রাগীব হাসানের ৬ কবিতা

প্রকাশিত : আগস্ট ০৩, ২০২০

তাঁতশিল্প

তার প্রতিভূ নেমে আসে ফাঁটা শিখর থেকে
ওদিকে মজাপুকুরের পাড়ে চালাঘর, নক্ষত্র ঘুমায়
একা ঘুমায়, হিসেব-নিকেশ বিফল হল
ধ্রুবর শরীরে মৃক্তিকা রঙ দেখা যায় কী?

ভূমণ্ডলের একপাশে অন্তর্জলী দাঁড়িয়ে আছে

তার চোখের জল কেউ দেখেনি
অবলুপ্ত ঘুম, শীত আপ্লুত হয়ে আছে
মাতাল হেটে গেল সরু এক গলির পথে
তার বিভাগ জুড়ে শতমেঘ ছায়া ফেলে রয়েছে
তার অস্ফুট কান্না শুধু রাত্রিই দেখেছে—
মজাপুকুর, তোমার বুকের হাওয়া দিদ্বিদিক্ ছুটে যায়।

মালিবাগ মাধ্যমিক বিদ্যালয়

ঐশ্বর্যও বিরোধীপথে চলে গেল— গোপন
বুনে বুনে গেল একা
এক তিক্ত বাতাস নভতল বিস্ফারে ফেলে দেয়
চক্রগতি মাতাল, ভুল হয় না
লোহার ফটকে ওঠে—নিচে নামতে, কোনোদিনই
সন্ত্রাসের নিম্ননাভিতে দেখা গেল না স্বস্তিকাচিহ্ন!
ঐশ্বর্য শব্দটি বিদ্যুৎলতায় এত জ্বলে উঠল
তার বিভিক্তির সহস্রা দাক্ষার নিচে ঘুমিয়ে রয়েছে
পর্যটনে গেলে বৌদ্ধ মন্দিরচত্বরে তাকে দেখা যায়।

ভবানীপুর

সেই শ্লেষমা অন্যরা দেখেনি? দুর্যোগ
চট বিছিয়ে শালচকিতে বসে পড়ল—
অমন দুপুর বেলায়— আগ্নীয়মাথা-ছুটে চলে—
বিসর্জন শীতঋতুর স্রাবে মিশে যায়—
জলমণ্ডল দেখে—দ্বিধান্বিত পাখিদের উড়ে যাবার ছায়া—
নিৎসের উপসর্গ জানত

রেস্তোরাঁর টেবিল—গুল্মশোভিতগদ্য মাঝেমধ্যে কেঁদেও ওঠে
প্রশাসনের বৃক্ষরাজি কুয়াশায় জেগে আছে নিঃঝুম।

ওস্তাদ আলী আকবর খান

বিনয়ের নক্ষত্র গণনা ব্যথা উজ্জীবন
এক নিস্তব্ধ লরীর চাকার পাশে আলুলায়িত উদ্ভ্রান্ত রক্তবীজ কৃতবিদ্যা হয়ে রয়েছে
তরঙ্গে ভেসে যায়—রাত্রি ডানা মেলে উড়তে থাকে
পৃথিবীর তারকারাজি ফুটে ওঠে
ক্লেদজ রক্তজবা প্রস্ফুটিত বিজনের মুখায়বের গাঢ়ক্ষত কেঁপে উঠল—
ক্লাবের শালমঞ্জরি—বাকপ্রতিমা—অভেদ্য হয়ে উঠেছিল—করুণাহতের দিনলিপি,
তবু তরঙ্গ—
মোথিত সৈকতে আছড়ে পড়ল
পরাজয়ের আকাশ নেমে এলো লরির গাত্রের রং নিয়ে
শব্দচতুর—কূট-অভিনিবেশ জাল বিস্তার করে গেল সুদৃঢ়
বন্ধু এসে বলে গেল, এ রচনারীতি দাহ করে ফেল
উদ্ভাস সপ্রতিভ গঠন হারিয়েছে...

রক্তসমুদ্রে- লবণহ্রদে

অনড় ক্রোধ পুড়ে ছাই হয়ে গেল, তার নেত্রযুগলে
বর্ষাধারা—
কালো মৃত্তিকায় অসীম এসে হাঁটুমুড়ে বসে পড়েছে
ওই মধ্যাহ্ন রত্নপালকে জড়িয়ে গেল—
ঔষধের রঙের মতন মুখ করে ক্রোধ ফিরে এলো ঘরে
কোথায় অভিনীত হয় মঞ্জুষাভাষা?
এই দাঁড়িয়ে থাকা স্থির অপলক—সন্দর্ভের বিষয় হয়ে
ঝুঁকে রয়েছে— এখানে বিবাহের আগে
বহুক্ষণ ধরে মুখ-মুখশ্রী হাত-ডানা উজ্জ্বলতা তৈরির
এক অবিরাম প্রচেষ্টা চলে, সিঁড়ির জল
সকৌতুক মন নিয়ে তা দেখে।
রাস্তার দু-পাশের বৃক্ষসারির মধ্যদিয়ে হারিয়ে গেল কে?
অগ্নিবারণ আবার জ্বলে উঠবে না?
দারুবনে পীতপুষ্প—অমোঘ বৃষ্টিস্নান ঘটে গেল—আত্মার শীৎকার
গড়িয়ে পড়ছে কোন্ রক্তসমুদ্রে- লবণহ্রদে?

পণ্ডিত রবিশঙ্কর

দুঃখের দিনে চৈত্রের বাতাস উড়ে এলো
পালকের দেহে ঔষধের গুড়
এই বর্ষণ জানে গন্ধকে ভরে আছে
দূর সংহিতা—

অলৌকিকে জাগ্রত পুনর্বারের মুছে যাওয়া অশ্রুকণিকা

সেই অতীত ব্যথামুখে পড়ে নেয়—
চারদিকে গণপথে ভিড় অতিক্রম করে
ভেসে আসে প্রগতি
আকাশের ভাসমান সরণি ঝুরঝুর ভেঙে পড়ছে
আকাশের ধূমলবাষ্পে শূন্যে কার চোখ ভেসে আছে?