মোহাম্মদ রোমেল

মোহাম্মদ রোমেল

মোহাম্মদ রোমেলের কবিতা ‘পর্নোগ্রাফিক নগর’

প্রকাশিত : এপ্রিল ০৯, ২০২১

গ্রাম ঢুকে পড়ছে; খোপ খোপ ভিন্ন ভিন্ন রূপনগরে
ঢুকে পড়ছে মাছের ঝাঁকের লাহান;
কিম্বা
শিকারি শহর হাজির
সভ্য জাদুর বারুদ-বন্দুক হাতে৷

তোমাকে আলিঙ্গনে চুমুতে চুমুতে নিত্য লেঙটা করছে সভ্যতা
শরীরের প্রতিটা লোমকোষে চুমু খেতে খেতে সওদাগর দাঁত বসাচ্ছে৷

আহা!
ভেজাল আলো-বাতাস-পানি-মাটি-রক্ত-রঙ এবঙ
কাচ-দেয়ালের পরতে পরতে প্রিয় সওদাগর!

অসুখ-ওষুধসহ প্রিয় ডক্টর-ডাক্তার উকিল
শরীরে কল্যাণ-সেবায় হামলে পড়ছে৷

দ্যাখো, গোটা শরীরে যুদ্ধ,
অলিতে গলিতে যুদ্ধ,
অক্ষরে অক্ষরে যুদ্ধ;
যুদ্ধ সর্বত্র।

মনে হচ্ছে,
যুদ্ধে-যুদ্ধের ভালো খারাপ কিছু নেই৷
যুদ্ধই ইতিহাস;
নবজাতকের মতো জন্মে গিয়ে বাপকে শেখায় যুদ্ধ— `ধর্ম`৷

এমন জেনে না-জেনে
শরীরগুলো যুদ্ধে ভীষণ ব্যস্ত আজ৷

হার-জিতের এই যুদ্ধে
প্রেমিকাও তোমাকে যুদ্ধে পরাজিত ভেবে প্রেমের নামে শরীর বেঁচে দিয়ে শরীর বদলায়৷

আহা! আমাদের দাস মনের শিল্পপ্রেম;
অসুখি মনের ফাঁপর থেকে তৈয়ারি হওয়া শিল্পে
নিজের গল্পে, নিজের সিনেমায় বেঁচবে নিজেকে৷
টিভি পর্দায় নিজের ভেসে ওঠা শরীর দেখে দেখে প্রিয় বিজ্ঞাপিত
নিজেই হয়ে উঠবা প্রিন্টিং প্রেসের অমরত্বের কাঁচামাল৷

লেঙটা মনের লেঙটা চাহিদা তোমাকে লেঙটা করে কাঁচামাল বানায়,
কর্পোরেট ব্র্যান্ডিং প্যাকেজে মোড়ানো এমন প্রোডাক্ট; নগরে শিল্পমাত্র৷

সর্বব্যাপী বেচাবিক্রির হাটবাজারে তোমার উদোম শরীর
পর্নোগ্রাফিক সৌন্দর্যে উন্মাদ হয়ে উঠেছে৷

এই পর্নোগ্রাফিক নগরে; গ্রামীণ শরীর ঢুকে পড়ে কিছু হারালো কি!
নাকি আটকে গেল; মহান বৈষয়িকতার আর্টে!
যেমন মেশিনে মরিচ ঢোকে, ফাঁকি হয়ে রূপ-রং বদলায়
এমন বদলায় কি নগরে মানুষ!

পাঁচতারা নয়নতারা পতিতাখানায় কত কিছুরই তো বদল ঘটে!
মন্টু মিয়ার রিকশাঅলা-মুড়িঅলা-কলাঅলা বাদামতুলির
মায়েশার কাছেও খদ্দর রূপে বদল হতে হয়!
হাসপাতালে কত শিশু জন্মে বাপের মরা মুখ দেখে!
গ্রেনেট-বোমা-গুলি-বুলির বদলে মানুষ কি বদলায় এই শহরে!

নগরে নাগরের শরীর হাওয়াই মিঠার হাওয়া হয়ে
নানান শরীরে নানান স্বাদের তিতা বিলায়৷

স্মৃতির ব্যাংকে নিজেকে জমা রেখে
`প্রেম` হয়ে ওঠে অন্য শরীরে— `গত হয়ে যাওয়া প্রেমিকা৷’

একই শরীর; শরীর বদলে প্রেমের বোরখায় ঢাকতে চায় স্মৃতি,
প্রেমিক-প্রেমিকা খসে পড়ে
খসে না প্রেম; খসে না স্মৃতি৷

অক্ষয় স্মৃতি-প্রেমের আড়ালে
অন্য শরীরে কতটা নিখাঁদে নিশিতে অতীত ভুলে থাকা যায়?

তুমি ভুলে থাকো অতীত; থাকো বিশুদ্ধ শরীরে।
পর্নোগ্রাফিক নায়ক-নায়িকার শরীর বদলের মতো
তুমিও বদলে যাও শরীরে শরীরে।

দ্যাখো, যোনি-শিশ্নের ঘষাঘষির এই কসমেটিক সময়ে
তোমার শরীর দখলে নিচ্ছে বিউটি ইন্ডাস্ট্রির রাজনীতি।

চোখের ভিতর নানান চোখ
ঘাতক প্রেমিকের মতো তাকায়
ভিন্ন ভিন্ন বাসরে৷

চামড়ায় বাহারি রঙের পসরা
অপরিচিত করে চেনা মুখ৷

আঁধার রাতের মতো কুচকুচে চুল
চাওয়ার মতো হয়ে
নানান বাঁকে বেঁকে যায়৷

ভালো লাগছে; লাগছে না বলে বলে বেঁকে যায়
আলগা করে আটকে থাকা মেকাপ বহুল বাহু৷

পর্নোগ্রাফিক নাগরিক ফ্রেমে চোখ ভেসে আছে, লেগে আছে
পর্দার বাইরে শহরময় পর্নোগ্রাফিক দেয়ালে-অক্ষরে,
দৈনিক পত্রিকার প্রতিটি অক্ষর পর্নোগ্রাফিক লাগে ৷

কবির লগে কবিতার লগে গল্পে গল্পে বুঝে গেছি,
প্রেম নয়; পর্নোগ্রাফিক সময়৷

এই পর্নোগ্রাফিক জীবন; নতুন জীবন, নগরে ঢুকতে থাকা গ্রাম৷

নদীতে নতুন চরের মতো মানুষের জেগে ওঠার আকুতি দেখে
তোমার কথা মনে পড়ে৷

মনে পড়ল তাদের কথা;
যারা ইতিহাসের নানান গল্প পেড়ে আমাকে শুনিয়েছিল—
এমন পর্নোগ্রাফিক নগরে তাদের অস্থির লাগে৷
জমিনদারির গ্রামে নয়;
তারা ফিরতে চায় গ্রামে৷

আমাকে বোকাচোদা ভেবে কিচ্ছু জিগায়নি৷

তোমার-আমার ক্ষরণ; ঢেউয়ে ভাঙা নদীর ক্ষরণের মতো সরল৷

তুমি যাও৷
আমি কোথাও ফিরব না সহজ প্রেম ছাড়া৷