শওকত হোসেন

শওকত হোসেন

শওকত হোসেনের ৫ কবিতা

প্রকাশিত : আগস্ট ০৫, ২০২০

পৃথিবীর সমস্ত অসুখের উল্লাস

সন্ধ্যা হলেই কিছু বাতাস আমাকে ঘিরে আলাপচারিতায় মাতে—
সুখ-শীত নেমে আসে মারণাস্ত্র বিকেলে;
কুয়াশা মোড়া কাজীরট্যাকে খালের শীতে
পানিতে সাদা কুয়াশা খেলা করে—
সুন্দর ও পরিচ্ছন্ন স্নিগ্ধ পৃথিবীর সমস্ত বায়ু, এইখানে
ঘুমিয়ে পড়ে;
পৃথিবীর সমস্ত অসুখের উল্লাস, ভাইরাস ও জীবাণু হয়ে
আর জাগবে না বলে পরদিন ঠা ঠা রোদ্দুরে!

শিশুদের একান্ত অভিমানে নরম কুয়াশায়, খালের
কিনারে ভেরা মাছেদের মতোন
প্রতিদিন সন্ধ্যা নামে—

বড় প্রাত্যহিক বলে তাকায় না আর কেউ সন্ধ্যার দিকে—
সমস্ত পৃথিবীর শিল্পের মাটি, এইখানে, ঘাসের বদলে গরু খায় বলে!

মনে পড়ছে কী যেন মনে নাই

পথে পড়লো ইংলিশ মিডিয়াম
তারপর কলাই ক্ষেত
ফাস্টফুড তারপর
গোবর বেনা—
কিছুটা পার হলাম এরোপ্লেনে, কিছু রিক্সায়
তারপর এক মালাই—
গন্তব্যে পৌঁছার সম্ভাবনা নাই বেলাও নাই—
পাউরুটির
ভেতরের অনেক সুড়ঙ্গ মাড়িয়ে
ক্ষুধার্তের
পথ তবু
চলে—
রাত এলে দিন, দিন এলে রাত
কখনো রাতদিন
একসাথে
চায়
নাকি চায় এই
আমারেই!
মনে কি রেখেছি বেরিয়েছি ঘর হতে
একটু একটু মনে পড়ছে— কী যেন মনে নাই...

জিনিস

আমরা জিনিসের মধ্যে ঢুকে গেছি দিনকে দিন
ভাঁজে ভাঁজে রাখা রঙিন রাংতা জালে
রাস্তায় পড়ে থাকা এক টুকরা চকচকে কাগজের দিকে
ছুটছি কি আজও— হয়তো কী যেন মূল্যবান কিছু আছে বলে—
তুলে আনি ঘরের বেড়ায়—
বিলাপী মনে গুঁজে রাখি দিন—
অপেক্ষায় মাজারের ঝাড়বাতি—
জিনিসগুলো ওরশ শেষে
প্রবল বাতাসে উড়ে আসে আমাদের দিকে
আমরা বিক্রির পথে গরুর গলায়ও
দেখেছি জিনিস ওরকম—
বিয়ানের আবছা আলোয় শিশিরে ভেজা পড়ে থাকে
এখনও দূর্বাবনে—
সত্যি এইবার রুকিয়ার চলন যেতে দেখে
দৌড়িয়ে যাই আমরা কী যেন পেতে
জ্বলজ্বলে পারে ওর শাড়ির ভেতর—
কাছে গিয়ে নওশাকে বলি, তুমি নও মুগ্ধ সতেজ
ওখানে আমরাই জিনিসের খোঁজে
এতকাল ঈশ্বর রচেছি!

পরিস্থিতি ৮

নামাজ পড়ি না কেন, বউ-বাপ-মায়ের বড় চাপ যাচ্ছে করোনায়!
বলি, নামাজ পড়ার বিষয় নয়, আছি তো পুরাই প্রতিষ্ঠায়!
কার কথা কে শোনে
আছি ঘরেই; কাচুমাচু এককোণে!
সংখ্যালঘু আছি ঘরে
করোনা নয় ভিন্ন জ্বরে!
নামাজ নামাজ নামাজ
পুরা জিরাফের গলাটাই সমাজ—

পরিস্থিতি ৯

মৃত্যুর সঙ্গে আমার পাঞ্জা বাঁধিয়ে— কেন যাও
কোমর দোলাতে দোলাতে—
বাড়ির সামনে সবুজ লনে গোল হয়ে এঁকেবেঁকে
কেন যাচ্ছ নেচে—
কেন এই ফূর্তি তোমার?
ঘরের মধ্যে ফণা তোলা সাপ পরিস্থিতি মাথায় নিয়ে
লড়ে যাচ্ছি, তোমাকেও দেখছি অনতিদূর হতে
ঘরের খেয়ে কী করে সঙ্গমরত থাকো
আমারি তৈরি সবুজ ময়দানে—
অন্তত বলো, কে ওখানে?