মাহবুব পিয়ালের প্রবন্ধ ‘আধ্যাত্মিকতা, পাগলামি ও জ্ঞান সাধনা’

প্রকাশিত : এপ্রিল ০৩, ২০২১

পাগল ডাকলে আক্ষরিক অর্থে কাউকে পাগল ভাবার রেওয়াজ নেই আমাদের সংস্কৃতিতে। কেন না এই সম্বোধনের আছে এক সামাজিক স্বীকৃতি। নানা রূপের সমাজস্বীকৃত এই পাগলামিগুলোর নিদর্শন খুঁজে পাওয়াও দুষ্কর নয়। এমনকি পাশ্চাত্যলব্ধ চিকিৎসা বিজ্ঞানে মানসিক ব্যাধি হিসেবে গণ্য পাগলামির প্রকাশও আমাদের লোকসমাজে অধ্যাত্ম সাধনার সাথে যুক্ত করে দেখে অনেকে। অন্যদিকে সাধুসন্ন্যাসীদের এক ধরনের গ্রহণযোগ্যতাও আছে পাগল হিসেবে। চৈতন্যদেব মানবপ্রেমে মজে গিয়ে নিয়েছিলেন পাগলের বেশ। বাউলরা পাগলখ্যাতির ভেতর দিয়ে খুঁজে বেড়ায় সাধনভজনের ফলাফল; আর ওদের আকড়ে থাকা ‘ক্ষ্যাপা’ ভাবটার সমাদর করে যেতে সমাজের মানুষেরাও কার্পণ্য করেনি কোনদিন। নানা মন্ত্রে দীক্ষিত এই বাউলদের অধ্যাত্ম সাধনা আর গুপ্তজ্ঞানের চর্চার বিষয়টি জানা আছে অনেকের।

এই ভূখণ্ডে সূফীবাদ পাগলামিতে নতুন মাত্রা এনে দেয়। মুরশিদ তত্ত্ব কিংবা পীরবাদে উল্লেখ আছে দুটি ধারার। একটি সালেকী, অন্যটি মজ্জুব। ধরে নেয়া হয় সালেকী ধারার পীররা প্রচলিত বিধানের ভেতর দিয়েই ভক্তদের সমস্যার সমাধান বাৎলে দেন। কিন্তু মজ্জুবদের চালচলন আলাদা। ওরা ধার ধারেনা প্রচলিত আচারের; কথা বলে একদম কম; গায়ে কাপড় রাখার ইচ্ছেও করেনা কেউ কেউ। বিশেষ দিনে ওদের সমাগম ঘটে নির্দিষ্ট মাজারে। ওরা নিজেদের মনে করে জিন্দাপীর খিজিরের অনুগামী। কোরাণে তার সম্পর্কে বর্ণনা রয়েছে। কিন্তু উত্তর ভারত ও প্রাচীন বাঙলায় এসে খিজিরের নামের সাথে যুক্ত হয় স্থানীয় লোকাচার। বৈদিক জলদেবতা বরুণসংশ্লিষ্ট আচারগুলো যুক্ত হয় স্থানীয়ভাবে পরিচিতি পাওয়া খোয়াজখিজিরের নামের সাথে। লোকসমাজে ধারণা রয়েছে খোয়াজখিজির জলজগৎ ও প্রকৃতির নিয়ন্ত্রক। খোয়াজের নামে বাঙলার ভাটী অঞ্চলে মাঘ মাসে এখোনো আয়োজন হয় বেড়াভাসানের। খিজির শব্দের অর্থ সবুজ। সবুজ আবার প্রকৃতির অংশ। সুফী সাধকরাও আবার বিরাজ করেন প্রকৃতিকে ঘিরে। মজ্জুবরা খোয়াজের হয়ে এই প্রকৃতি নিয়ন্ত্রণের কাজটি করে থাকে - এমন বিশ্বাসও গড়ে উঠেছে ।

ফিরে আসি পাগলামীর প্রসঙ্গে। প্রত্যন্ত অঞ্চলে, শহরে ও গঞ্জে, মাজারে-মাজারে রয়েছে নানা বেশধারী পাগলফকিরের সমাগম। কারো পরণে শালু; কারো পোশাকে ঘটেছে বিচিত্র রঙের সমাগম, শত শত তালি দেয়া কাপড়ে। শরীর জুড়ে শেকল মোড়া কারো; কেউ হাতে রেখেছে দা কিংবা চিমটা। নানা প্রতীক বা ‘আশা’র রয়েছে নানা অর্থ। এই প্রতীকগুলো বলে দেয় কে কোন তরিকার অনুগামী। লোকায়ত সাতপীর ও পাঁচপীরের প্রতীকী মাজারগুলোরও রয়েছে নানা মাহাত্ম। এই পীরদের একেকজনের আছে একেক প্রতীক। পাঁচপীরের অন্যতম মাদারপীরের প্রতীক হলো জোড়া বাঁশ। পাঁচপীরের কোনো কেনো অনুগামীর হাতে থাকে পাঁচটি লোহার বালা। এই প্রতীক ব্যবহারের রয়েছে বিচিত্র সব কাহিনী। এটা সঙ্গত কারণেই ধরে নেয়া যায় কেউ কেউ শুধু বেশভূষায় পাগলফকির সেজে ঘুরে বেড়ায়। কিন্তু অনেকেই আবার এমন আছেন শুধু গুরুর বাৎলে দেয়া পথ চলতে গিয়ে ত্রিশ বছর ধরে বয়ে বেড়াচ্ছেন ধারালো কোনো দা। অথচ তা দিয়ে কাউকে আঘাত করছেন না। নিজেকে নিয়ন্ত্রণের এ এক কঠিন সাধনা!

মাজারে আরো একধরণের পাগল দেখা যায়। ওরা মুর্শিদী গান করে। মাথা ভর্তি থাকে লম্বা চুল। এমন চুল রাখারও রয়েছে অকাট্য যুক্তি ও ব্যাখ্যা। লম্বা চুল রেখে ওরা ধরে সোহাগী বেশ। সোহাগী বেশ ধরে নিজেকে কখনো কখনো নারী হিসেবে কল্পনা করে। এই ভাবনার পিছনে থাকে কামের উর্ধ্বে ওঠার বাসনা। নিজেকে নারী হিসেবে ভাবলে তখন অন্য কোন নারীর প্রতি যৌন আকর্ষণ এড়ানো সম্ভব - এমনটাই মনে করে ওরা। নারীকে শুধু নারী হিসেবে না দেখে মানুষ রূপেই তার অস্তিত্বকে অনুভব করতে পারা - সোহাগী বেশের এমন একটি তাৎপর্যও রয়েছে ওদের কাছে।

মরমী সাধক সুফীরা ছাড়াও বাউলদের আচরণে রয়েছে পাগলামীর নানা উপকরণ। অসংখ্য বাউল ও বাউলধর্মী গানে পাগলামীকে মহিমাস্বিত করা হয়েছে। পাগলামীর সাথে যোগসাজশ রয়েছে অধ্যাত্ম সাধনার। আবার আধ্যাত্মিকতার ভেতর দিয়ে রয়েছে বাস্তবকে বোঝার সাধনা। এটি পূর্ণতঃই স্থানীয় একটি সাধনধারা, পাশ্চাত্যের যুক্তি নির্ভর অনুসন্ধিৎসার বিপরীতে এর অবস্থান।

পাগলামীর ভেতর দিয়ে কী আরাধ্য কিংবা এর নানা বৈশিষ্ট্যইবা কী, মনমোহন দত্তের গানে তারই আভাস পাওয়া যায়:

পাগল পাগল সবাই পাগল তবে কেন পাগল খোটা
দিল দরিয়ায় ডুব দিয়া দেখ পাগল বিনে ভাল কেডা
কেহ রুপে কেহ রসে কেউ বা পাগল ভালবেসে
কেউবা পাগল কেঁদে হেসে ভেবে মনে এইডা ওইডা ॥
কেহ ধনে কেহ মনে কেউ পাগল অভাবের টানে
তন্ত্র-মন্ত্র নাহি জানে তারা লাগায় শুধু প্রেমের ল্যাঠা ॥

বিরহ জনিত পাগলামীর অসংখ্য উদাহরণ আছে লোক গানে। প্রচলিত রয়েছে নানা আখ্যান। আউল ফকিরের গানে বর্ণিত রয়েছে:

পাগল হয়ে বন্ধু পাগল বানালে পাগল
আগে ভালবাসি দিয়ে মুখের হাসি
যত দোষের দোষী আমায় বানালে পাগল।

বিরহ থেকেই মূলত শুরু হয় জীবনের নানা অর্থ খোঁজার সাধনা। আর তার ফলে প্রকাশমান আচরণসমূহ পেয়ে যায় পাগলামির অভিধা। লালনের গানে আবার তিন পাগলের সম্মিলন অন্য মাত্রা পেয়েছে। বাঙালীর চিন্তাকল্পে তিন ধারার সমন্বয়ের আছে বিশেষ তাৎপর্য। যেমন তিন নদীর সঙ্গম ত্রিবেণীর ধারণা অসংখ্য পূরাণকল্পে ঘুরে ফিরে এসেছে বারংবার। লালন বলেন:
তিন পাগলে হল মেলা নদে এসে
তোরা যাসনে সে পাগলের কাছে ।
একটা পাগলামি করে জাত দেয় সে বিজাতেরে দৌড়ে গিয়ে
...চৈত্য-নিতে-অদৈ ক্ষ্যাপা নাম ধরে সে।

পাগলামীর বর্ণিত এই সবগুলো ধরণই নিবিড় ভাবে জড়িত আধ্যাত্মিকতার সাথে। স্থানীয় লোকাচার ও সিনক্রেটিস্টিক ঐতিহ্য থেকে শুরু করে সুফীবাদ ও উত্তরকালের সব ধর্মীয়চর্চাই পাগলামীর বিচিত্র সব ধারা অনুসরণ করে যুক্ত হয় অধ্যাত্ম সাধনায়। এই আধ্যাত্মিকতা শুধু পারলৌকিক লক্ষ্যের দিকেই ধাবিত নয় বরং পরম যুক্তিতর্কের অবতারণার মাঝ দিয়ে ইহজগৎ ও বাস্তবকে চরমভাবে ব্যবচ্ছেদ করে। এর ভেতর দিয়ে সেই কথাটিরই প্রতিধ্বনি পাওয়া যায় যখন বলা হয় West has matrialised the spirit and East has spiritualised the matter.

অধ্যাত্ম সাধনার এই পথ বাস্তব ও দৃশ্যমানতাকে বোঝার ক্ষেত্রেই অনুসৃত। বাউল, সুফী, মুর্শিদী, ফকির, সন্ন্যাসী - ভক্তিবাদী প্রভৃতি নানা ভিন্ন ধারার অনুসারীদের নানা ধরণের পাগলামীও মূলত ব্যপৃত হয় সমাজ সংস্কৃতির ব্যবচ্ছেদ কল্পে। এর ভেতর দিয়েই ইহজাগতিক বাস্তবতা সম্পর্কে সমারোহ ঘটে জ্ঞানের। বাউলরা যুক্তিসিদ্ধ প্রশ্নের অবতারণা করে সত্যকে বোঝেন; সুফীরাও প্রেমসাধনার সোপান বেয়ে অস্তিত্বের নানা সত্য ও সঙ্কটকে অনুধাবন করেন। অধ্যাত্ম সাধনা আর ভক্তিবাদের নানা পথকে অনেকেই একটি জ্ঞান বিরোধী চর্চা মনে করেন। পাশ্চাত্যের মানুষের দেখা ও বোঝার ধরণে প্রধানত সরাসরি পর্যবেক্ষণ ও যৌক্তিক সর্ম্পকের গুরুত্ব বেশী; অন্যদিকে আমাদের সমাজের মানুষের ক্ষেত্রে এ সম্পর্কিত প্রকাশটি বেশ ভিন্ন। ভক্তিবাদসহ নানা অর্ন্তমুখী আচরণের কারণে রূপক আশ্রয়ী বর্ণনা, ব্যাখ্যা কিংবা প্রকাশের ধরণ পাশ্চাত্যের যুক্তিধর্মী জ্ঞানধারা হতে ভিন্ন বলে বিভ্রান্তিতে পড়ে যান অনেকেই। এই কারণে পাশ্চাত্যের র্যাশনালিটি দিয়ে এই দেশের সমাজ, মানুষ ও তার জ্ঞানের রূপ প্রকাশকে বুঝতে গেলে বিপত্তি বাধে। লালনের ভাষায় বলা যায়: ‘পাগলের সঙ্গে যাবি পাগল হবি বুঝবি তবে’। এই বিপত্তি পাগল ও পাগলামীকে বুঝতে না পারার কারণেই। অনেকেই আবার লালনকে বস্তুবাদী বানাতে গিয়ে ভক্তি ও ভাববাদকে গুলিয়ে ফেলেন; উদ্দেশ্য ভক্তি ও ভাবকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দেয়া। অথচ আমাদের বেলায় বস্তু ও ভাবের দোলাচলেই চলছে সমাজ সংস্কৃতি ও জীবন।

ফিরে আসি জ্ঞানের প্রসঙ্গে। ফুকোর মতে জ্ঞান সমাজ সংগঠনে প্রবিষ্ট হয়; এই প্রবিষ্ট জ্ঞান সমাজের সদস্যদের উপর আরোপিত হয়। পৃথিবীর নানা সমাজের জ্ঞানের আধার ভিন্ন হতে ভিন্নতর হলেও পাশ্চাত্যলব্দ জ্ঞান ক্ষমতার সম্পর্কের রাজনীতির ভেতর দিয়ে আরোপিত হচ্ছে অন্য সমাজে। একসমাজের সত্য আরেক সমাজে অবিবেচ্য - পাশ্চাত্যের সমাজ বিজ্ঞানীরা খুব সামপ্রতিক কালে এসে এই কথাটিও মেনে নিয়েছেন। অন্যদিকে সমাজ তার অভিজ্ঞতায় সৃষ্ট জ্ঞানের আলোকে মানুষের জীবনের উপর নানা মূল্য আরোপ করে। জ্ঞান প্রসঙ্গে সমাজবিজ্ঞানীদের আলোচনায় এই বিষয়গুলো বার বার ঘুরে ফিরে এসেছে। যুক্তিমুখী জ্ঞান সাধনার ভেতর দিয়ে পাশ্চাত্যের সমাজবিজ্ঞানীদের অনুমিত সত্যগুলোর অনেক কিছুই অধ্যাত্ম সাধনার ভিতর দিয়ে আমাদের লোকসাধকরা বা উল্লিখিত ওই পাগলরা বহুবর্ষ পূর্বে অনুধাবন করে গিয়েেেছন। জ্ঞানগত দিক থেকে ঋদ্ধ হলেও লিখিত মাধ্যমে ছিলোনা তাদের যাতায়াত; মৌখিক ও লোকজ ঐতিহ্যের ভেতরে লালিত বলে দীর্ঘদিন কোন ডিসকোর্সেও স্থান পায়নি। অন্যদিকে ক্ষমতার সম্পর্কের ডামাডোলে পরে পাশ্চাত্যতো দূরে দেশী এলিট লেখক ও চিন্তাবিদদের নজরও এড়িয়ে গেছে সেইসব নিগূঢ় তত্ত্ব। অধ্যাত্ম সাধনার সাথে জ্ঞান সাধনার সম্পর্কটির অসীম গুরুত্বের আভাস পাওয়া যায় সিলেটের সাধক শেখ ভানুর গানে:

জ্বালায়া জ্ঞানের বাত্তি
ফুল ফুটাইবো নানান জাতি গো
সেই ফুলের উপর কত রঙের কলিরে
ভ্রমরা, নিশাতে যাইয়ো ফুল বনে।

জ্ঞান সাধনার ভিতর দিয়েই বিকশিত জীবনের নানা রূপ ও প্রকাশ। জীবন বৈচিত্র্যকে বুঝে নেয়া সেই জ্ঞান সাধনারই অংশ। বাউলদের গানে জ্ঞান সাধনা আবার রূপ সাধনারই নামান্তর। রূপসাগরে ডুব দেয়া কিংবা রূপসাধনার কথা উল্লেখ রয়েছে অসংখ্য গানে: ‘পথিক কয় ভেবোনারে ডুবে যাও রূপ সাগরে/ বিরলে কর বসে রূপ সাধনা’। লালনের গানে রয়েছে: ‘পরিএ কোপ্নী ধজা মজা উড়ালে ফকিরী/ দেখনা মন ঝাক্মারী এই দুনিয়াদারী’। ফকিরীর সাথে অনুসন্ধানের সম্পর্কটি এতে স্পষ্ট। মাইজভাণ্ডারের গানেও আধ্যাত্মিকতার কিংবা অলৌকিক ক্ষমতার পেছনে জ্ঞান সাধনার গুরুত্ব প্রাধান্য পেয়েছে। এসহাক সরকারের লেখা একটি গানে আছে:

আয়না দিয়া ছবি দেখতে পায়রার প্রয়োজন
আয়নার মাইঝে পায়রা লাগাও ওরে আমার মন।

আয়না হচ্ছে মনের প্রতিবিম্ব যেখানটায় দেখা মিলতে পারে অদেখা ও অজানা কোন আরাদ্ধ বস্তু। কিন্তু এই দেখতে পারাটা সম্ভব হয়ে উঠেনা সবার। কারণ আয়নায় ছবি দেখতে প্রয়োজন হয় জ্ঞান। পায়রাই এখানে জ্ঞান। তাই চেতন কিংবা জ্ঞানের সংযুক্তি ছাড়া বস্তু ও অবস্তু কিংবা আর কিছুরই সন্ধান পাওয়া অসম্ভব। আধ্যাত্মিক সাধনার সাথে জ্ঞানধারার এই সমান্তরাল ও পরিপূরক গতি এর ভেতরেই দেখতে পাওয়া যায়।

পাশ্চাত্যের সমাজবিজ্ঞানীরা সংস্কৃতির আপেক্ষিকতার কথা বলেছেন। প্রায় দুই শতাব্দী আগে লালনের গানেই এর উল্লেখ পাওয়া যায়:

পাপ-পূণ্যের কথা আমি কারে বা শুধাই
এ দেশে যা পাপ গণ্য অন্যদেশে পুণ্য তাই
তিব্বত নিয়ম অনুসারে একনারী বহু পতি ধরে
এই দেশেতে হলে পরে ব্যভিচারী দন্ড হয়
দেশ সমস্যা অনুসারে ভিন্ন বিধান হতে পারে
সূক্ষ জ্ঞানের বিচার মতে পাপ পূণ্যের নাহি বালাই

লালনের এই গানে নানা ধর্ম ও জীবন চর্চা, প্রথা ও আচার সবকিছুই সংস্কৃতি নির্দিষ্ট এই উপলব্দিরই প্রকাশ ঘটেছে। এক সমাজে যা নিয়ম - প্রথা অন্য সমাজে তা অচল। সমাজের নানা বর্ণ, রং ও মানসিকতার মানুষের সহাবস্থান, সবধরণের স্বজাত্যবোধের উপরে উঠে যাওয়া জ্ঞান সাধনারই ফসল। মনমোহন দত্তের গানে আরো দেখি:

মনমোহন কয় পাগল পাগল
পাগলামী কি গাছের ফল
তুচ্ছ করি আসল নকল
সমান সকল তিতা মিঠা।

সাদা-রাঙা, ভালো-মন্দ, পাপ-পূণ্য, তিতা-মিঠা এইসব মূল্য যে একেকটি সাংস্কৃতিক নির্মাণ একজন লোকসাধক আধ্যাত্মিক জ্ঞান সাধনার ভেতর দিয়ে সেই বোধ অর্জন করেছিলেন। সব পাগলামীর প্রকাশকে শুধু মানসিক বৈকল্য রূপে বিবেচনা না করে লোকসমাজ এর মর্ম অনুসন্ধান করে এসেছে। বাঙালী সংস্কৃতিতে তাই পাগলের পাগলামী আধ্যাত্মিকতা ও জ্ঞান সাধনার অংশ রূপেই দেখা হয়েছে।