মাসুদ খানের পাঁচটি ছোট-ছোট গদ্য আলেখ্য

প্রকাশিত : নভেম্বর ২৬, ২০২১

প্রেম

এক.
সেই এক উদ্ভ্রান্ত বিদ্যুৎ যা মানুষকে মুহূর্তে পরিণত করে পরাক্রান্ত চুম্বকে।
আর ওই সেই চুম্বক যা পুনরায় বানায় বিদ্যুৎ, আর তা চমকিয়ে চলে মানুষে মানুষীতে।

দুই.
কাঠ আর লোহা—দুজনেরই বসবাস ডাঙায়।
একদিন প্রেমে পড়ল তারা পরস্পরের
তারপর ঠিক করল, থাকবে না আর এই খটখটে নীরস ডাঙায়।
লোহা বলে— প্রিয়, আমি তো ভাসতে জানি না
কাঠ বলে— আমি আছি-না!
জড়াজড়ি করে ভেসে বেড়াব দুজনে, যুগলমিথুনে,
বন্দর থেকে বন্দরে, দেশ-দেশান্তরে।
ভাসলে ভাসব দুজনে, ডুবলেও ডুবব যুগলে,
অগাধ সলিলে, সান্দ্র সহমরণে...
এক মরণে দুজন মরে, এমন মরা মরে কয়জনে?
তখনই সম্ভব হয় প্রেমের তুরীয় পর্যায়
যখন প্রেমিক-প্রেমিকা মিলে
তাচ্ছিল্যভরে পুড়িয়ে দিয়ে চলে যায় অনাগত ঘরসংসার
যেদিকে দুচোখ যায়...

যোগসূত্র

এও এক জটিল জালিকাবিন্যাস।
এই যে হারান মণ্ডল মাঝে-মধ্যেই বউ পেটায়
সার্কাসের অতিপ্রশিক্ষিত জোকারও মাঝে-মাঝে ভুল তামাশা দেখায়
এসবের জন্য নাকি কোনো-না-কোনোভাবে দায়ী থেকে যায়
বহু-দূরে-থাকা বিশ্বব্যাংকের চেয়ারম্যানও।
বহুদূরে বাড়ে সুদের হার, এইদিকে বাড়ে নারী ও শিশুর প্রতি নিষ্ঠুরতা।

প্রতিভা

এক বৈদ্যুতীন সুপার-সার্কিটের নকশা করেছে বিজ্ঞানীরা। সার্কিটটি এতটাই বিশাল, সূক্ষ্ম ও জটিল যে, কোনো কম্পোনেন্টের ভেতর দিয়ে কতটা বিদ্যুৎ বয়ে যাবে, শত অঙ্ক কষেও তা বের করা যাচ্ছে না।
তবে বাস্তবে সার্কিটটি বানিয়ে সুইচ অন করা হলো যখন, কাউকেই লাগল না, সার্কিটের জড় ব্যাটারিগুলিই মুহূর্তের মধ্যে নিখুঁত অঙ্ক কষে একদম ঠিক-ঠিক পরিমাণ বিদ্যুৎ পাঠিয়ে দিল ঠিক-ঠিক জায়গায়।
এতটা প্রতিভা জড়বস্তুর!

ক্ষমতা

ক্ষমতা থাকলে কাজ হয়। তেলেসমাতির মতো। মুহূর্তের মধ্যে যে যত বেশি কার্য বা দুষ্কার্য করতে পারে, বলা বাহুল্য, তার ক্ষমতা তত বেশি। পদার্থবিজ্ঞান ও ক্ষমতাবিদ্যা উভয়েই একই কথা বলে।
ক্ষমতা হস্তান্তরযোগ্য, এবং তা ভাগ-বাটোয়ারাযোগ্যও বটে। যেমন, পাওয়ার স্টেশন তার পাওয়ার ভাগ করে দেয় একই সার্কিটে-থাকা বড় বালব, টুনি বালব, বড় ফ্যান, পাতি ফ্যান, পাম্প, স্ক্রু ড্রাইভার, ড্রিল মেশিন, ধোলাইযন্ত্র ও আরো কত কিছুকে।