তসলিমা নাসরিন

তসলিমা নাসরিন

যুক্তিবুদ্ধির য-ও এই প্রজন্মের মাথায় নেই

তসলিমা নাসরিন

প্রকাশিত : আগস্ট ১৯, ২০১৯

ছেলেদের জ্বালায় জিমে ঢোকা যায় না, মেশিনই খালি পাওয়া যায় না। ইয়াং ইয়াং ছেলে, ২২ /২৩ বা বড়জোর ২৪/২৫ বছর বয়স, পাগলের মতো ব্যায়াম করছে, ঘণ্টার পর ঘণ্টা জিমে পড়ে থাকছে। সিক্স প্যাকের নেশায় পেয়েছে এদের। শরীরে এক ফোঁটা চর্বি নেই, কোনও অসুখ বিসুখ নেই, কিন্তু মাসল বানাবে। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের শক্ত শক্ত ফোলা ফোলা মাসল দ্যাখে আর আনন্দ পায়। পারলে ২৪ ঘণ্টা এরা পড়ে থাকে জিমে। যে বয়সটায় বই পড়বে, ভ্রমণ করবে, সমাজের নানা বিষয়ে আলোচনা করবে, শিল্প, সাহিত্য, নাটক সিনেমা, বিজ্ঞান, রাজনীতি, সমাজনীতি, অর্থনীতি, নারীবাদ, সাম্যবাদ, পুঁজিবাদ, ইতিহাস ভূগোল, অধিকার আন্দোলন ইত্যাদি নিয়ে মেতে থাকবে, সেই বয়সটা জিমে শেষ করছে। ফিল্মের নায়কদের ছবি দেখে, আর স্বপ্ন দেখে ওদের মতো শরীর বানানোর। নায়কগুলো অভিনয়ের অ-ও জানে না, তাই মাসলই তাদের ভরসা।

আর এই প্রজন্মেরও মনে হচ্ছে যুক্তিবুদ্ধির য-ও মাথায় নেই, মাসলই ভরসা। কুসংস্কারে আচ্ছন্ন, কিন্তু চমৎকার শরীর চাই। জিম ভালো জিনিস। ব্যায়াম করলে শরীর সুস্থ থাকে। কিন্তু তার জন্য একট বয়স আছে। তার জন্য একটা সময়ও আছে। শরীর শরীর শরীর। আগে ভাবতাম, মেয়েরাই বুঝি শরীর নিয়ে অবসেসড। এখন দেখছি ছেলেরাই বেশি। আজকাল তো পারলারেও ছেলেরা ম্যানিকিওর পেডিকিওর, ফেসিয়াল ইত্যাদি করতে ঢুকছে। পারলারেও বোধহয় একসময় জিমের মতো ছেলেদের ভিড়ই বেশি হবে। পারলারেও হয়তো ছেলেদের জ্বালায় ঢোকা যাবে না। সব চেয়ারগুলো ওরাই দখল করে বসে থাকবে।

মেয়েদের ব্যায়াম, মেয়েদের সাজগোজ সবই ছেলেরা দখল করে নিচ্ছে। সংসারে মেয়েদের কিচেনটা কবে দখল করবে? ঘরদোর সাফ করার, বাচ্চাকাচ্চা লালন করার কাজটা কবে দখল করবে? ওগুলো দখল করলে তো একটা কাজের কাজ হয়।

তসলিমা নাসরিনের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে