রহমান হেনরীর ৫ কবিতা

প্রকাশিত : জানুয়ারি ২১, ২০২০

অধিকাংশ চাবির চরিত্র

তড়াক করে লাফিয়ে ওঠে
দাঁড়িয়ে যায়— টানটান
এবং বলে যে, পারবো...

তারপর
ভিতরে ঢুকে
কসরত চালাতে থাকে
ওদিকে, ঝনঝন করে ওঠে তালা, খোলে না—

তারপর
ক্লান্ত-পরিশ্রান্ত, বের হয়ে আসে,
তালার পদতলে, নতমুখ
বসে থাকে— কিছুক্ষণ;

অবশেষে, লুজার— ব্যর্থ চোরের মতো দৌড়ে পালায়

গোলাপ গো, আমি ঘাসফুল

ধরো, হাঁটতে গিয়ে, পথিপার্শ্বের একটি ঘাসফুল দেখে, তুমি বলে ফেললে: ‘সুন্দর।’ ...গোলাপ প্রতিবাদ করলো। বললো, ‘‘কী এমন সুন্দর?’ তখনও, সুন্দরের তূল্যমূল্য: তুমি জানো না।... কিন্তু তোমাকে দাঁড়াতে হবে, ওই ঘাসফুলের পাশে; লড়াই করতে হবে— যতক্ষণ না তোমার হৃদয়াবেগের পাশে পৌঁছে, প্রতিবাদী গোলাপ স্বীকার করছে যে, ‘হ্যাঁ, সত্যিই, ঘাসফুলটি সুন্দর’।

হতে পারে: ঘাসফুলটি (প্রচলিত অর্থে) গোলাপের মতো সুন্দর নয়; তাতে কী? তোমার মনে হয়েছিল: সুন্দর; অতএব, গোলাপের সাথে লড়তেই হতো তোমাকে।

এমন কিছুরই নাম যুদ্ধ...

এখানে, কোনও এক পক্ষের পরাজয় ব্যতীত অন্যপক্ষের জয় অসম্ভব।

বড়দিনের রাত

অনিদ্র অসাড় দেহ, শুয়ে আছে— ক্লান্ত খাটে খাটে

হয়তো নিহত নদী, আজ কারও
জানালার প্রান্ত ছুঁয়ে হাঁটে—
দৃশ্য তো প্রাচীন; কিন্তু নবরূপে দেখছি আবারও

জানালায় মা’র চোখ রাত্রির আলো হয়ে জ্বলে

মাঠের ভিতরে মাঠ, তারও ভিতরে মাঠ। সেই কেন্দ্রমাঠে
আমরা সকলে,
বাহির হবার পথ খুঁজে দেখছি— চোখ নাই। আরও
অনেক অবশ এসে— ঘিরে ধরছে প্রত্যেকের হাত

—সকল জানালা ঘেঁষে মা’র চোখ, সবার জানালাজুড়ে রাত

বাক-স্বাধীনতা

শান্তির কানের ভিতর
অনর্গল বেজে চলেছে— আগ্নেয়াস্ত্রগুলোর পারস্পারিক
আলাপ-আলোচনা; এবং তারই নেপথ্য সংগীত...

‘ঠাণ্ডা লড়াই’-এর দিনগুলোর কথা বলছি না; দুনিয়াব্যাপী
চিত্তবিনোদনের স্বাদহীন সালুনে, নুনের যোগান দিতেই,
হয়তোবা SALT নামে খ্যাতি পেয়েছিল:
কৌশলগত অস্ত্র সীমিতকরণের আলোচনা!

শান্তি ও গণতন্ত্রের জন্য গলদঘর্ম নেতারা, দুনিয়ার
দেশে দেশে তৎপর রয়েছেন; বাক্-স্বাধীনতার পক্ষে
তাদের দৃঢ় অবস্থান— মুগ্ধ করছে আমাকে: অগ্নেয়াস্ত্রের মুখে
কুলুপ এঁটে দেয়াটা, একদমই, পছন্দ করেন না ওঁরা

মেশিন বলেই কি তার বাক্-স্বাধীনতা থাকবে না?

লোরকার জন্মদিনে

বিগলিত বিনয়ের দিনে, অবনত হতে হতে
তার মাথাকে মাটি স্পর্শ করতে বলো না; অহংকার
কবিকেই মানায়— শৃঙ্গস্পর্শী তার মস্তক থাকুক
আসমান উচ্চতায়

তার সাথে কথা বলে জগতের যাবতীয় ফুল
খরস্রোতা নদীর গর্জন, সমুদ্রের হাওয়া;
কথা বলে প্রজাপতি, পাখিদের বিপুল পিপাসা;
আঘাত হানার আগে সবগুলো ভূমিকম্প, ঝড়, জলোচ্ছ্বাস;
কথা বলে বনে বনে বাঘের প্রতীক্ষা নিয়ে বেড়ে ওঠা
হরিণশিশুরা—

সার্বভৌম নটিনীর মতো ওই বহুগামী চাঁদ,
যৌবনের সংগুপ্ত কুয়া খুলে, অক্ষত জ্যোৎস্নার স্বাদ
কবিকেই দিয়েছে কেবল; অন্যেরা, কদাচিৎ
টের পেতে পারে: ভার্জিন জ্যোৎস্নার ঘ্রাণ

নির্জন নিস্তব্ধ তার লেখার টেবিলে, পৃথিবীর
সমস্ত সুন্দর এসে, কবিকেই কুর্নিশ জানায়—
বিষণ্ণ ও অন্ধকার পর্দার উপরে, সুন্দরের
আলোক-ঝরনা ফুটিয়ে, কবিই বলেছে:
‘দেখো, এই হলো আস্বাদনযোগ্য সুন্দর’!
সুন্দরের জন্মকথা এই-ই;

নিখিল বিশ্বের সমস্ত শহরের গল্প হাস্যকর
এবং একই মাপে তৈরি কোনও ঝলমলে শার্টের সমান:
পানশালার হট্টোগোল, জুয়াবোর্ডের উত্তেজনা,
সভ্যতার সমান আয়তনের এই গণিকালয় ও তার
যৌনতার ভিতরে— ক্রমশই জমে উঠছে তর্ক

ওইসব তর্কের পাশ থেকে উঠে এসে,
অন্ধকারের তুমুল বর্ষণের মধ্যে হেঁটে যাক কবি,
পথরোধ করো না তার। তাকে যেতে দাও—
ফুল্লনগ্নিকার নরকের ওমে তার চিতাবহ্নিমান।
অফুরন্ত দহনের গাভীটি দোহন শেষে, সে আনুক
ফেনাময়-উষ্ণ-দুধের মতো অমৃতের দিন;

তর্ক করো না, কবিকে মর্যাদা দাও—
কবির সম্মানই হোক সম্রাটের তৃপ্তি, অহংকার