
রহমান হেনরী
রহমান হেনরীর ৩ কবিতা
প্রকাশিত : মে ২৯, ২০২৫
জ্যোৎস্না ঋতু
ধান মলনের চাঁদ উঠলো মেঘ-ফাটানো রাতে
চল সোনালি, মাড়াই করি— স্বর্ণময়ীর ধান—
জিহ্বাখসা মিথের ভিতর বাজলো মধুর গান
জ্যোৎস্না-ঢেউয়ে পদ্মপুকুর জাগলো অকস্মাতে
বৃদ্ধ শিমুলগাছের পিছে অন্ধকারের লাশ
লুকাতে চায়; তাকেও দেখি: কেমন শক্তি ধরে
ভয়ের ভিতর বাস করেছি: ভয় কী রে অন্তরে?
হালছড়িটা সঙ্গে রাখিস আরও কয়েক মাস—
আঁধার ও ভয় পালাচ্ছে দেখ, চড়ার দিকে, দূরে—
জাগার কোনও সময় তো নাই— রাত্রি কিবা ভোর
জ্যোৎস্না-ম্যাজিক ফুটলো বিশাল বঙ্গভূমি জুড়ে
লেজ গুটিয়ে পালাচ্ছে তোর-আমার সুদিন চোর
চোর-তাড়ানোর চাঁদ ফুটছে, আকাশভরা আলো
হত্যাকারীর পেটের ভিতর প্লীহা তো চমকালো
রাত্রিপুরাণ
অন্ধকারে দুয়ার-হারা বাড়ি
ফুঁপিয়ে কাঁদছে— পথে
বনের ভেতর, রাজার ঘোড়াগুলো
ফেঁসেছে— দ্বৈরথে।
(সেই) আগুনে ও শীতে
তেইশ কোটি সাপের কুণ্ডলীতে
পিছলে যাওয়া রাত—
তোমার খবর আসলো অকস্মাৎ
তখন আমি হন্যে হয়ে খুঁজি
বিকল্পে— মান্দাস;
নদীর জলেও কেবল মৃতহাঁস...
আমায় তুমি খুঁজেছিলে বুঝি!
পাথরচাষি
ক্রমদৃশ্যমান খাঁচাকে, যারা, অবারিত আসমান জেনে— বাকবাকুম, ওসব কপোত-কপোতির কথা, এখানে আসছে না; কিংবা, সেসব হরিণ-হরিণীর কথাও নয়, বাঘ ও সিংহের মাংসাশী দাঁতের ঝিলিকে, যাদের আত্মপ্রসাদ— আজ, পেয়েও গেল গর্বিত জীবন;
আমরা, এখানে, চাষাবাদের আনন্দ ও বেদনার কথা— গাইতে এসেছি; আমরা পাথরচাষি, বঙ্গকৃষকেরই ভবিষ্য-সম্প্রদায়; শস্যাবর্তনের আগাম ঠেলায়, পাথরের চাষাবাদ করি—
যখন, ফলে ওঠে, ছোট মাঝারি বৃহদাকার শষ্যপাষাণ; চিপে-নিংড়ে-পিষে, উৎপাদন করি জল...
তৃষ্ণার্ত নদীগুলো বাঁচে; পাথরের তুষ দিয়ে,
মুড়িয়ে দিই— ধুলাক্রান্ত বা কাদাভার পথগুলো;
আমাদের, এই-ই, নির্ভেজাল কৃষিপেশা। তবু, রাজাদের বলি—
জাহাঁপনা, একটু খেয়াল রাখবেন, এই গরিবদের দিকেও! আমরা, আপনার নদী ও সড়ক বাঁচিয়ে দেব; দেখবেন, কোনও কোনও সীমান্তের ওপারে, যেন, হিংসার ঢোলক বেজে না ওঠে!