শাহীদ লোটাসের ৭ কবিতা

প্রকাশিত : জানুয়ারি ০৫, ২০২০

বিদায়

তুমি তো জানো, প্রাচীন সর্প মানে জিন
আর আমরা বয়স্ক হলে বৃদ্ধ হয়ে যাই
যেখানে নক্ষত্রের মতো উল্কা উড়ে আসে কাছে
অন্ধকারে জেগে ওঠে সুপারি অথবা আমের ডাল
সেখানে মৃত্যু আমাদের চোখে চিঠি দিয়ে যায়
অপক্ব চোখ বৃথা যায় না।

যে ঘরে জন্মেছে বাবা
সে ঘরে আমার মৃত্যু নাও হতে পারে
তবু তো আমি মৃত্যুর কাছে পরাজিত,
জন্ম থেকে মৃত্যু আর আমার যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা।

কখনো কি সন্ধ্যা দেখেছ তুমি?
চঞ্চল চিত্ততা নিয়ে তাকিয়ে দেখেছ কি
কিভাবে দিনের আলোটুকু নীরব আঁধারে শেষ হয়?
আমবাগানের পুকুরঘাটে কেমন আঁধার
ভয় জাগানিয়া জেগে ওঠে
জেগে উঠে জিনপরি শয়তান
পাখিদের ঘরে ফেরায় যদি কলরব হয়
আমার ঘরে ফেরায় তোমাদেরও কান্নার কলরব
তা তো হতেই পারে!
এ যে পৃথিবীর শত্রুমিত্র সখা থেকে চির বিদায়।

নীরব প্রাণ

দেখেছি, আমি দেখেছি
মাটির ভেতরে লুকিয়ে থাকা প্রাণ কি করে ঘাস হয়
ঝরণায় ঝরে যায়, মাটির কদমে কি করে শুষ্ক হয় মরুর বুক
নোনা প্লাবনের বেদনায় একরাশ অভিমানী দীর্ঘশ্বাস
কি করে ধীরে ধীরে হয়ে যায় প্রশান্তি
আমি দেখেছি তোমাদের ধু ধু মাঠের পাশে জারুল হিজল বেতবন
আর তোমাদের অদৃশ্য নীরব প্রাণ।

মায়াজাল

ইচ্ছে ছিল জমজমাট যজ্ঞ হবে আমার
ইটের গুঁড়া গুঁড়া তাসের চিহ্নবিশেষ
চিংড়ি মাছের মতো বিড়বিড় করে আসবে কাছে
আসবে লালমণি নকল দালান
খাজনার চালানে কলাবন সাজবে বিয়েবাড়ি সাজ
আমি জানি, সেখানে বিদ্যুৎ নেই। নেই আলো অথবা আঁধার
আমাকে সংস্কারের জন্য যারা আগমন করবে তারা সবাই অপরিচিত,
কখনো কোনও কেটলির পাশে ধোঁয়া উড়া দুপুরে আমরা চা খাইনি
অথবা কফি-শপেও কখনো বসা হয়নি আমাদের
তাদের হাতেই থাকবে স্মারকলিপি আমার নোটবই ডায়েরি,
ছপছপ দীর্ঘ চাটাই গঠন পারিপাট্য এক নির্ভুল বর্ণনা
আমি তরল পদার্থের মতো পতন হয়ে গেছি ততদিনে
আবার পানিভাঙা বেদনায়। আমার আর স্তনের আকর্ষণ নেই
নেই জলখাবার, ফুলের দাগে দাগে আমি ভেসে বেড়াই,
স্বপ্নে যেভাবে পুরুষ হই, হই পৃথিবীর বাইরে অন্য পৃথিবীর মানুষ,
সেই পৃথিবীই সত্য হয় এই পৃথিবী মিথ্যে করে।

আমি বা আমরা জানি না কোন পৃথিবী সত্য
কোন পৃথিবী সত্যের মতো মায়াজাল।

অজানা তথ্য

আয় আয় মহাকাল
আয় আয় উৎকণ্ঠা— শূন্যতা এই আঁধারে
খণ্ডিত আনন্দিত নক্ষত্রমণ্ডলে।
দেখে যায় এইবার বিশেষে অতিথির মেলা
গোধূলির লাল রং আকাশে
আদিম ঝরণার মতো খেলা করে।

এ নবজীবন সঞ্চার
সর্বাঙ্গ বিন্দু বিন্দু চিহ্নিত জীবন
এ তাপিত হৃদয়ের আনন্দ
ঘরোয়া ঝগড়া-বিবাদের পর প্রিয়তম চুম্বন।
এ রাজ্যের অন্তর্বিপ্লব উত্তর-পূর্ব কোণ
অল্প ফাঁক, মাটি চাপা শেষ হলে চল্লিশ কদম দূরে সকলেই দাঁড়াক।

এ লোকান্তরিতায় মাটি কামড়ানো ইঁচড়ে পাকা যৌবন
আঁধার ঘরের মানিক আজ হারালো গুপ্তধন।
এ বিধি অনুযায়ী উত্তরাধিকারী ঋণ পরিশোধের
শেষ সময় কাল, সমস্ত দেহব্যাপী ঢালা একছাঁচে
একখানি সাড়ে তিন হাত সাদা কাপড়ের সকাল।

গোরস্থান

জীবন সন্ধ্যায় তুমিও আসবে এখানে
চিতা, গোরস্থান, সমাধিক্ষেত্র— যাই বলো!
ও সহচর, ও দেহী, দুর্বৃত্ত,
নিদ্রালুযার উপরে শোয়া হয় গোর আজাবে
নিঃসহায় নিরাশ্রয় সাদা মাঠা সমাধানে অজানা তথ্য।
আজ আমার সমাপন সান্দ্র শোকানল,
এ দিবা কিংবা রাত্রির অবসান, রূপ ঝলমল।

অজানা সত্য

একি অন্ধকারে প্রবেশ নাকি প্রকৃত আলোয় নিজেকে দেখা?
আজ আমি দোভাষী বা বহুভাষী হয়ে বেশ তড়িঘড়িই চলে যাচ্ছি
মূলত তোমরাই আমাকে চলে যেতে বাধ্য করছ!
এখানে উত্তাপ, উত্তাল রহস্যের উন্মুক্ত ভিটা,
এরপর অজানার আর কোনো কিছু নেই বা নেই কোনও রহস্য
আমি চারজন শ্রেষ্ঠ ফেরেশতার অন্যতম একজনকে দেখে ফেলেছি
যার শিঙার ফুৎকারে কেয়ামত হবে, তাকেও দেখতে চলেছি খুব শিগগিরিই
তোমাদের কাছে যা দ্বিধা আর রহস্য তা আমার কাছে পরিষ্কার
অথচ আমি তোমাদের কিছুই বলতে পারছি না।
বলতে পারছি না প্রকৃত সত্য।

টিকটিকি

এখানে কিছু টিকটিকি আছে
লুকিয়ে আছে জানালার পাশে
দরজার আড়ালে,
টিকটিকিগুলো এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে!
ওখানে আরো কিছু টিকটিকি রয়েছে, যারা
খুব স্থির হয়ে প্রহরির মতো দেখছে আমাকে।
এতে ওদের লাভ কি?
ওড়া তো পোকা খায়, পোকাতেই ওদের সন্তুষ্ট থাকার কথা
অথচ আমাকে দেখছে ওরা!
যেন আমি ওদের খুব কাছের কেউ,
তাই আমার মৃত্যুতে ওরা নীরব হয়ে গেছে।