রমজানে রোগীদের খাদ্যাভ্যাস

ছাড়পত্র ডেস্ক:

প্রকাশিত : মার্চ ৩১, ২০২৪

পবিত্র রমজান মাসে প্রতিটি মুসলমান নারী-পুরুষের জন্য রোজা রাখা ফরজ করা হয়েছে। তবে বিভিন্ন কারণে অনেক অসুস্থ ব্যক্তি রোজা রাখতে পারেন না।

রোজায় দীর্ঘ একটা সময় খাবার খাওয়া ও পানি পান থেকে বিরত থাকতে হয়। আর এই দীর্ঘসময় না খেয়ে থাকার কারণে বিপাকে পড়তে হয় বিভিন্ন রোগে আক্রান্তদের। আর তাই রোজার সময় খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তনে নিজেকে অভ্যস্ত করে তুলতে হবে।

এখানে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত রোগীদের রোজার সময় খাদ্যাভ্যাসের কিছু তালিকা দেয়া হল।

রোজা রেখে মুখে দুর্গন্ধ হলে করণীয়রোজা রেখে মুখে দুর্গন্ধ হলে করণীয়
রমজানে ডায়াবেটিস রোগীর খাদ্যাভ্যাস
ডায়াবেটিসে আক্রান্তদের এমনিতেই বিভিন্ন খাবারে বিধিনিষেধ থাকে। তাই তারা রমজানে কী খাবেন আর কী খাবেন না, তা নিয়ে অনেকে দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভোগেন। তাই ডায়াবেটিস আক্রান্তদের শারীরিক অবস্থা বুঝে পুষ্টিবিদের পরামর্শে খাদ্যতালিকা প্রস্তুত করা জরুরি।

ডায়াবেটিস রোগীদের রোজা রাখতে হলে তার তিন মাসে আগে থেকে সুগার কন্ট্রোল থাকা উচিত। নইলে হাইপোগ্লাইসেমিয়া হওয়ার আশঙ্কা থাকে। আর যাঁদের সুগার কন্ট্রোল থাকে তাঁরা নিয়ম মেনে রোজা রাখতে পারবেন।

ডায়াবেটিস রোগীদের ইফতারে ঘন শরবতের বদলে পাতলা করে শরবত খেতে হবে। ডাবের পানি, ইসবগুলের ভুসি, টক দইয়ের লাচ্ছি, চিনি ছাড়া লেবুর শরবত ইত্যাদি খেতে পারেন তারা। এ ছাড়া ইফতারে ছোলা, দই-চিড়া, নরম খিচুড়ি, লাল আটার রুটি, লাল চালের ভাত, মিক্সড ফল বা ফলের সালাদ খেতে পারেন। তবে অবশ্যই ডালের তৈরি খাবার একের অধিক খাবেন না।

সাহরিতে প্রোটিনযুক্ত খাবার, যেমন মাছ, মুরগি, ডিম খাওয়া ভালো। তবে গরুর মাংস, ডাল না খাওয়াই উচিত। তবে সাহরিতে দুধ খেলে ডাল খাওয়ার প্রয়োজন নেই।

কিডনি রোগীদের রমজানে খাদ্যাভাস
চিকিৎসকদের তথ্যমতে যারা দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগী কিন্তু কোনো জটিলতা নেই তারা রোজা রাখতে পারবেন। তবে তাদের প্রোটিন জাতীয় খাবার যেমন- মাছ, গোশত, ডিম, দুধ এগুলো পরিমিতভাবে খেতে হবে। যাদের রক্তে পটাশিয়াম বেশী তারা শাকসবজি পটাশিয়াম মুক্ত করে খাবেন ও ফল সীমিত পরিমাণ খাবেন। যাদের শরীরে অতিরিক্ত পানি আছে বা শরীর ফোলা তারা একবারে অনেক বেশি পানি খাবেন না। সাহরির সময় ভাত-রুটি, মাছ-গোশত, ডিম, দুধ পরিমিত খাবেন । ইফতারের সময় খেজুর, চিঁড়া, দই, ডিমের পুডিং, সেমাই, পায়েস ঘরে রান্না করা খাবার খাবেন।

তবে এসব রোগীদের পিয়াজু ও ভাজাপোড়া খাবার, অতিরিক্ত তৈলাক্ত খাবার, ঝাল-মসলা পরিহার করতে হবে।

রমজানের যে অভ্যাসগুলো ধরে রাখা উচিতরমজানের যে অভ্যাসগুলো ধরে রাখা উচিত
রক্তস্বল্পতার রোগীদের রমজানে খাদ্যাভাস
রোজায় দীর্ঘসময় না খেয়ে থাকার কারণে বিপাকে পড়তে পারেন রক্তস্বল্পতা বা অ্যানিমিয়ার রোগীরা। এতে করে অ্যানিমিয়ার রোগীদের দুর্বলতা, মাথাব্যথা, মাথা ঘোরা, চোখে অন্ধকার দেখা, অল্প পরিশ্রমে হাঁপিয়ে ওঠা সমস্যাগুলো বেড়ে যায়।

আর তাই এসব সমস্যা কাটিয়ে রোজা রাখার মতো ফরজ কাজটি করতে ডায়েটে বিশেষ কয়েকটি খাবার রাখা উচিত।

অ্যানিমিয়া রোগীদের গরুর কলিজা, দুধ, মাছ, ডিম বেশি করে খাওয়া উচিত। কারণ এসব খাবারে প্রচুর পরিমাণে আয়রন ও প্রোটিন থাকে যা শরীরে রক্ত ও শক্তি যোগাতে সাহায্য করে। এছাড়া প্রতিদিন ইফতারে আয়রনযুক্ত ফল যেমন: আপেল, টমেটো, বেদানা, কলা, আঙুর, কমলা, গাজর ইত্যাদি খেলে রক্তশূন্যতা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।

সাহরি ও রাতের খাবারে আয়রনযুক্ত শাকসবজি এবং ডাল খাওয়া উচিত। বিশেষ করে কচুশাক, কচুর লতি, কচু, পালং শাক, বিট, লেটুস খাবারগুলোতে আয়রনের পাশাপাশি ফলিক অ্যাসিড আছে।

হাই প্রেসারের রোগীদের রমজানে খাদ্যাভাস
হাই প্রেসার বা উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের ইফতারে যতটা সম্ভব লবণ কম খেতে হবে। এছাড়া ডুবো তেলে ভাজা-পোড়া না খাওয়াই শ্রেয়। খুব বেশি মিষ্টি খাওয়া যাবে না। এ সময় ম্যাগনেশিয়াম ও পটাশিয়ামের জন্য ফল বা বিভিন্ন ফলের সালাদ খেলে উপকার হবে। ইফতার অথবা সেহরিতে যেকোনো মাছ খেতে পারলে ভালো হয়। ডিম দুইটির বেশি খেলে একটির কুসুম বাদ দিতে হবে। এছাড়া তিন বেলার খাবারে তেল কম থাকতে হবে।

বাত-ব্যথার রোগীদের রমজানে খাদ্যাভাস
বাত-ব্যথার রোগীদের ইফতারের খাবারে ছোলা, পেঁয়াজু, বেসন, হালিম অর্থাৎ ডাল জাতীয় খাবার বাদ দিতে হবে। শরবতের পাশাপাশি চিড়া, মুড়ি, খই, ময়দা-আটা ও চালের গুঁড়ার তৈরি খাবার খাওয়া ভালো। কারণ ডালের পিউরিন বাত-ব্যথাকে বাড়িয়ে দেবে। ক্যালসিয়ামের জন্য দুধ-মুড়ি, দুধ-সেমাই, পায়েশ, দই-চিড়া, দুধ-সুজি খাবেন। এছাড়া সন্ধ্যা রাতে ও সেহরিতে যতটা সম্ভব মাংস কম খেতে হবে। ডিম খেলেও কোনো ক্ষতি নেই।