রহমান মুফিজ

রহমান মুফিজ

রহমান মুফিজের কবিতাগুচ্ছ

প্রকাশিত : নভেম্বর ১২, ২০১৯

অনিদ্রা, তোমাকে

অনিদ্রা কখনো বুড়ো হয় না।
প্রথম যৌবনের কবোষ্ণ অনুভবের মতো
উত্তেজনা নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে চোখের কাছে।

বয়স বেড়ে গেলে চোখও জেনে যায়— কী বিচ্ছিরি ঘুমের মেদ;
বয়স বেড়ে গেলে বিস্মৃত স্পন্দনগুলো জেগে ওঠে রক্তে;
ওরা নিদ্রাকে করে তোলে বেদম বাউণ্ডুলে
নিস্তব্ধতাকে করে তোলে দেবাসন; তখন বুদ্ধের
নিঃশ্বাসের মতো অতল পুণ্য হয়ে ওঠে মানুষের দেহ!

মানুষের দেহ? না না, মানুষের দেহ নয়;
যে অনিদ্রা নিস্তব্ধতার সশব্দ আলিঙ্গনকে করেছে প্রণাম
সে-ই হয়ে ওঠে পরিণত পুণ্য;

(অতঃপর তুমি কোন কোন অনিদ্রাকে অস্বীকার করবে?)

১১.১১.২০১৯
বৈঠাখালি, ঢাকা

জন্ম বা জন্মান্তরের কাছে

প্রথম নিষিক্ত হয়েছিলাম তোমার ছায়ার ভেতর
এরপর তোমারই গন্ধ হয়ে জন্মেছি বহুবার
শুক্রপরিচয় যদি চাও, তবে একটা মামুলি
‘আনন্দ’ ছাড়া আর কিছুরই হদিস পারবো না দিতে।

মূলত আমার পিতা বলে কিছু নেই, একরাশ আগুনের
অনাদি পুলক থেকে প্রথম একটি শব্দ তোমার ছায়া
স্পর্শ করেছিল। তার শোভাযাত্রা দেখতে দেখতে
তুমি শৃঙ্গারে মাতাল হয়েছিলে, আর তের সমুদ্র পার হয়ে
আমি লুটিয়ে পড়েছি নিজেরই চেতনার কাছে।
কোনো দুঃস্বপ্ন যেন জাগিয়ে দিয়ে গেছে এই খররৌদ্রে!

মনুষ্যজন্ম আমি চাইনি। যা চাইনি তা আমার জীবন নয়।
একটা পথ হয়ে জন্মাবো বলে ঘুমিয়ে থাকি এখনো...
একটা পথে তুমি হাঁটবে বলে আকাঙ্ক্ষার বিলি কাটি
আরো একটা গন্ধ হয়ে জন্ম নেব, তাই শুধু লুকিয়ে থাকি।

২৩.৩.২০১৯
বৈঠাখালী, ঢাকা

 

পাপ

এই রক্ত প্রবাহের কাছে কখনো জন্মেনি পাপ
কখনো আসেনি দীর্ঘশ্বাস দুরন্ত জীবনে

১৩.২.২০১৯
বৈঠাখালী, ঢাকা

কলকব্জা থেকে একটু দূরে আমাদের হৃদয়

তোমাকে খুঁজতে গিয়ে একটা লাল ফিতের চাঞ্চল্য
হাওয়ায় উড়তে শুরু করলো। একটা কোমল শরতের গ্রীবার
কাছে আটকে রইলো তিনশো বছরের পুরনো বেণী।

কিশোরী হাসির মতো স্মৃতির শহর প্রতিদ্বন্দ্বী যুবকের বুকে
জাগিয়ে তুললো সশস্ত্র শিহরণ, অলক্ষ্যের ঈর্ষা আমাদের
করে তুললো তুমুল জুয়াড়ি; সম্পর্ক হয়ে গেল গাঢ় আলিঙ্গন

তোমাকে খুঁজতে গিয়ে হঠাৎ থিতু অভিজ্ঞতা—
মফস্বলের রতিগন্ধী বিকেলের কাছে নতজানু এক
কসমোপলিটন যেনবা মেলে ধরলো আপন আস্তিন।
সতীর্থ শহরেরা একে একে বিবমিষার স্মৃতি হয়ে গেল
সুগন্ধ ছড়িয়ে একটা বেয়াড়া রিকশা শ্রুতিশোভন জলতরঙ্গ
বাজিয়ে চলে গেল বুকের ওপর!

সে কি জানলো, কলকব্জা থেকে একুট দূরে আমাদের হৃদয়...
এখনো কিছু অনুভূতি অবয়ব পায় অযথা আন্দোলনে?

১৫.১০.২০১৮
বৈঠাখালী, ঢাকা

সুবহে সাদেকের ঘোড়া
প্রিন্সিপ্যাল স আ ম শামসুল হুদা চৌধুরী স্মরণে

এখনো জেগে থাকি; চৈতন্যে তাঁর সঙ্গোপন সভা; মগ্ন
রাতেদের পাড়ায় পায়চারি করেন দিনলোভা কৃষক এক

তিনি হেঁটে আসেন, খাড়া টুপির নিচে পুরে রাখেন বঙ্গোপসাগর
বদরমোকাম থেকে সদর মোকাম— পায়ে পায়ে রেখে যান
নিটোল সভ্যতা; আমাদের যন্ত্রণাদগ্ধ উর্বর মূর্খতা উবে যায়
তাঁর শরণে বয়ঃপ্রাপ্ত হয় সাহসের ধারাপাত।

তিনি হেঁটে আসেন, জীবনের অতুল ফসফরাস জেগে ওঠে
শহর চমকায়! শেখ সাদির জোব্বার মতোন অন্ধকার ফুঁড়ে
মাথা তুলে তাকায় সুবেহ সাদেকের ঘোড়া। কই যান মহামহিম?

কোথাও যাই না তো। আলোর তরবারি হাতে শাসন করি অন্ধকার...

৫.৯.২০১৮
বৈঠাখালী, ঢাকা

মৌমিতার জন্মদিনে

যে মেয়েটা গ্যাস্ট্রিকের ব্যথা নিয়ে প্রেমিকের কানে নিঃশ্বাস রাখে আর শুকনো ঠোঁটে জিহ্বার প্রলেপ লাগিয়ে ভিজিয়ে রাখতে চায় পূর্বাহ্নের জীবন, তার গল্পগুলো তোমার নয়।

তুমি দিনান্তের ক্লান্তি নিয়ে জেগে থাকা রাত; রাতের শিরায় মুদ্রিত চোখ, চোখের শিরায় তুমি; তোমার করুণ বন্দিত্ব উপভোগ করতে করতে রাতও একা বন্দি হয়ে যায়—

বহুগামী সন্ধ্যার কাছে প্রতিবার দাঁড়িয়ে থেকে যে তুমি গুটি গুটি পায়ে বাড়ি ফেরো আর নিজের কাছে গোপন করো নিজের ইচ্ছাগুলো— সেটাই তুমি। অথচ তোমার হাতে কী সুন্দর ডানা মেলে আমাদের ভাগ্যরেখা! তোমার সুন্দর মিথ্যেগুলো আমাদের জাগিয়ে রাখে জীবনে। সে মিথ্যা পবিত্রতম, খুনসুটির চেয়ে অধিক আত্মঘাতি।

এর চেয়ে সুন্দর গল্প তোমার আছে নাকি? কই কখনো বলোনি তো। কী-ই বা বলেছো কখন কাকে? নৈর্ব্যক্তিক ক্যালেন্ডারে তোমার জন্মদিন বলে কিছু থাকা উচিত নয়। জন্মদিন তোমাকে প্রকাশ্য করে দেবে যে...

১৯.৬.২০১৮
বৈঠাখালী, ঢাকা