রাজীব কুমার দাশের খুদে গল্প ‘এই তো সামনে’

প্রকাশিত : মার্চ ০৯, ২০২৪

সজীব। সৃজনশীল প্রাণবন্ত যুবক। পড়ালেখার পাঠ চুকিয়ে পত্রিকা বিডি জবস অনলাইন ঘেঁটে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের শর্ত মেনে- একটার পর একটা চাকরির আবেদনে সাড়া দিয়ে চলেছেন দিনের পর দিন।

মাঝে মধ্যে রিটেন পরীক্ষার ইন্টারভিউ কার্ড আসে। মেসেজও আসে। চাকরি বাজারের চেহলাম কুলখানি সেরে বেকার সজীব যখন বুঝতে পারেন- এই বদ্বীপে চাকরির বাজার মানে মেধার পাশাপাশি সিংহভাগ তদ্বির মেসেজ সংকেত ইয়েসকার্ড পুঁজিরও বেশ দরকার। তবুও বেকার সজীবের দুঃখ নাই। তার অনলাইন কোচিং স্লোগান- `বিত্ত নয়, চাই চিত্ত হাহাকার` দেখে কম মেধাবীরা যখন চাকরি না পেয়ে পরম আত্মবিশ্বাস মনে সাহারা মরুভূমি ভূমধ্যসাগর না পেরিয়ে ঘুরে দাঁড়িয়েছে; তখনই ঘটে আসল বিপত্তি।

খরগোশ কচ্ছপ জাতীয় চাকরি বাজার প্রতিযোগিতা দৌড়ে সে চরম মেধাবাজ তদ্বিরবাজ ধড়িবাজ চামচাবাজদের দখলে বদ্বীপের আকাশ-বাতাস। তারা একে একে দখলে নিয়েছেন সমাজসেবা, ব্যাংক-বীমা কেপিআই হয়ে সরকারি-বেসরকারি সব স্থাপনা।

বিশ্বাসের আকাল বিশ্বাসে তবুও নিজের পায়ে দাঁড়াতে চেয়েছে সজীব। রাতারাতি বিদেশের শিল্পপতি আম্বানি মার্ক জুকারবার্গ না হোক; হতে চেয়েছে দেশপ্রেম সততা বুকে জাতির পিতার একজন উত্তরসূরি- অর্থনৈতিক মুক্তি দর্শনের ছাত্র।

শোনতে চেয়েছে পরম বিশ্বাসী স্নেহধন্য- `তুই, তোকারি, ডাক। আয়- আমার সাথে খাবি পেটভরতি খাবার।
পিতার দেখানো পথে পরম বিশ্বাসে তবুও হেঁটে চলেছেন সজীব। উপলব্ধির বর্ণিল হৃদয়ে সজীব এখন দেখছে কোটি কোটি টাকার বিলাসী প্রজেক্ট গাড়ি, চাকচিক্যময় ইন্টেরিয়র ডিজাইনের সারি সারি তাপানুকুল অফিস। আরাম চেয়ারে বসে আছেন- খালকেটে আনা পিতার বিশ্বাসখেকো কিছু কুমির। সব গিলে খাই খাই ইয়েসকার্ড পুঁজির অ্যানাকোন্ডা।

উদ্যোক্তা হবার বিশ্বাস দৌড়ে নিঃস্ব সজীব। ভাগ্য ফেরাতে শেষ ঠিকানা মতিঝিল শাপলা চত্বর হতে কাকরাইল।
রিকশা ভাড়া নেই। ভুল পথে সজীব উদভ্রান্ত জীবনমুখী মানুষের ভিড়ে হেঁটে চলেছেন। সেই ভিড়ে মাঝে মাঝে ক্ষুধাতুর শুষ্ক কৃত্রিম হাসিমাখা মুখে পথিক বন্ধুদের প্রশ্ন করেন। কেউ উত্তর দেন, কেউবা উটকো ঝামেলা মনে করে পাশ কাটিয়ে চলে যান।

-ভাই, বিদেশ যাবার অফিসে যাব, কোনদিকে যাব? কতদূর?
-এই তো সামনে।
বিকাল গড়িয়ে গেছে। সজীব হেঁটে চলেছেন সামনে। পথ ফুরোয় না।

`এই তো সামনে` বদ্বীপের কানে বাজে এমন কমন বাক্য। হোক সেটা নয়টা পাঁচটা সরকারি অফিস, ব্যাংক-বীমা, বাস-ট্রেন স্টেশন। দায়িক কৃষাণ-কৃষাণি লোন মুখে, সলজ্জ গৃহবধূর এনজিও লোন আর্তনাদ নির্লজ্জ কিস্তি মুখের বিজ্ঞাপন।
বেকার বাবার মুখে আইবুড়ো কন্যার মুখে, লাখো বেকার মুখে রাশি-রাশি ক্রন্দন।

প্রেমিকা নীলার মুখখানি ভেসে উঠেছে স্মৃতির মানসপটে সযতনে। ভরসা নৌকায় চেপে সেও হাত ধরে বলেছিল- `এই তো সামনে।`