শামসুর রাহমান: নাগরিক অনুষঙ্গে নিঃসঙ্গ শেরপা

সাইফ ইবনে রফিক

প্রকাশিত : আগস্ট ১৭, ২০১৯

১.
কবিতা নিয়ে আড্ডায় শামসুর রাহমান বললেন, ‌‌`আমার সমকাল বুদ্ধদেব বসু থেকে সাঈফ ইবনে রফিক পর্যন্ত বিস্তৃত। দুজনকেই আমি সামনাসামনি দেখেছি।`

২.
যেদিন বাংলাদেশ খাকবে না, সেদিন আপনার ‘স্বাধীনতা তুমি’ কবিতাটার আবেদনও ফুরিয়ে যাবে রাহমান ভাই। আধুনিক বাংলা সাহিত্যের প্রধান কবিরে খোচাটা ঠিক মতোই মারতে পারছিলাম। বললাম, রাজনৈতিক ভূগোলের এই মানচিত্রতো যে কোনও সময়ই বদলে যেতে পারে। স্বভাবসুলভ চুপ থাকলেন শামসুর রাহমান।
ঘণ্টা দুয়েক পর। শ্যামলিতে কবির বাসায় তার সাথে ভাত খাইতে বইসি। এমন সময় কবি বললেন, সাঈফ ইবনে রফিক, শেষ লাইনটা খেয়াল করো। বলা হচ্ছে, ‘যেমন ইচ্ছে লেখার আমার কবিতার খাতা’। কবিতার খাতাটা, লেখার ইচ্ছেটা চিরন্তন, দেশকালের উর্ধে।
এবার শামসুর রাহমানরে গুরু না মাইন্যা উপায় নাই।

৩.
কাজী নাসির মামুন এবং সাঈফ ইবনে রফিক শ্যামলিতে ঘুরছেন।
লেখকের বইয়ের নাম ‘টেবিলের ওপর আপেলগুলো হেসে ওঠে’। এমন ক্ষণজন্মা কবিকে দেখতে যাচ্ছি, তাই আমাদের হাতে দুই কেজি আপেল। শ্যামলিতে তার বাসা খুজে পাচ্ছি না। সোসাইটির টানানো একটা বোর্ডে দেখলাম, নাম লেখা শামসুর রহমান। ভুল বানান, মুর্খের দেশ বলে মেনে নিলাম।
রাহমান ভাইয়ের বাসার নিচ তলার প্রকান্ড ড্রয়িংরুম দেখে মাথা ঘুরে গেলো। জিগাইলাম, আপনার সোর্স অফ ইনকাম কি? মিষ্টি হেসে রাহমান ভাই বললেন, পৈত্রিকসূত্রে পাওয়া বাড়ি। জিগাইলাম, অংশীদার নাই? কইলেন, এরশাদের আমলে একটা প্লট পাইসেন গুলশানে। ওইটা ছোট ভাইরে দিয়া এটায় তিনি থাকেন।
কবি কোটায় প্লট পাইসিলেন নাকি? ঔদ্ধত্যপূর্ণ এই প্রশ্নে উত্তরে তিনি বলেছিলেন, নারে ভাই সাংবাদিক কোটায়।

৪.
সাকুরা বারে গলা পর্যন্ত মদ খেয়েছেন অকালপ্রয়াত কবি রাকিবুল হক ইবন। সঙ্গে আরেক অকালপ্রয়াত কবি সুমন প্রবাহন। কিন্তু কারো পকেটেই কোনও টাকা-পয়সা নাই। দুজনকে বেঁধে ফেললো সাকুরা বারের ওয়েটাররা। এবার কবি পরিচয় দিলো ইবন। বলল, শামসুর রাহমানের বাসায় ফোন দিতে।
পরে রাহমান ভাইয়ের হস্তক্ষেপে রক্ষা পায় শূন্য দশকের দুই কবি।

লেখক: কবি ও গণমাধ্যমকর্মী