মার্কিন আগ্রাসনের বিরুদ্ধে, ইরানের পক্ষে

রিফাত বিন সালাম

প্রকাশিত : জানুয়ারি ০৫, ২০২০

বলিউড দিয়েই আলাপটা শুরু করা সহজ হবে। শাহরুখ খানের সিনেমাগুলো বরাবরই অখাদ্য (দু’একটা বাদ দিলে)। যার মধ্যে একটা ছিল, মাই নেম ইজ খান। এটাও অখাদ্য। কারণ এসব কথা স্রেফ সিনেমাতেই মানায়, ব্যক্তি মুক্তির বয়ান স্রেফ। তাই যখন ভারতজুড়ে বিজেপি একটা অ্যান্টি-মুসলিম আওয়াজ তুলছে তখন আর শাহরুখকে রাস্তায় দেখা যায়নি। প্লাকার্ড নিয়ে শাহরুখ বলে নাই, ‘আমি সন্ত্রাসী নই।’ বরং উল্টোটা করেছেন উনি। মোদির অনুষ্ঠানে আমির-শাহরুখরা প্রথম সারিতে ছিলেন। ভারতের পিছিয়ে থাকা মুসলিমদের মিনিমাম লিবারেল বানানোর এনজিও টাইপ কোনো কাজেও দেখা যায়নি সুন্নি চিন্তার এই মানুষদের।

এটাই বর্তমান সুন্নি চরিত্র। সৌদি কেন্দ্রিক চিন্তা। তাই দুনিয়াব্যাপী মুসলিমদের চিন্তাভাবনার উন্নতির ক্ষেত্রে সামান্য কাজটুকু করেনি সৌদি কেন্দ্রিক রাষ্ট্রগুলো। অন্যদিকে জ্ঞান-বিজ্ঞান, দর্শন, শিল্পে একমাত্র ইরানই অগ্রসর বাকিদের থেকে। ইসলামের ইতিহাসে হযরত আলির (রা.) চেয়ে চিন্তাশীল মানুষ কমই আছে। ১৫০০ বছর আগে যিনি গ্রিক দর্শন অনুবাদ করার উদ্যোগ নিয়েছেন তিনি অন্তত এই সুন্নিদের থেকে অগ্রসর।

যদিও ইরানকে একত্রে দেখার সুযোগ নাই। নিজ রাষ্ট্রের ভেতরের ইরান এবং আন্তর্জাতিক ইরান রাষ্ট্র সম্পূর্ণ ভিন্ন। কোনো কোনো ক্ষেত্রে দ্বান্দ্বিক। ইরানের অভ্যন্তরীণ মুক্তি তার জনগণের হাতে। কিন্তু তার আন্তর্জাতিক মুক্তির ক্ষেত্রে সকলের সমর্থন গুরুত্বপূর্ণ। সুন্নিদের চেয়ে জ্ঞানে-বিজ্ঞানে ইরান অগ্রসর, এটা অস্বীকার করা যায় না। সিরিয়া থেকে ইয়েমেন, যখন সারা দুনিয়ার মুসলিম রাষ্ট্রগুলো, শুধু মুসলিম কেন অধিকাংশ রাষ্ট্রই চুপচাপ বসে ছিল; ইরানই একমাত্র সৌদি-মার্কিন-ইজরায়েল জোটের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলেছে মধ্যপ্রাচ্যে।

ইরান আর যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার উত্তেজনা কতদূর এগোবে, সেটা বলা কঠিন। আপাতত হামলা ও পাল্টা-হামলার মধ্যে দিয়েই এগোচ্ছে পুরোটা। ‘এবার ইরানের পতন হবে’ সুন্নিদের এমন ধারণা স্রেফ অজ্ঞতা। এরা ভিয়েতনামের ইতিহাস জানে না। জানে না যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পদলেহন করার মতো ভয়াবহ আর কিছুই হতে পারে না। যদিও ইরান আর ভিয়েতনাম এক নয়। কিন্তু মার্কিন আগ্রাসনের ক্ষেত্রে ইরানকেও ভিয়েতনামের মতোই সংগ্রাম করতেই হবে। ইরানের অতীত ইতিহাসও একই কথা বলে। সামনে আর রাস্তা নাই। হয় আরেকটা সিরিয়া অথবা আরেকটা ভিয়েতনাম অপেক্ষা করছে।

বাংলাদেশে বসে ইরানের পক্ষে আওয়াজ তুলে কতটা লাভ হবে, সেটা বলা কঠিন। কিন্তু ইরান কতটা ‘প্রগতিশীল নাকি কট্টর রাষ্ট্র’ এসব প্রশ্নের চেয়েও বড় কথা, কে কার পক্ষ নিচ্ছে। আন্তর্জাতিকভাবে মার্কিন আগ্রাসনের বিরুদ্ধে আমাদের আওয়াজ তুলতেই হবে। সেটা ইরান হোক বা সৌদি হোক বা ভারত হোক। যার উপরেই সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসন চলবে তার বিরুদ্ধে দাঁড়াতেই হবে।

লেখক: কবি, কলামিস্ট ও কার্টুনিস্ট