শুরু হয়েছে তিন প্রজন্মের শিল্পীদের নিয়ে চিত্রকর্ম প্রদর্শনী

ছাড়পত্র ডেস্ক:

প্রকাশিত : মার্চ ১৩, ২০২৪

রাজধানীর শিল্পাঙ্গন গ্যালারীতে তিন প্রজন্মের ২৬ জন শিল্পীদের মোট ৫২টি শিল্পকর্মের সম্বনয়ে চলছে নন্দনচিত্ত্ব আয়োজিত যৌথ চিত্রকর্ম প্রদর্শনী।

৫২টি শিল্পকর্ম নিয়ে ৯ মার্চ (শনিবার) শুরু হয়েছে এই প্রদর্শনী। উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে ছিলেন স্বনামধন্য চিত্রশিল্পী বীরেন সোম ও খ্যাতনামা শিল্পী সমালোচক ও অধ্যাপক ও লেখক মইনুদ্দীন খালেদ। বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন বিশিষ্ট চিত্রশিল্পী রশিদ আমিন ও সুশান্ত কুমার অধিকারী।

শিল্প প্রদর্শনীর মাধ্যমে শিল্পজগতে নিজেদের উপস্থিতি জানান দিতেই নন্দনচিত্বের এই স্বল্প প্রয়াস। প্রদর্শনীতে স্থান পাওয়া চিত্রকর্মগুলোর বিষয়বস্তু হিসেবে জীবন, উল্লাস, আকাঙ্খা, ফুল, পাখি, জাগতিক উপাদন, মনোজাগতিক চিন্তা, ইতিহাস, ঐতিহ্য, পৌরাণিকসহ নানান বিষয় স্থান পেয়েছে। বিশেষ করে নারীবাদী অনুষঙ্গের আধিক্ষ লক্ষণীয়। এসব বিষয়গুলো প্রাচ্য আর পাশ্চাত্যের বহুল মিশেলে বস্তুনিষ্ঠ মূর্ত, অর্ধ- বিমূর্ততা, বিমূর্ততা, অধিবাস্তবতা আর নানান ঢঙে ফুটে উঠেছে শিল্পীদের নিজস্ব শৈলীতে।

এছাড়া ক্যানভাসে রঙ এবং সহজীয়া নানান ফর্মের আবেগের সাথে সংযোগ এবং রক্ষণাবেক্ষণ পুনরাবৃত্তি লক্ষ করা যায়। যা কিনা শিল্পীরা স্থিতিশীলতাকে উত্তাল গতির নানান ফর্মের মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করেছেন। আবার প্রকৃতির দৃষ্ট রঙের লালিত বৈশিষ্ট্য বাদ দিয়ে নিজস্ব ঢঙে উপস্থাপন করেছেন। রঙের ব্যবহার প্রকৃতির বৈচিত্র্যকে ক্যানভাসে ভিন্ন মাত্রা দিয়েছে। প্রদর্শনীটিতে মিশ্রমাধ্যমের ব্যবহার লক্ষণীয়। নানান চিত্রকর্মে মিশ্রমাধ্যমের ব্যবহারিক প্রয়োগ ভিন্নতা যোগ করেছে।

জিন্স, সুতা, সূচিকর্ম, কোলাছ ব্যবহার এগুলো মধ্যে উল্লেখযোগ্য। বিশেষ করে ফর্মের সাথে ফর্মের সহজ-সাবলিল উপস্থিতিও যেমন আছে তেমনি আছে ফর্মের ভাঙ্গন, রঙের সাথে রঙের তরঙ্গায়িত রূপান্তর বিশেষভাবে লক্ষণীয়। পিকটোরিয়াল এ্যালিমেন্টের আয়োজন স্বমহিমায় নিজের অবস্থান ঘোষণা করেছে। অধিকাংশ ক্যানভাসে বিভিন্ন ফর্মগত আকারাদির পরিবর্তনে মেটামোরফিজমের রাজত্বকে তুলে ধরে। নতুন গতিপথে এ যেন এক অন্য মেটামোরফিজম। বিশেষ করে বিমূর্ততায় জ্যামিতিক ফর্মের উপস্থিতি দেখা যায়। বলা যায়- শিল্পের অন্তর্নিহিত রূপ-রস-গন্ধ সমগ্র সৃষ্টি জগতকে প্রাণচঞ্চল করে তোলে। আমাদের এ ছোট্ট প্রয়াস যেন তারই সামিল হয়ে উঠে।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে খ্যাতনামা শিল্পী সমালোচক ও অধ্যাপক ও লেখক মইনুদ্দীন খালেদ বলেন- ‘আমাদের সবার স্মরণ করা উচিত ফয়েজ আহমেদ এর কথা যার কথা বর্তমান প্রজন্মরা জানেনা। তিনি কমিউনিস্ট এবং বিখ্যাত শিল্প ব্যক্তিত্ব ছিলেন। এতো সরল মানুষ খুব কম লক্ষ করা যায়, রেটিং করলে ৪/৫ জনের মধ্যে একজন হচ্ছেন তিনি। ফয়েজ আহমেদ এবং কামরুল হাসানের সম্পর্ক ছিল একটা অভিসন্দর্ভ। এগুলো আমাদের বুঝতে হবে, আমরা একটু দেরিতে বুঝি। এই হলো আমাদের সমস্যা, শিল্প হচ্ছে, পুঁজিবাদীদের কোলে করে লালন করার মতো।’

তিনি আরও বলেন, এই কমিউনিস্ট ফয়েজ আহমেদ যেহেতু শিল্পপ্রেমী ছিলেন তাই তার হাত ধরেই ৯০ এর দশকে শিল্পীরা বেঁচে ছিলেন বলা যায়। ১৯৯২ সালে শিল্পাঙ্গন গ্যালারি যখন ধানমন্ডি ছিল তখন আশেপাশে প্রচুর পরিমাণ ব্যাংক, অফিস এবং এগুলোর অনেক শাখা হচ্ছিলো। সেই সকল প্রতিষ্ঠানের ব্যক্তিদেরকে শিল্পকর্ম কেনার জন্য উদ্ভুদ্ধ করেন। এছাড়া বিভিন্ন গার্মেন্টস প্রতিষ্ঠানের জন্য ও বেশ চড়া দামে ক্রয়- বিক্রির সুযোগ তৈরি করে দিলেন।’

প্রদর্শনীতে অংশ নেয়া ২৬ জন শিল্পী মধ্যে ছিলেন- আজাদী পারভীন, রশিদ আমীন, সুশান্ত কুমার অধিকারী, রাশেদ সুখন, নাজনীন আকতার, সুব্রত দাস, আবু কালাম শামসুদ্দিন, অনির্বান মল্লিক, তাসলিমা আকতার বাঁধন, রাশেদুর রহমান, রুমানা ইসলাম রূপা, মোছা. তানিয়া আফরোজ, তর্পন পালসহ অনেকে।

প্রদর্শনীটি চলবে ১৫ মার্চ পর্যন্ত। দুপুর ৩টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত প্রদর্শনীটি উন্মক্ত থাকবে সবার জন্য।