
মোদীর পদত্যাগের দাবি জোরালো হচ্ছে ভারতে
ছাড়পত্র ডেস্কপ্রকাশিত : আগস্ট ২৯, ২০২৫
নরেন্দ্র মোদী টানা তৃতীয়বারের মতো ভারতের প্রধানমন্ত্রী হন গত বছরের জুন মাসে। তার দল বিজেপি নির্বাচনে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পেলেও তেলুগু দেশম বা জনতা দল ইউনাইটেডের মতো শরিকদের সমর্থন নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকার গঠন করে।
কিন্তু তৃতীয় মেয়াদে তার শাসনকালে ৫ বছরের মধ্যে এখনো ১৫ মাস অতিক্রান্ত হয়নি, কিন্তু এর মধ্যেই দেশের বিরোধী দলগুলো জোরেশোরে মোদীর ইস্তফাও দাবি করতে শুরু করে দিয়েছে। লোকসভায় বিরোধী দলনেতা তথা কংগ্রেসের শীর্ষ নেতা রাহুল গান্ধী বেশ কিছুদিন ধরেই লাগাতার বলে চলেছেন, ২০২৪র যে সাধারণ নির্বাচনে জিতে নরেন্দ্র মোদী প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন সেই ভোটটাই হয়েছে আগাগোড়া ভুলে ভরা একটা ভোটার তালিকারভিত্তিতে।
আর এই ভুলটা যে নির্বাচন কমিশনের ইশারাতেই ইচ্ছাকৃতভাবে করা, সেই ইঙ্গিত দিতেও তিনি কোনো দ্বিধা করছেন না। বুধবার বিহারের মুজফফরপুরে নির্বাচনি সভা থেকে তিনি অভিযোগ করেন, বৈধ ভোটারদের ভোট কেটে আর জাল ভোটারদের নাম তালিকায় যোগ করেই মোদী ভোটে জিতেছেন। এ কাজে তাকে সাহায্য করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ আর দেশের নির্বাচন কমিশন।
কংগ্রেসের সঙ্গে অনেক বিষয়ে মতভেদ থাকলেও দেশের আর একটি বড় বিরোধী দল তৃণমূল কংগ্রেস কিন্তু এই প্রশ্নে রাহুল গান্ধীর পাশেই দাঁড়িয়েছে। ডিএমকে ও আরজেডির মতো দলগুলোরও সমর্থন পাচ্ছেন তিনি। তৃণমূলের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ নেতা অভিষেক ব্যানার্জী সাংবাদিক সম্মেলন করে দিনকয়েক আগেই বলেছেন, নির্বাচন কমিশন যদি মেনেই নেয় দেশের ভোটার তালিকায় প্রচুর অসঙ্গতি আছে এবং যেহেতু বর্তমান সরকার সেই তালিকার ভিত্তিতে করা ভোটে জিতেই ক্ষমতায় এসেছে, তাহলে সেই সরকারের কোনো বৈধতা ধাকতে পারে না।
সেক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী মোদী ও তার গোটা মন্ত্রিসভার পদত্যাগ করা উচিত ও লোকসভা অবিলম্বে ভেঙে দেওয়া উচিত, এই দাবিও তুলেছেন অভিষেক ব্যানার্জী। বিরোধীদের তোলা এই ভোট চুরির অভিযোগ ক্রমশই মোমেন্টাম` পাচ্ছে, আর তা দৃশ্যতই অস্বস্তিতে ফেলছে মোদী সরকারকে।
একটানা ১১ বছরেরও বেশি সময় ধরে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর পদে রয়েছেন নরেন্দ্র মোদী। তবে এর আগে দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির আর কোনো বিষয় তাকে এতটা বিব্রতকর অবস্থায় ফেলেনি। বিজেপি যদিও রাহুল গান্ধীর তোলা ভোট চুরির অভিযোগ অস্বীকার করেছে, কিন্তু বিহারসহ বিভিন্ন রাজ্যে ভোটার তালিকায় যে ব্যাপক সংশোধন (এসআইআর) দরকার, সেই দাবিতেও সমর্থন জানাচ্ছে তারা।
জাতীয় নির্বাচন কমিশনও মেনে নিয়েছে, কোনো কোনো রাজ্যের ভোটার তালিকায় প্রচুর ভুয়া নাম আছে, সেগুলো বাদ দিতেই এসআইআর বা বিশেষ নিবিড় পর্যালোচনা প্রয়োজন। সোজা কথায় তালিকায় কাটছাঁট করা দরকার। বিহারে নভেম্বরে ভোট হওয়ার কথা। তার আগে সে রাজ্যে কমিশনের পক্ষ থেকে যে এসআইআর চালানো হয়েছে তাতে প্রাথমিকভাবে ৬৫ লাখেরেও বেশি ভোটারের নাম বাদ পড়েছে।
বিরোধীরা এ কারণেই প্রশ্ন তুলছেন, বিহার বা পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচন তালিকা ভুল। কিন্তু মহারাষ্ট্র বা গুজরাটের ভোটার তালিকা নিখুঁত, এটা কীভাবে হতে পারে? ২০২৪-এ ভারতের সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে ত্রুটিপূর্ণ ভোটার তালিকার ভিত্তিতে, এই ধারণা যতই প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে ততই নরেন্দ্র মোদীর ইস্তফার ও লোকসভা ভেঙে দেওয়ার দাবি জোরালো হচ্ছে।
কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী দিন দশেক আগে বিহারে তার ভোটার অধিকার যাত্রা শুরু করেছেন, যার অংশ হিসেবে ১৩০০ কিলোমিটার দীর্ঘ যাত্রাপথে তিনি বিভিন্ন জেলায় পদযাত্রা ও সমাবেশ করছেন।
বুধবার বিহারের মুজফফরপুরের সমাবেশে তিনি বলেন, “এই ভোট চুরির প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে গুজরাট থেকে, যখন নরেন্দ্র মোদী ওই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন। ২০১৪ সালে সেই মডেল গুজরাট থেকে জাতীয় স্তরে আমদানি করা হয়। আমি বলবো গুজরাট মডেল কোনো অর্থনৈতিক মডেল নয়, এটা হলো সোজাসুজি ভোট চুরির মডেল।”
তিনি আরও বলেন, “প্রধানমন্ত্রী মোদী জাতীয় স্তরেও যতগুলো ভোটে জিতেছেন (২০১৪, ২০১৯, ২০২৪) তার সবগুলোতেই এই মডেলের আশ্রয় নিয়েই জিতেছেন। দু’আড়াই বছরের মধ্যে মধ্যপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র বা গুজরাটে যে সব বিধানসভা ভোট হয়েছে এবং ২০২৪-এ যে লোকসভা ভোট হয়েছে, সেগুলোর সবই চুরি করে বিজেপিকে জেতানো হয়েছে এবং নির্বাচন কমিশন তাতে সহযোগীর ভূমিকায় ছিল।”