শিক্ষার্থীরা গণ-বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রজা নয়
রাহমান চৌধুরীপ্রকাশিত : ডিসেম্বর ১১, ২০২৫
গণ-বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আর দুর্নীতিবাজ উপাচার্যের চরিত্র এত ঘটনার পরেও পাল্টায়নি। শিক্ষার্থীদের ভয়ভীতি দেখিয়েই চলেছে। গণ বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি ছাত্রীকে ধর্ষণের ঘটনায় উপাচার্য, ডীন, বিভাগীয় প্রধানসহ সকলের লজ্জা পাওয়া দরকার। ক্ষমা প্রার্থনা করার কথা। কিন্তু তারা তা না করে উপরন্তু নিজেদের পেশীশক্তি ব্যবহার করে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর আক্রমণ চালিয়েছে। হাসপাতাল পর্যন্ত গিয়েছে পুনরায় সন্ত্রাসীরা আহত ছাত্রকে হামলা চালাতে। এখন উপাচার্য আর শিক্ষকরা বিজ্ঞপ্তি দিয়ে ভয় দেখাচ্ছে আন্দোলনরতদের শিক্ষার্থীদের।
বলছে, ট্রাস্টি বোর্ড, প্রশাসন, উপাচার্য বা শিক্ষকদের বিরুদ্ধে সোস্যাল মিডিয়ায় মন্তব্য করা যাবে না। মনে হচ্ছে যেন শিক্ষার্থীরা তাদের দাস। হাস্যকর, ওনারা হুকুম দিয়ে দিলেন শিক্ষার্থীরা তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ করতে পারবে না। কী আশ্চর্য কথা! মনে রাখতে হবে, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা শিক্ষকদের চাকরি করে না। শিক্ষার্থীরা টাকা-পয়সা দেয়, যার কারণে শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের পাঠদান করতে বাধ্য। শিক্ষকরা এখানে আসলে শিক্ষার্থীদের চাকরি করছে। শিক্ষার্থীদের টাকায় এখানে সকল শিক্ষকের, প্রত্যেক কর্মচারীর বেতন হয়।
শিক্ষার্থীরা টাকাটা দেয় কেন? কারণ বিশ্ববিদ্যালয় তাদেরকে শিক্ষাদান করবে, শিক্ষার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয়ে নিরাপত্তা দেবে, তাদেরকে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ দেবে। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে এই টাকাগ্রহণ করার বিনিময়ে তাদেরকে যোগ্য শিক্ষক দেবে, অধ্যয়ন করার পরিবেশ বজায় রাখবে। গণ-বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে এই শর্ত মেনে চলেনি। কারণ তারা শিক্ষার্থীদের শিক্ষার পরিবেশ দিতে পারেনি, শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা দিতে পারেনি। চুক্তি লঙ্ঘন করেছে বিশ্ববিদ্যালয়। কারণ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপরে হামলা হয়েছে। একজন ছাত্রীকে ধর্ষণের শিকার হতে হয়েছে।
ব্যাপারটা এখানেই শেষ নয়। ছাত্রী ধর্ষিত হবার পর ডীন, বিভাগীয় প্রধান ছাত্রীর নালিশ গ্রহণ করেনি। ছাত্রী নিরাপত্তা পায়নি যেমন, ন্যায়বিচার পর্যন্ত পায়নি। অথচ পুলিশকে বলার সঙ্গে সঙ্গে চার ধর্ষককে গ্রেফতার করা হয়। ভিন্ন দিকে বিশ্ববিদ্যালয় এপ্রিল থেকে নভেম্বর মাস পর্যন্ত কিছুই করেনি। চুপ করে ছিল। ফলে পুলিশ যদি নালিশ করার সঙ্গে সঙ্গে অপরাধীদের গ্রেফতার করতে পারে, বিশ্ববিদ্যালেয়ের প্রশাসন কিছুই করতে পারলো না কেন? বিশ্ববিদ্যালয়ের এই ব্যর্থতার পর সচেতন ছাত্র-ছাত্রীরা প্রশাসনকে ধিক্কার দেবে না তো কি প্রশংসা করবে?
শিক্ষার্থীদের প্রতি তার কর্তব্য গণ-বিশ্ববিদ্যালয় পালন করেনি। প্রশাসন শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টাকা গ্রহণ করেছে, সব শিক্ষকরা নিয়মিত বেতন পেয়েছে, কিন্তু তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব প্রশাসন পালন করেনি। এই অবস্থায় তারা শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে কী আশা করে? নিন্দা নাকি প্রশংসা? গণ-বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কেবল চুক্তি ভঙ্গ করেনি, তারা সচেতনভাবে অপরাধ করেছে। পুলিশ কর্তব্যপরায়ণ হতে পারলেও গণ-বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তা পারেনি। ধর্ষকদের পক্ষ নিয়েছে তারা। না হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকা নীরব ছিল কেন? ট্রাস্টিরা নীরব কেন? বিশ্ববিদ্যালয় কি আশা করে, তারা তাদের কৃতকর্মের ফল ভোগ করবে না?
বিশ্ববিদ্যালয় দু’তিন মাস বা ছয়মাস ধরে অনিয়ম করছে না, করছে বছরের পর বছর ধরে। আমি শুধুমাত্র বর্তমান উপাচার্যের কালেই আলোচনা সীমাবদ্ধ রাখতে চাই। বর্তমান উপাচার্যের আমলে যত অপকর্ম হয়েছে তার সব ফিরিস্তি এখানে দেওয়া সম্ভব নয়। সামান্য কয়েকটা দিচ্ছি। বছর দুয়েক আগে আইন বিভাগের শিক্ষক লিমন আর এইবারের ধর্ষক অন্তু রাজনীতি ও প্রশাসন বিভাগের এক শিক্ষার্থী আবিদকে অন্যায়ভাবে পিটিয়ে এমনভাবে আহত করে যে, তাকে অনেকদিন হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে হয়।
গণ-বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন কি তার বিচার করেছে? সেই ছাত্রটি কি ন্যায়বিচার পেয়েছে? অন্তুর এত সাহস বারবার কোথা থেকে হয়? প্রশাসন, উপাচার্য, আইন বিভাগ যে অন্তু দেওয়ানকে লালন পালন করে, তা এসব ঘটনায় প্রমাণিত। না হলে আবিদ ন্যায়বিচার পেল না কেন? আবিদ ন্যায়বিচার না পাবার জন্য রাজনীতি ও প্রশাসন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান, আইন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর, সবার ওপরে উপাচার্য মিলিতভাবে দায়ী। শিক্ষার্থীরা তাহলে কোন্ যুক্তিতে এইসব ব্যক্তিতে আর সম্মান দেখাবে? সাধারণ শিক্ষার্থীদের ধৈর্যের বাধ কি তারা ভেঙে দেয়নি?
শিক্ষার্থীরা তারপরেও নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন করেছে। কারো ওপরে আক্রমণ চালায়নি। বরং প্রশাসনের লোকরা অকারণে আক্রমণ করেছে আন্দোলনকারীদের ওপরে। ডীন নীলুফারের পক্ষে কতিপয় শিক্ষার্থী মিছিল করেছে, এটা কি প্রমাণ করে না এটা একটা ষড়যন্ত্র? যেসব শিক্ষার্থীরা এই অপকর্ম করেছে তারা কারা? হঠাৎ বিচ্ছিন্নভাবে নীলুফারের পক্ষে মিছিল কেন? এই রকম কতিপয়ের মিছিল হয়েছে অন্তু দেওয়ানের পক্ষে। এই দুটি ঘটনা কী প্রমাণ করে? নীলুফার ডীন হয়ে এই ধর্ষণের ঘটনা সামনে আনলো না কেন? নীলুফার সব জানতো। সেই নীলুফারকে নির্দোষ বানাবার অপচেষ্টা কেন?
পুলিশ শিক্ষার্থীদের অভিভাবক নয়, তবুও তারা যা পারলো গণ-বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তা পারলো না কেন? নীলুফার তা ছয়মাস ধামাচাপা দিয়ে রাখলো কেন? গণ-বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষের দিক থেকে কি একটাও ইতিবাচক ভূমিকা আছে? তারা একটা পাপ ঢাকতে আর একটা পাপ করেছে। এভাবে উপাচার্য আবুল হোসেনের আমলে একটার পর একটা পাপের সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে, যার ভুক্তভোগী সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীরা। শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে আবুল হোসেন উপাচার্য হিসেবে তার দায়িত্ব পালন করেনি। বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের যে শর্ত, সেই শর্ত প্রথম ভেঙেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
পুলিশরা অপরাধীদের গ্রেফতার করে স্পষ্ট করে দিয়েছে উপাচার্য, ডীন আর সংশ্লিষ্ট শিক্ষকদের কেউ তাদের নিজ-নিজ দায়িত্ব পালন করেনি। বরং আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরাই একজন ধর্ষিত ছাত্রীর প্রতি তাদের দায় পালন করেছে। তাদেরকে এখন পুনরায় উপাচার্য ভয় দেখিয়ে আর একটি অনিয়ম সৃষ্টি করলো। এরা যে ন্যায়প্রতিষ্ঠা করতে চায় না, তা বারবার প্রমাণ করেছে। শাক দিয়ে আর মাছ ঢাকার সুযোগ নেই। বাংলাদেশের তথা ঢাকা শহরের সচেতন মানুষ প্রতিদিন এসব ঘটনা পড়ছে আর ট্রাস্টি বোর্ডসহ পুরো প্রশাসনকে ধিক্বার দিচ্ছে। ভিন্ন দিকে শিক্ষার্থীদের দিচ্ছে বাহবা। কূয়োর ব্যাঙরা তা কূয়োর মধ্যে বসে টের পাচ্ছে না। রাজনীতিকরাও এখন এসব নিয়ে আলোচনা করছে। গণ-বিশ্ববিদ্যালয় তাদের কাছে এখন একটি প্রশ্নবোধক চিহ্ন।
বিশ্ববিদ্যালয় কীভাবে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে তার শর্ত ভেঙেছে তার জ্বলজ্যান্ত প্রমাণ লিমন। গণ-বিশ্ববিদ্যালয় চুক্তিমতো যোগ্য শিক্ষক দেয়নি শিক্ষার্থীদের। লিমনের মতন এমন অযোগ্য শিক্ষক চাপিয়ে দিয়েছে শিক্ষার্থীদের ওপর, যে ছাত্রীদের দিনের পর দিন যৌন হয়রানি করেছে। বহু ছাত্রী কয়েকদিনে এই অভিযোগ তুলেছে লিমনের বিরুদ্ধে। লিমন নানাভাবে যৌন নিপীড়ন চালিয়েছে ছাত্রীদের ওপর। বিশ্ববিদ্যালয়ের কি শিক্ষার্থীদেরকে লিমনের মতন শিক্ষক দেয়ার কথা ছিল? লিমনের মতন শিক্ষক শিক্ষার্থীদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া কি পুরো প্রশাসনের আর উপাচার্যের ব্যর্থতা নয়? তাহলে ব্যর্থতার দায়ে কার ক্ষমা চাইবার কথা? শিক্ষার্থীদের কাছে উপাচার্যের আর পুরো প্রশাসনের ক্ষমা চাইবার কথা নয় কি? নাকি লিমনের মতন যৌন নিপীড়নকারী শিক্ষকের দায় নিতে হবে ছাত্রদের? লিমনের মতন শিক্ষক থাকলে, সেই বিভাগে অন্তুর মতন ছাত্র থাকবেই। অন্তুর অনেক দায় তাই লিমন, উপাচার্য আর প্রশাসনকে নিতে হবে। ছাত্রদেরকে কি ভয় দেখাবে প্রশাসন? প্রশাসনকে তার কৃতকর্মের জন্য ভয় পেতে হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ে যারা পড়তে আসে তাদের বয়স ১৮র বেশি, তারা দেশের পূর্ণ নাগরিক। আপনি শিক্ষক হলেও যেমন নাগরিক, সেও ঠিক তেমনি একজন নাগরিক। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা প্রশাসনের প্রজা নয়। নাগরিক হিসেবে শিক্ষক আর শিক্ষার্থীদের মর্যাদা এখানে সমান, এটা না বুঝলে আপনার বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াবার যোগ্যতা নেই। একজন নাগরিক হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্রছাত্রী রাষ্ট্রপ্রধানের কড়া সমালোচনা করার অধিকার রাখে, আপনি উপাচার্য সেখানে কোন মহাজন যে আপনার সমালোচনা করতে পারবে না? রাষ্ট্রপ্রধান মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে সোস্যাল মিডিয়ায় কতরকম সমালোচনা হচ্ছে। তিনি কি সেইজন্য নোটিশ দিয়ে কাউকে ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন?
আর আপনারা বলছেন, সোস্যাল মিডিয়ায় আপনাদের সমলোচনা করা যাবে না। এই সব হিটলারি কথাবার্তা এর আগেও আপনারা বলেছেন। এর আগেও আপনারা যখন তখন নিজেদের অপরাধ ঢাকতে শিক্ষার্থীদের শাসিয়েছেন। প্রক্টর এর আগে একবার চিঠি দিয়ে বলেছে, সোস্যাল মিডিয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীরা কিছু লিখতে পারবে না। ভাবখানা যেন এই গণ-বিশ্ববিদ্যালয়, সোস্যাল মিডিয়া তাদের পৈত্রিক সম্পত্তি। এর জানেই না, এদের এখতিয়ার কতটুকু। এরা জানে না বিশ্ববিদ্যালয় কাকে বলে। এদের ধারণায় নেই প্রাথমিক আর মাধ্যমিক শিক্ষার সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার পার্থক্য কী।
গণ-বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ভয় দেখিয়ে যে নোটিশ দিয়েছে সেটা হলো রাষ্ট্রের গণতন্ত্রের ওপর আক্রমণ, নাগরিক অধিকারের ওপর আক্রমণ। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা এইরকম অঙ্গীকার করে না যে, তারা শিক্ষকদের সমালোচনা করবে না। বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠ করার জন্য নাগরিক অধিকার বিসর্জন দেবে শিক্ষার্থী এমন কথা বিশ্ববিদ্যালয় আইনের কোথাও লেখা নেই। বিশেষ করে যাদেরকে শিক্ষার্থীরা বেতন দেয় তাদের কাছে শিক্ষার্থীদের আবার কীসের জবাবদিহিতা? সেরকম থাকলে তো শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে, এরশাদের বিরুদ্ধে, আইয়ুব শাহী, ইয়াহিয়ার বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করেতে পারতো না। আপনারা সে তুলনায় নগণ্য ট্রাস্টি আর উপাচার্য, যারা শিক্ষার্থীদের টাকা আর দয়ার ওপর নির্ভর করেন। আপনাদের নোটিশ তাই একটি অপসংস্কৃতির নমূনা, আপনাদের অবৈধ ক্ষমতা প্রদর্শন। এটা মানুষের বাক-স্বাধীনতার প্রতি অবমাননা।
বাংলাদেশে বহু বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্যের বিরুদ্ধে বহু আন্দোলন হয়েছে। আপনারা এমন কোনো দেবতা নন যে, আপনাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করা যাবে না। আপনারা আর দশজন নাগরিক থেকে আলাদা কিছু নন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আনোয়ারউল্লাহ চৌধুরীর কথা মনে আছে? শামসুন নাহার হলে পুলিশকে ঢুকতে দেওয়ার জন্য তার বিরুদ্ধে কীরকম আন্দোলন হয়? উপাচার্যের বিরুদ্ধে আন্দোলন করা যাবে না কোন আইনে লেখা আছে? ধিক্কার দেওয়ার মতন কাজ করলে ধিক্কার দেওয়াও যাবে। আনোয়ারউল্লাহ চৌধুরীকে রাতারাতি কীভাবে পদত্যাগ করতে হয়েছিল মনে আছে? আসলে তখন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার মতন ব্যক্তি ছিলেন, তাই তা সম্ভব হয়েছিল।
আর গণ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টিদের চরিত্রটা কী? অপরাধের সঙ্গে বসবাস করা, অপরাধকে লালন করা তাদের প্রায় সকলের চরিত্র। সেই ট্রাস্টিদের সমালোচনা কেন করবে না শিক্ষার্থীরা? একটি ছাত্রী ধর্ষিত হবার পর তারা কি এখন পর্যন্ত একটি বিবৃতি দিয়েছে? শিক্ষার্থীদের কথা শুনতে চেয়েছে? ন্যায়বিচার করেছে ধর্ষিত ছাত্রীর প্রতি? নারীপক্ষের নারীবাদী শিরিন হকের ভূমিকাটা কী এই ধর্ষণের পর। অন্যের বেলায় খুব বিপ্লবী, এখন নিজের বিশ্ববিদ্যালয়ের ধর্ষণের বেলায় চুপ কেন? গণ-বিশ্ববিদ্যালয়ের আর এক ট্রাস্টি মহান বুদ্ধিজীবী অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর ভূমিকা কী এই ঘটনায়? পুলিশ প্রশাসন ধর্ষণের ঘটনায় যতটুকু দায়িত্ববোধ প্রমাণ করতে পেরেছে, সেই তুলনায় ট্রাস্টিদের ভূমিকা লজ্জাজনক। শিক্ষার্থীরা তাদের ধিক্কার দেবে না তো কী তাদের নামে জয়ধ্বনি দেবে?
খুব স্পষ্ট করে বলি, গোপালগঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়ের এক উপচার্যের যৌন নিপীড়নের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করে, তাকে নানা বিশেষণে ভূষিত করে। তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে, এটাকেই বলে যেমন কর্ম তেমন ফল। সেইজন্য তখন কোনো ছাত্রের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়নি। শিক্ষার্থীদের কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ উত্থাপিত হয়নি। ন্যায়ের বিপরীতে গিয়ে কিছুই করার সাহস ছিল না তখন কারো। বরং উপাচার্যকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। লিমনের মতন যৌন নিপীড়নকারীকে চাকরি দেওয়ার জন্য, অন্তুর মতন ধর্ষককে লালন পালন করার কারণে, তাদের পক্ষ নেওয়া এবং ধর্ষিত হওয়ার পর এক ছাত্রীকে আপনারা যেভাবে ন্যায়বিচার পাবার অধিকার থেকে বঞ্চিত করেছেন, তার জন্য আপনাদের সকলকে সেই রকমভাবেই বহিষ্কার করা দরকার। বিশ্ববিদ্যালয়ে যারা সম্মানিত শিক্ষক তাদের শিক্ষার্থীরা সবসময়ই সম্মান করে। শিক্ষার্থীরা কখনো তাদের বহিষ্কার চায় না।
শেষ কথা হলো বহু টাকা ব্যয় করে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা আসে কারো দ্বারা শাসিত হবার জন্য নয়, অধ্যয়ন করার জন্য। শিক্ষকদের কাজ কাউকে শাসন করা নয়, শিক্ষার্থীদের অধ্যয়ন করার পথ দেখানো। সেইজন্য দরকার যোগ্য শিক্ষক। বিশ্বের বহু উন্নত বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা শিক্ষকের পড়ানোর মান বিচার করার অধিকার রাখে। শিক্ষক যোগ্য কিনা সেটা প্রমাণ করতে শিক্ষার্থীরা শিক্ষকের পাঠদানের ওপর নম্বর দেয়। শিক্ষক সেখানে উপযুক্ত নম্বর না পেলে বিদায় নিতে বাধ্য হয়। গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সেরকম নম্বর দেওয়া আরম্ভ করলে কজন শিক্ষক টিকবে? যারা তখন টিকবে না, তারাই দমন নিপীড়ন করে টিকতে চায়।
লেখক: সাহিত্যিক ও শিক্ষাবিদ
























