‘যা আত্মস্থ করতে পেরেছি তা হচ্ছে, ধৈর্য’

রেইমন্ড কারভার

প্রকাশিত : মে ০১, ২০১৯

রেইমন্ড কারভারের `আর্ট অব ফিকশন` (প্যারিস রিভিউ) সাক্ষাৎকার থেকে। ভাষান্তর করেছেন এমদাদ রহমান।

প্রশ্ন: আপনার লেখার অভ্যাস বা পদ্ধতিটি কেমন? আপনি কি সবসময় গল্প নিয়ে কাজ করেন?

রেইমন্ড কারভার: আমি যখন লিখি, মানে গল্প লিখতে শুরু করি, তখন প্রতিদিন লিখি; টানা লিখে যাই, আর এমনটা যখন ঘটে, প্রতিদিন একটানা লিখে যাওয়াটা আমার বড় ভাল লাগে। এভাবে আজকের দিনটি পরের দিনটির সঙ্গে জোড়া লেগে যায়; মাঝে মাঝে আমি লেখার এমনি এক ঘোরের মধ্যে থাকি যে ভুলেই যাই আজ সপ্তাহের কোন দিন, শনি না মঙ্গল; জন অ্যাশবারি হয়তো একেই `দিনরাত্রির প্যাডল-হুইল` বলেছেন! আর আমি যখন কিছুই লিখছি না, এই দিনগুলোর মতো, যখন কিছুই লেখা হচ্ছে না, তখন আমাকে দেখে মনে হবে আমি জীবনে কখনও একটি শব্দও লিখিনি কিংবা লেখার কোনও আকাঙ্ক্ষা কোনও কালেই আমার ছিল না! আমি তখন বাজে কিছু অভ্যাসের দাস হয়ে যাই। ঘুমোতে যাই দেরি করে। ঘুম ভাঙে বেলা বহুদূর গড়ানোর পর। কিন্তু এখন আমি ঠিক হয়ে গেছি, সব কিছুই ঠিকঠাক চলছে। এখন আমি জানি কীভাবে কোনও কিছুকে ধৈর্য ধরে সহ্য করতে হয় আর কীভাবে নিজের সময়কে অনুকূল পরিস্থিতিতে কাজে লাগাতে হয়।

দীর্ঘ জীবনে যা আমি আত্মস্থ করতে পেরেছি তা হচ্ছে, ধৈর্য। আমি যদি বিভিন্ন প্রতীকে বিশ্বাসী হতাম, তাহলে মনে হয় আমার সবচে প্রিয় প্রতীকটি হতো কচ্ছপ। আমি লিখি অতি সাধারণ লেখার নিয়মে কিন্তু যখন লিখতে শুরু করি, তখন ঘণ্টার পর ঘণ্টা লেখার টেবিলেই ডুবে থাকি, দশ, বারো কিংবা টানা পনের ঘণ্টা। এভাবে দিনের পর দিন চলে যায়। এই নিয়মটিই আমি পছন্দ করি, যখনই এমন কিছু ঘটতে থাকে। আর বেশিরভাগ সময়ই লেখাটিকে বারবার পড়ি, ঘষামাজা করি, আবার লিখি, আবার কাটি, আবার লিখি— এভাবে কাজ চলতে থাকে। থেমে যাওয়ার কিংবা বিরতি নেওয়ার কিছু থাকে না এখানে। কিছু লিখে ঘরের মধ্যে কিছুক্ষণ পায়চারী করা, তারপর আবার লিখতে শুরু করা— এসব আমার অভ্যাসে নেই। কবিতা লিখবার বেলাতেও আমার এমন ঘটে।

লেখা শেষ হওয়ামাত্রই ছাপানোর জন্য তাড়াহুড়ো করি না, মাসখানেক সময় ধরে লেখাটি নিয়ে ভাবতে থাকি, লেখার ঘরে অবিরাম পায়চারী করি, হঠাৎ নতুন কিছু মাথায় আসে, তখন সেটা লিখি; এভাবে গল্পটির প্রথম খসড়া তৈরি হতে বেশি সময় লাগে না, এক বসাতেই হয়ে যায়, তখন আবার একই গল্পের বিভিন্ন সংস্করণ তৈরি করি, গল্পের বিভিন্ন সংস্করণে বেশ কিছুটা সময় লেগে যায়। আমি এক একটি গল্পের কমপক্ষে বিশ বা ত্রিশটি খসড়া করি, কখনও এতটা হয় না, তবে দশ থেকে বারোটি খসড়ার কম কিছুতেই নয়। মহান লেখকদের লেখার খসড়ার কথা ভাবলেও অবাক হই। তাদের কাছ থেকে শিখবার বহু কিছুই আছে। তলস্তয়ের কথা ধরুন, এমন এক লেখকের নাম তলস্তয়, যিনি অবিরাম নিজের লেখার কাটাছেঁড়া করতেন, আর এ কাজটা করতে তিনি পছন্দ করতেন; আমি কিন্তু সঠিক করে বলতে পারছি না যে তিনি সত্যিই নিজের লেখার বারবার সংশোধন করতে ভালবাসতেন কি না কিন্তু আমরা গ্যালিপ্রুফের যে আলোকচিত্রগুলো দেখেছি তা থেকে জানতে পারি `যুদ্ধ ও শান্তি` উপন্যাসটিকে তিনি পুনর্লিখন করেছেন সর্বমোট ৮ বার, হয়ত আরও কয়েকবার করতেন! প্রত্যেক লেখককে লেখালেখির কঠিন পথে এগিয়ে যেতে সবচে বেশি উৎসাহিত করে তাই, যাদের লেখার প্রথম খসড়াটি হয় একদম নীরস, খুব বাজে আর ভয়ঙ্কর, যেমন আমার...