বায়তুল মোকাররমে সমাবেশের একাংশ

বায়তুল মোকাররমে সমাবেশের একাংশ

‘মুসলিমপ্রধান দেশে পুলিশ গুলি করে মুসলমান মারছে’

ছাড়পত্র ডেস্ক

প্রকাশিত : এপ্রিল ০৩, ২০২১

মুসলিমপ্রধান দেশে পুলিশ গুলি করে মুসলমান মারছে বলে মন্তব্য করেছেন হেফাজতের আমির আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী। শুক্রবার জুম্মার নামাজের পর হাটহাজারীতে বিক্ষোভে তিনি এ মন্তব্য করেন।

জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররম ও চট্টগ্রামের হাটহাজারীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করে হেফাজতে ইসলাম। ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী, শুক্রবার জুমার নামাজের পর দেশজুড়ে এই বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়।

হাটহাজারীতে বিক্ষোভে হেফাজতের আমির আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী বলেন, “এই দেশ মুসলিম প্রধান দেশ। এ দেশের পুলিশ গুলি করে নিরীহ মুসলমান হত্যা করবে, এটি বরদাশত করা যায় না। দোষীদের তদন্তপূর্বক দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।”

 

এদিকে, রাজধানীতে বায়তুল মোকাররমে সমাবেশে হেফাজতের কেন্দ্রীয় ও মহানগরের নেতাকর্মীরা অংশ নেয়। এতে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় যুগ্ম-মহাসচিব জুনায়েদ আল হাবিব। তিনি বলেন, “আমার বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়া। সেখানে কোনো পুরুষ ঘরে থাকতে পারছে না। কিন্তু প্রকৃত অপরাধীকে গ্রেফতার করা হচ্ছে না। আবার যারা শহিদ হয়েছেন তাদের পরিবারের লোকজনদের হয়রানি করা হচ্ছে।”

তিনি আরও বলেন, “মামলা হলো, এত মানুষ গ্রেফতার হলো, কিন্তু প্রকৃত অপরাধীকে গ্রেফতার করা হলো না। যিনি মাদ্রাসায় হামলা করলেন, সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে ককটেল মারলেন, গুলি করে মানুষ হত্যা করলেন, তাদের কিছুই হচ্ছে না। স্থানীয় এমপি উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী ও তার বাহিনী ঘুরে বেড়াচ্ছে। তাদের গ্রেফতার করা হচ্ছে না। আমরা তাদের গ্রেফতার চাই।”

সমাবেশে বক্তব্য রাখেন হেফাজতের কেন্দ্রীয় যুগ্ম-মহাসচিব মুহাম্মাদ মামুনুল হক। তিনি বলেন, “দেশব্যাপী হেফাজত ইসলামের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালিত হচ্ছে। কেউ যদি চিন্তা করেন, বন্দুকের নল দিয়ে হেফাজত ইসলামকে শান্ত করে ফেলবেন, তাদের বলবো, আপনারা বোকার স্বর্গে বাস করছেন। আমি বিশ্ব মানবাধিকার কর্মীদের কাছে বলতে চাই, গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে বলতে চাই, যথাযথ তদন্ত করুন।”

তিনি আরও বলেন, “পুলিশি হেফাজতে থাকা আমার কর্মীদের ওপর হামলা করা হয়েছে। আমরা এসব হামলাকারীদের গ্রেফতারের দাবি জানাই। যারা আমাদের ওপর হামলা করেছে তারা কীভাবে এখনো প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে, আমি তার জবাব চাই।”

মুহাম্মাদ মামুনুল হক বলেন, “মাদ্রাসা থেকে ছুরি উদ্ধার করা হলো। এগুলো কিসের ছুরি সবাই জানি। দেশে কোরবানি হয়। এই কোরবানির কাটাকাটির জন্য এই ছুরিগুলো ছিল। এগুলো নিয়ে রাজনীতি করার কিছু নাই। মাদ্রাসা থেকে ছুরি উদ্ধার করে ছাত্রদের সন্ত্রাসী বানাতে চাচ্ছে। যেগুলো না হলে দেশের পশুপাখির গোশত হালালভাবে খেতে পারতেন না।”

তিনি আরও বলেন, “মিডিয়াগুলোর আরো দায়িত্বশীল হওয়া দরকার। যথাযথ ঘটনা তুলে ধরা আপনাদের দায়িত্ব। আর ভুলক্রমে সাংবাদিকদের ওপর হেফাজতের কিছু কর্মী হামলা করে থাকতে পারে। আমরা এজন্য কেন্দ্রীয়ভাবে দুঃখ প্রকাশ করছি। অপপ্রচার চালিয়ে হেফাজতকে রুখতে পারবেন না। হেফাজত কারও পক্ষে নয়। দেশের প্রয়োজনে, ইসলামের প্রয়োজনে হেফাজত মাঠে রয়েছে, থাকবে। তিনদিনে ২০ জন শহিদ হয়েছেন। প্রয়োজনে আরো রক্ত দেব।”

হেফাজতের সহকারী মহাসচিব সাখাওয়াত হোসাইন বলেন, “ভারতের মান রক্ষায় ২০ জন ভাইকে শহিদ করা হয়েছে। ৫০ বছর আগে পাকিস্তানি শাসকরা প্রাণ নিয়েছে। এখন ভারতীয় বাহিনীর জন্য রক্তে রঞ্জিত হলো বাংলাদেশ। নরেন্দ্র মোদিকে সুরক্ষিত রাখতে বাঙালির তাজাপ্রাণ কেড়ে নেয়া হলো।”

কেন্দ্রীয় নায়েবে আমীর মাওলানা আব্দুর রব ইউসুফী বলেন, “হেফাজতের নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করতে মসজিদ-মাদ্রাসায় তল্লাশি চালানো হচ্ছে। আইজিপিকে বলবো, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করেছে আওয়ামী লীগের হেলমেট বাহিনী, তাদের গ্রেফতার করুন। সাংবাদিকদের অনুরোধ করব, আপনারা বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশন করুন। মিডিয়ালীগ হবেন না।”

অধ্যাপক ড. আহমদ আব্দুল কাদের বলেন, “পুলিশ গুলি করে হেফাজতের নেতাকর্মীদের শহীদ করেছে। শহীদের রক্ত কখনো বৃথা যেতে পারে না। তারা মোদির বিরোধিতা করতে গিয়ে শহীদ হয়েছে। আর যুবলীগ-ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী হেলমেট বাহিনী মোদিকে রক্ষায় মাঠে নেমেছে।”

রাজধানীর এই বিক্ষোভ ঘিরে সতর্ক অবস্থানে ছিল আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। সমাবেশ ঘিরে দুপুর থেকেই মসজিদের উত্তর গেটের ভেতরে বিপুলসংখ্যক পুলিশ সদস্য অবস্থান নেয়। এছাড়া পুলিশ সদস্যদের উপস্থিতি চোখে পড়ে পল্টন মোড়, দৈনিক বাংলা মোড় ও এর আশপাশের এলাকায়। এছাড়া র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) ও গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সদস্যদের দায়িত্ব পালন করতে দেখা যায়। তবে কোনো ধরনের সংঘাত সংঘর্ষ হয়নি এই বিক্ষোভে। বিক্ষোভে অংশ নেয়া নেতাকর্মীরা স্লোগানে স্লোগানে মুখর করে রাখে সমাবেশ স্থল।