রাহমান চৌধুরীর নাটক ‘দূরের মানুষ কাছের মানুষ’

পর্ব ৩

প্রকাশিত : ফেব্রুয়ারি ১৭, ২০২৩

তৃতীয় অংশ
(পরের দৃশ্য। তরুণী আর যুবতী কথা বলছে। তরুণীর পরনে নতুন পোষাক। যুবতীও নতুন পোষাক পরিধান করেছে।)

 

যুবতী: নতুন পোষাকটাতে তোমাকে খুব মানিয়েছে।
তরুণী: ভাস্কর কোথায়?
যুবতী: ভাস্করকে আলাদা করে রাখা হয়েছে। কারণ সে পালাবার চেষ্টা করেছিল। নিঃসন্দেহে সে মেধাবী। কিন্তু স্থান-কাল-পাত্র সম্পর্কে বিবেচনা নেই। কক্ষের ভিতর এমন কিছু রাখা আছে কেউ অস্বাভাবিক কিছু করতে চাইলে সংকেত বেজে উঠবে।
তরুণী: ভাস্করের ভিতরে একটা স্বাধীন সত্তা আছে যা কিছু মানতে চায় না। স্বাধীনচেতা একজন মানুষ বন্দী অবস্থায় কেন থাকতে চাইবে?
যুবতী: খুব যুক্তিসঙ্গত কথা। বন্দী করে রাখতে চাইলেই সবার মন বন্দী থাকতে চায় না।
তরুণী: যখন খাবার খেয়ে ফিরছিলাম, বড় মিলনায়তন ঘরটাতে কয়েকজন চলচ্চিত্র তারকাকে দেখেছিলাম। সকলেই কি তারা আমাদের মতো বন্দী?
যুবতী: না না, একেবারেই না। সকলেই তারা মুক্ত এবং এখানে নিয়মিতই যাতায়াত করে।
তরুণী: এখানে তাঁদের কী কাজ?

 

যুবতী: চলচ্চিত্রের বড় তারকা হতে চাইলে আমাদের অধীশ্বরের আশীর্বাদ দরকার হয়। বিশাল বিশাল খরচের চলচ্চিত্র বানাবার টাকাটা এখান থেকেই বিনিয়োগ করা হয়ে থাকে।
তরুণী: বুঝলাম। আপনাদের অধীশ্বরের চলচ্চিত্র জগতের সঙ্গে বিরাট যোগাযোগ আছে।
যুবতী: সঠিকভাবে বললে পুরো চলচ্চিত্রের জগতাটাকেই আসলে আমাদের অধীশ্বর নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। চলচ্চিত্র জগতের বড় ছোট কোনো তারকারই আমাদের অধীশ্বরের ইচ্ছার বাইরে পা ফেলার সুযোগ নেই।
তরুণী: হুম! যখনই কেউ তার নির্দেশের বাইরে গিয়েছে তাকেই প্রাণ দিতে হয়েছে।

 

যুবতী: সত্যি বলতে অধীশ্বরের একটা মস্ত বড় গুণ হচ্ছে তিনি কথার বরখেলাপ করেন না। যখন যা প্রতিশ্রুতি দেন সেটা রক্ষা করেন।
তরুণী: প্রতিশ্রুতি মানে তো একটা হিসেবী লেনদেন?
যুবতী: খুব স্বাভাবিক। তিনি লেনদেন-এর সেই প্রতিশ্রুতি অক্ষরে অক্ষরে পালন করেন। ভিন্ন বিষয়টা হলো, যদি তাকে কেউ না ঘাটায় তিনি কাউকে ঘাটান না।
তরুণী: কথাটা দাঁড়ায় তিনি তাঁর দরকারে প্রভাব বা ক্ষমতা খাটান। ক্ষমতাই কার্যকর রয়েছে তার সকল নীতিকথা আর ভালোমানুষ সাজার পক্ষে।

 

যুবতী: হয়তো তাই। কিন্তু তোমাদের ব্যাপারটা ভিন্ন। বিশেষ করে তুমি কিংবা তোমার বয়স তোমাকে একটা বাড়তি সুবিধা দিয়েছে।
তরুণী: কী সেটা?
যুবতী: বিষয়টা খুব গুরুত্বপূর্ণ। যতোরকম ভালো ব্যবহার তুমি পেয়েছো তার কারণ তোমার বয়স।
তরুণী: মানে?

 

যুবতী: মনে রাখবে তোমার বয়সটা ঠিক তাঁর একমাত্র কন্যার বয়সের কাছাকাছি। সে-কারণেই তোমার কিংবা তোমার বন্ধুর প্রতি কোনোরকম খারাপ আচরণ করা হোক তিনি চাননি। বলতে পারো নিজের কন্যার প্রতি এটা একধরনের সম্মান।
তরুণী: বুঝলাম। তাঁর কন্যাটি কী করেন?
যুবতী: সে খবর নাই বা শুনলে।
তরুণী: অধীশ্বরের কন্যা সম্পর্কে কি কিছু বলা বারণ আছে?
যুবতী: ঠিক তা নেই। অধীশ্বরের কন্যার বয়সী বলেই তুমি ভালো ব্যবহার পাচ্ছো। কিন্তু প্রয়োজনেই তিনি ভয়াবহ নিষ্ঠুর হতে পারেন। কার্য উদ্ধারে চরম নিষ্ঠুর হতে সামান্য দ্বিধা করেন না। চলবে