রাহমান চৌধুরীর প্রবন্ধ ‘জনগণই ক্ষমতার মালিক!’

প্রকাশিত : ডিসেম্বর ১০, ২০২২

ধরা যাক, একটি সরকার ভালো দেশ চালাচ্ছে। তার মানে কি তার বিরুদ্ধে লড়াই থেমে যাবে? প্রশ্নই ওঠে না। লড়াই চলবে ততক্ষণ যতক্ষণ না মানুষে মানুষে সাম্য প্রতিষ্ঠা হয়। যতক্ষণ একটা মানুষ আর একটা মানুষ থেকে দরিদ্র থাকবে লড়াই চলবে। মূল লড়াইটা শুধু ক্ষমতা বদলের নয়, সকল রকম শোষণ-বঞ্চনা থেকে মানুষের মুক্তির। ফলে সকল লড়াই চলমান। কখনো তীব্র গতিতে কখনো বা মন্থর। কিন্তু লড়াই চলছে। লড়াই কখনো থেমে থাকে না।

প্রতিনিয়ত মানুষের লড়াই চলে, সমাজের রূপান্তর ঘটে চলে। সবসময় সে রূপান্তর চোখে ধরা পড়ে না। কিন্তু প্রতিনিয়ত রূপান্তর ঘটছে। যখন প্রতিনিয়ত সমাজ রূপান্তরের ভিতর দিয়ে ঘটনা বিপ্লবে রূপ নেয় কিংবা বিরাট গুণগত পরিবর্তন ঘটিয়ে দেয়, তখনই মানুষ ধাক্কা খায়। সমাজ বদলের চূড়ান্ত লড়াইয়ের আগে থাকে সংগ্রামের আরো নানা স্তর। বিভিন্ন রাষ্ট্রে চলছে সেই স্তর ভিত্তিক লড়াই। মানুষের চিন্তা গত তিনশো বছরে খানিকটা পরিপক্ক হয়েছে।

বিভিন্ন লড়াইয়ের ভবিষ্যৎ ফলাফল সম্পর্কে কমবেশি বলে দিতে পারছে। মানুষের ইচ্ছায় শুধু ইতিহাস পাল্টাবে না, সমাজবিজ্ঞানীরা এ সত্য জেনে গেছে। সমাজ পরিবর্তনের কিছু নিয়ম আছে। মানুষে মানুষে রক্তপাতের ভিতর দিয়েই যে সমাজে বড় বড় বিপ্লব সাধিত হবে, মানুষের এ বিয়োগান্ত পরিণতি সম্পর্কে বহু মানুষ এখন সচেতন।

স্মরণ রাখতে হবে, সবসময় সমাজ পরিবর্তন রাজনৈতিক পথে ঘটে না। কখনো কখনো বিজ্ঞানের একটা আবিষ্কার বিশ্বকে দুশো বছর এগিয়ে নিয়ে যায়, ঠিক যেমন ঘটেছিল ছাপাখানা আবিষ্কারের ফলে। সেটাও একটা বিপ্লব। সবটাই মানুষের শ্রম আর সৃষ্টিশীলতার লক্ষণ। ফলে কিছুই থেমে নেই, কিছুই স্থির নয় এবং চিরস্থায়ী নয়। সবকিছুই পরিবর্তনশীল। পরিবর্তনের চেয়ে বড় কোনো সত্য নেই। যারা এই পরিবর্তন চায় না বা মানুষের সংগ্রামের বা সৃষ্টিশীলতার নীরব রূপটা দেখতে পায় না, দৃষ্টি থাকা সত্ত্বেও তারা অন্ধ।

বিশ্ব বিভিন্ন রকম সংগ্রাম আর বহু বিচিত্র ধরনের পরিবর্তনের ভিতর দিয়ে এতদূর এসেছে। মানুষে মানুষে সম্পর্কের একটা বড় দিক হচ্ছে ঘৃণা। দুই প্রতিপক্ষের মধ্যে তীব্র ঘৃণার ভিতর দিয়েই এই বিশ্বের সকল অগ্রগতি এবং রূপান্তর ঘটেছে। ফলে রাজনীতিও হচ্ছে দুই পক্ষের পরস্পরের প্রতি ঘৃণার প্রকাশ। সকল পরিবর্তনের পিছনে এই ঘৃণা থাকতেই হবে। কারণ মানুষ যখন থেকে শিকারি জীবনের পরিবর্তে কৃষিভিত্তিক বা চাষাবাদের জীবন আরম্ভ করে, মানুষ তখন থেকেই দখলদার।

ইতিহাসের অনিবার্য ধারাবাহিকতায় চাষাবাদের ভিতর দিয়ে মানব সভ্যতার বিকাশ। সেই ঘটনা একই সঙ্গে মানুষকে দখলদারে পরিণত করেছে। চাষাবাদ করতে গিয়ে আর কোনো প্রাণী নয়, একমাত্র মানুষই প্রকৃতির উপর তার লুণ্ঠন আর দখল চাপিয়ে দিয়েছে। ফলে ঐতিহাসিকভাবেই মানুষের সভ্যতা দখলদারীর সভ্যতা। মানুষের সেই দখলের ইতিহাস থেকেই মানুষে মানুষে বৈষম্য আর বিভেদের উৎপত্তি। আর কোনো প্রাণী সভ্য হয়নি, দখলদারও হয়নি। সভ্যরাই দখলদার। সভ্যরাই সম্পদের ভোগদখল নিয়ে পরস্পরের প্রতি ঘৃণা প্রকাশ করে।

বর্তমান সমাজে মানুষে মানুষে সম্পর্কের সবচেয়ে বড় সত্যটাই হচ্ছে দুই শ্রেণি বা দুই প্রতিপক্ষের মধ্যকার ঘৃণা। সবার উপরে ঘৃণাই সত্য। সকল মহৎ সাহিত্য এবং সকল বড় মাপের সাহিত্যের ভিত্তি হচ্ছে এই ঘৃণা। মহাভারত, মঙ্গলকাব্য, বিশ্বের সকল ধ্রুপদী সাহিত্য মানুষকে যে আকর্ষণ করে তার প্রধান কারণ সেখানে আছে দুপক্ষের তীব্র ঘৃণার জগত। মানুষে মানুষে সেই ঘৃণাই শিল্প সাহিত্যে নাটকে মানুষ উপভোগ করে। বিশ্বের কোনো মহান ধর্মগুরু, কোনো মহামানব, কোন বিরাট কবি বা মহত্তর কোনো বাণী কখনো মানুষে মানুষে এই ঘৃণার জগতের অবসান ঘটাতে পারবে না।

নাটকে আসলে কী থাকে? নাটক দর্শককে কেন আকর্ষণ করে? নাটকে মূলত থাকে মানুষে মানুষে ঘৃণার প্রকাশ, থাকে দুটা পক্ষ। মানুষ নাটক দেখতে দেখতে অবচেতনে সেই ঘৃণাই আসলে উপভোগ করে। বিশ্বের কোনো মহাশক্তি নেই, নেই কোনো মন্ত্র যা মানুষের ভিতরের এই ঘৃণাকে দূর করতে পারে।

মানুষে মানুষে এই ঘৃণার অবসান ঘটবে সেদিন, যেদিন সমাজে আর শোষণ বঞ্চনা থাকবে না। মানুষের মধ্যে প্রভু ভৃত্যের সম্পর্ক থাকবে না। যখন বিশ্বে ব্যক্তিগত সম্পত্তির অবসান ঘটবে। মার্কসবাদের মূল কথাটাই এই ব্যক্তিগত সম্পত্তির অবসান ঘটানো। মার্কসের প্রায় আড়াই হাজার বছর আগে সিদ্ধার্থ বা গৌতম বুদ্ধ বলেছিলেন, মানুষের দুঃখ কষ্টের কারণ তার লোভ, মনের অতিরিক্ত আকাঙ্ক্ষা। বুদ্ধ মনে করতেন ব্যক্তিগত সম্পত্তির অবসান ঘটাতে পারলে মানুষের দুঃখ কষ্টের অবসান ঘটবে। নাট্যকার সেনেকা দু হাজার বছর আগে সেই কথাই বলে গেছেন, ব্যক্তিগত সম্পত্তি সকল শোষণ নির্যাতনের কারণ।

ব্যক্তিগত সম্পত্তিই মানুষে মানুষে বৈষম্য আর বিভেদ সৃষ্টি করে। ফলে ব্যক্তিগত সম্পত্তির আবসান হলেই মানুষে মানুষে বৈষম্য আর বিভেদের অবসান ঘটবে। বর্তমান বিশ্বে মানুষ যে অতিরিক্ত সম্পদের অধিকারী তার পেছনে আছে মানুষের লুটপাট, পেশীশক্তি আর লুটপাট। না হলে প্রাকৃতিক সম্পদ ভূমির মালিকানা কারো বেশি কারো কম হবার কথা ছিল না। প্রাকৃতিক সম্পদের উপর সকল মানুষের সমান অধিকার থাকার কথা ছিল। কল্পিত কোনো ঈশ্বর মানুষকে ধনী দরিদ্র বানায় না। তার পেছনে আছে পেশীশক্তির লুটপাটের দীর্ঘ ইতিহাস। সকল শাসকরাই এই পেশীশক্তির মদতদাতা, লুটপাটের সহযোগী।

ফলে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ বনাম বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের লড়াইটা কোনো চূড়ান্ত লড়াই নয়, মানুষের ভাগ্য পাল্টাবার জন্য কোনো শেষ কথা নয়। মানুষের লড়াই আর রক্তপাত কখনো এক সরকারকে সরিয়ে আর এক সরকারকে ক্ষমতায় বসানোর মধ্য দিয়ে শেষ হবে না। লড়াই চলবে যতদিন মানুষে মানুষে প্রভু ভৃত্যের সম্পর্ক শেষ না হয়। যতদিন ব্যক্তিগত মালিকানার অবসান না ঘটে। কিন্তু ব্যক্তিগত মালিকানার অবসান ঘটানোর আগে আরো হাজারটা লড়াই আছে। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র এবং বৃহৎ লড়াই। সেই প্রতিটা লড়াইও গুরুত্বপূর্ণ। সরকার বদলের ঘন ঘন লড়াই মানুষকে বুঝতে সাহায্য করে, সরকার বদল মূল সমস্যার সমাধান নয়।

ব্যক্তিগত সম্পত্তির অবসান ঘটার আগে ক্ষমতায় যেই আসুক, যত মহত্ব নিয়ে আসুক শোষণের অবসান ঘটবে না। সমস্যাটা আসলে সমাজ ব্যবস্থার মধ্যে। বর্তমান উৎপাদন ব্যবস্থা আর উৎপাদন সম্পর্কের মধ্যে, যেখানে পরস্পরের শত্রু দুটা শ্রেণী মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আছে এই সমাজে। সেই দুই শ্রেণীর পরস্পরের প্রতি আছে তীব্র ঘৃণা আর আছে নানান রকম দ্বন্দ্ব।সমাজবিজ্ঞানের সত্য না বুঝলে মানুষে মানুষে এই দ্বান্দ্বিক সম্পর্ক বুঝে ওঠা সম্ভব নয়।

রাষ্ট্র হচ্ছে মানুষকে দমন পীড়ন করার সবচেয়ে বড় প্রতিষ্ঠান। আইন হচ্ছে সেখানে ক্ষমতাবান আর ধনীদের ক্ষমতা আর সম্পদ রক্ষা করার হাতিয়ার। আইনের প্রতি শ্রদ্ধা থাকার কিছু নেই নির্যাতিত মানুষের। রাষ্ট্র মানেই দমন পীড়ন থাকবে, সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রেও তাই দমন পীড়ন চলে। সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র নায়করা একথা স্পষ্টই স্বীকার করে। রাষ্ট্র যে দমন পীড়নের হাতিয়ার, কথাটা বলেছেন স্বয়ং কার্ল মার্কস। ফলে সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রে অত্যাচার ছিল না, দমন পীড়ন থাকে না একথা কখনো সত্যিকারের মার্কসবাদীরা বলবে না। সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রে দ্রুত উন্নয়ন ঘটে, পাশাপাশি দমন পীড়ন থাকে। সকল মার্কসবাদী এই সত্য জানে।

সোভিয়েত ইউনিয়ন বা চীনে তাই দমন পীড়ন ছিল না কেউ বলবে না। কারণ রাষ্ট্র যখন ছিল, দমন পীড়ন থাকবেই। সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রের তাহলে ইতিবাচক দিকটি কী? শ্রমকে দ্রুত টেকসই উন্নয়নের পক্ষে কাজে লাগাতে পারে। ভিন্ন দেশের দাসত্ব করতে হয় না তাকে। বরং শক্ত প্রতিপক্ষ হিসেবে সমীহ আদায় করে। সম্পদের বণ্টন অনেকটা সহনীয় পর্যায়ে চলে আসে। সকল কুসংস্কার দূর করে বিজ্ঞানমনস্ক চিন্তার সুযোগ সৃষ্টি হয়। মানুষের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করা হয়। দ্বান্দ্বিক বস্তবাদী মতাদর্শে মনে করা হয় সমাজতন্ত্রের পরেই আসবে সাম্য। মার্কসবাদীরা মনে করেন, সাম্য প্রতিষ্ঠা হলেই সমাজে শোষণ, বঞ্চনা আর দমন পীড়ন থাকবে না। সমাজতন্ত্র হচ্ছে সাম্যে পৌঁছনোর একটা স্তর। সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রেই সাম্যে পৌঁছনোর বিভিন্ন অনুশীলন চলবে।

মার্কস সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, সাম্য কখনো একটি দেশে আনা সম্ভব নয়। বিভিন্ন দেশে সমাজতন্ত্র আসার পর অনুশীলনের ভিতর দিয়ে সাম্য আসবে একযোগে সকল রাষ্ট্রে। আসলে তখন আর আলাদাভাবে কোনো রাষ্ট্র থাকবে না। কারণ রাষ্ট্র থাকা মানেই, এক রাষ্ট্র আর এক রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অস্ত্র উঁচিয়ে ধরে থাকবে। শাসকরা দেশপ্রেমের নাম করে তখনো এক দেশের মানুষকে অপর দেশের মানুষের বিরুদ্ধে ক্ষেপিয়ে তুলবে। ফলে মানুষে মানুষে ঘৃণার জগত তখনো বন্ধ হবে না। সাম্যবাদী সমাজে তাই রাষ্ট্রের অস্তিত্ব থাকবে না, মানুষে মানুষে ঘৃণা থাকবে না। সাম্য তাই প্রতিষ্ঠা পাবে সারাবিশ্বে একসঙ্গে, মানুষে মানুষে ঘৃণার অবসান ঘটবে তখন। মার্কস এটা বুঝেছিলেন, বিচ্ছিন্নভাবে একটা দুটা রাষ্ট্রে সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা কঠিন। কারণ বাকি রাষ্ট্রগুলো কিছুতেই সেটা টিকে থাকতে দেবে না।

ভিন্ন দিকে সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলোকে তখন নিজের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে বাস্তব কারণেই সামরিক শক্তি বৃদ্ধি করার দিকে নজর দেবে। সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রের সরকার বিভিন্ন মানুষকে সন্দেহ করবে বিপ্লবের শত্রু হিসেবে। কারণ পুঁজিবাদী দেশগুলো নানাভাবে সমাজতান্ত্রিক দেশগুলোর মধ্যে নাশকতা ঘটাতে চাইবে। ফলে সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র নিজের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে সকল নাগরিককে সবরকম স্বাধীনতা দিতে পারবে না। সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রের ভিতরেই তখন শুরু হবে নানা দ্বন্দ্ব, নিজেদের মধ্যেই দেখা দেবে পরস্পরের প্রতি সন্দেহ। সেজন্য মার্কস দুনিয়ার সকল মজদুরকে এক করার শ্লোগান দিয়েছিলেন।

মার্কস ঠিক বলেছেন কি ভুল বলেছেন সেই প্রশ্নে না গিয়ে নিজের যুক্তি বা বিবেক কাজে লাগিয়ে একথা বলা যায়, সমাজে ভৃত্যের ভাগ্য নিয়ে কেউ খুশি থাকতে পারে না। ফলে সমাজে প্রভু ভৃত্যের সম্পর্ক থাকা মানেই লড়াই থাকবে। ফলে বৃহত্তর মানুষের লড়াই আর সংগ্রাম কেউ কখনো থামাতে পারবে না, সাম্য না আসা পর্যন্ত। সকল দেশের সকল সরকারের ক্ষেত্রেই এটা সত্য। সকল সরকারের পতন তাই অনিবার্য। ক্ষমতায় যে সরকার আছে তার জন্য যেমন এ কথা সত্য, ঠিক তেমনি যে সরকার নতুন করে ক্ষমতা গ্রহণ করবে, তার ক্ষেত্রেও কথাটি সত্যি। বর্তমানে যে ক্ষমতায় আছে তাকেও ক্ষমতা হারাতে হবে, ভবিষ্যতে যে ক্ষমতায় আসবে তার ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটবে। প্রভু ভৃত্যের সম্পর্ক অবসান না হওয়া পর্যন্ত লড়াই চলতেই থাকবে। ফলে নিজের ভাষ্য মতো কতোটা কে দেশ ভালো চালিয়েছে এসব কথা বলে লাভ নেই। প্রভু ভৃত্যের সম্পর্ক শেষ না হওয়া পর্যন্ত যেই ক্ষমতায় আসবে, আজ হোক কাল হোক ক্ষমতা তাকে ছাড়তেই হবে। যখন প্রভু ভৃত্যের সম্পর্ক শেষ হবে, কাউকেই তখন আর ক্ষমতায় বসতে হবে না। কারণ জনগণই হবে তখন সবকিছুর মালিক।

লেখক: শিক্ষাবিদ ও প্রাবন্ধিক