শান্তিনিকেতনের হৃদয়

অনুষ ঘোষ

প্রকাশিত : এপ্রিল ১৬, ২০১৯

একটা নদীর নাম ছিল কোপাই। সময়ের বয়ে যাওয়াকে মানুষ বিভিন্নভাবে দেখে নিতে পারে। সে বিশ বছরও হতে পারে, দুই দশকও হতে পারে কিংবা সাত হাজার চারশো সাতদিনও হতে পারে। মানব জীবনের প্রেক্ষিতে সময় পেরিয়ে যাওয়া কোনো ছোট বিষয় নয়, তাও আমার জন্য বিশ বছরের এই পার্থক্য গতকালের মতো মনে হয়। সেই তো ঠিক আগের দিন আমি মায়ের সাথে কোপাই নদীর ধারে ঘুরতে গেছিলাম। ভাইয়ের সঙ্গে খেলতে-খেলতে সেই বসন্তের ঠাণ্ঠা বাতাসের আনন্দ ভোগ করছিলাম এবং গাছপালার মাঝে লুকোচুরি খেলছিলাম, নদীর উঁচু ঢেউয়ের থেকে বাঁচার চেষ্টা করতে-করতে।

আর ঠিক তার পরের দিন, সম্পূর্ণ দৃশ্যই বদলে গেল। বসন্তের সেই ঠাণ্ডা হাওয়া এখন গরম হাওয়ায় পরিবর্তিত হয়ে গেছে, নদীর দুই পাড়ে গাছের কোনো নাম-লক্ষণ নেই আর নদী নিজেই শুকিয়ে গিয়ে এক ডোবা হয়ে উঠেছে। বৈশাখ মাসের সেই ছোট নদী আর এঁকেবেঁকে চলে না। কবিগুরু কোপাইকে শান্তিনিকেতনের হৃদয় বলেছিলেন, আর সেই হৃদয়ের চারপাশে উনি শিক্ষার মাধ্যম দিয়ে এক নতুন ভারতের নির্মাণ করতে চাইছিলেন। আজ সেই শিক্ষার মাধ্যমটিকে গেছে বিশ্ব-ভারতীর রূপে পরিচিত। কোপাইও এখনো শান্তিনিকেতনের হৃদয় রয়ে গেছে। কিন্তু যেমন ভাবে কোপাই শুকিয়ে গিয়ে হৃদয়ের কাজ আর করতে পারছে না, ঠিক তেমন বিশ্বভারতীও বিশ্বকবির স্বপ্ন হয়েও ওনার নবীন ভারতের স্বপ্নকে পুরণ করতে পারছে না।

বদলের হাওয়াতে উন্নয়নের সুগন্ধ থাকার সত্ত্বেও বাস্তবে কিছুই পরিবর্তিত হয়নি। বরঞ্চ যে জিনিসগুলোকে মানুষ প্রগতির রূপক মেনে চলবে, সেই জিনিস আস্তে-আস্তে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে কিন্তু তার পুরাতন ছবিকে বাঁচিয়ে রেখে কিছু লোক গুরুদেবের স্বপ্ন ও আমার স্মৃতিকে এক দ্রব্য বানিয়ে বাজারে বেচতে চাইছে।

এই লিখন কোনো ইতিহাসের বর্ণনা নয়, কারণ আমি মনে করি অনেকেই শান্তিনিকেতনের ইতিহাসকে নিয়ে লিখেছে আর এই বিষয়ে তাদের দক্ষতা আমার চেয়ে অনেক গুণ বেশি। তার জায়গায় এই লেখা আমার দুই বছরের অভিজ্ঞতা, জাগরণ ও বর্তমান পরিস্থিতিকে নিয়ে নির্মিত। তার কারণ এই প্রজন্মের মানুষ হয়তো মনে করবে যে, কোপাই নামক নদীর আর কোনো রকমের অস্তিত্ব নেই। কিন্তু আমি জানাতে চাই, কোপাই একটা নদীর নাম ছিল এককালে।