের প্রেমিকার মতো
নেই বনলতা সেনের প্রশ্রয়।
পৌষের হিমশীতে নেই নীরা, নেই যক্ষপ্রিয়া।
বেকার, সেহেতু নেই একুশের রঙিন প্রভাত
আমার শ‍্যামলি নেই আরংয়ের পাঞ্জাবি উপহার দিতে।

 

মগডালে উঠি রোজ, অনাবিল অলরাউন্ডার,
উঠি আর নামি, নামি-উঠি কপিল নিখাঞ্জ
বাহবা না দিয়ে পারবে না, কেননা উঠেছে ঢের ,
কপিল আমার মতো নামেননি নিচে
নিভাঁজ নিয়ত!

 

আমার ইনক্রিমেন্ট নেই, নেই গ্র‍্যাচুয়িটি, পেনশন
নেই মহার্ঘ‍্যের ভাতা, কেবল রয়েছে ট্রি টপ।
পরিবেশবিদ ভাবে, যেন আমি বুড়িগঙ্গা নদী
কালাপানি, পূতিগন্ধ, পরিত‍্যক্ত বহিত্রসমেত।

 

পুতুল নির্মাতা

 

আমরা তো আজীবন পুতুলের প্রতিশব্দ, কত
ভাঙাগড়া আমাদের, দিনরাত অন্দর সদর
যা খেলি, জানি না খেলা গড়ে কে নেপথ‍্য কারিগর।
আজ রাজসিংহাসনে, কাল হয় মুহূর্তে পতন।
মন্বন্তরে মরি না তো, সাপ বাঘ নিয়ে খেলা করি
চাল নেই চুলো নেই, তবু চড়ি সোনার সাম্পান
স্বপ্নে কত জর্দা-চুন ছাড়া খাই ভুলরঙা পান।
অলীক জীবনটাকে কে বাঁচায়, কোন ধন্বন্তরী?
জন্মদাতা পিতামাতা, ভাইবোন— পুতুল পুতুল!

 

প্রেমিকার ওষ্ঠে মধু, বুকে মধুরতরতা জানি
তার ঋতুমতী নদীটিকে ঘিরে আমি মহাজন
মহান মূর্খের শাহ্জাদা, নিজেকেই বলি, শোন
প্রাণপাখি উড়ে গেলে থাকবে কেবল খাঁচাখানি
সেইদিন দেখা দেবে পুতুলনির্মাতা নির্ভুল।