
সঙ্গীতজ্ঞ অতুলপ্রসাদ সেনের আজ মৃত্যুদিন
ছাড়পত্র ডেস্কপ্রকাশিত : আগস্ট ২৬, ২০২৫
বাংলা ভাষায় প্রথম গজল রচয়িতা অতুলপ্রসাদ সেনের আজ মৃত্যুদিন। ২৬ আগস্ট, ১৯৩৪ সালের ২৬ আগস্ট তিনি মৃত্যুবরণ করেন। ১৮৭১ সালে ২০ অক্টোবার তার জন্ম ঢাকায় তার নানাবাড়িতে। তার আদি নিবাস শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার মগর গ্রামে।
খুব অল্প বয়সেই বাবাকে হারিয়ে অতুল প্রসাদ নানা কালীনারায়ণ গুপ্তের কাছে বড় হন। নানার কাছেই সঙ্গীত ও ভক্তিমূলক গানে তার হাতেখড়ি। ১৮৯০ সালে প্রবেশিকা পাশের পর অতুল প্রসাদ কিছুদিন কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজে পড়াশোনা করেন। পরে লন্ডনে গিয়ে আইন-বিষয়ক পড়াশোনা করেন।
বাংলা ভাষা সাহিত্যে ও সঙ্গীতের এক অতি পরিচিত নাম অতুল প্রসাদ সেন ছিলেন একাধারে কবি, গীতিকার ও গায়ক। তবে বাংলাভাষীদের কাছে অতুল প্রসাদ সেন মূলত একজন সঙ্গীতজ্ঞ ও সুরকার হিসেবেই পরিচিত। ব্রিটিশ ভারবর্ষে ঊনবিংশ শতাব্দীতে একজন বিশিষ্ট বাঙালি গীতিকার, সুরকার ও গায়ক হিসেবে তিনি সুনাম অর্জন করেন।
অতুল প্রসাদ সেনের গানগুলি মূলত স্বদেশি সঙ্গীত, ভক্তিগীতি ও প্রেমের গান; এই তিন ধারায় বিভক্ত। তবে তার ব্যক্তি জীবনের বেদনা সকল ধরনের গানেই কম-বেশি প্রভাব ফেলেছে। এজন্য তার অধিকাংশ গানই হয়ে উঠেছে করুণ-রস প্রধান।
উনিশ শতকের শেষ থেকে বিশ শতকের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত রবীন্দ্র প্রতিভার প্রভাববলয়ের মধ্যে বিচরণ করেও যারা বাংলা কাব্যগীতি রচনায় নিজেদের বিশেষত্ব প্রকাশ করতে সক্ষম হন, অতুল প্রসাদ ছিলেন তাদের অন্যতম। সমকালীন গীতিকারদের তুলনায় তার সঙ্গীত সংখ্যা সীমিত হলেও অতুল প্রসাদের অনেক গানে সাঙ্গীতিক মৌলিকত্ব পরিলক্ষিত হয়, আর সে কারণেই তিনি বাংলা সঙ্গীত জগতে এক স্বতন্ত্র আসন লাভ করেছেন।
তার গানগুলি অতুল প্রসাদের গান নামে বিশেষভাবে প্রতিষ্ঠিত। তিনিই প্রথম বাংলায় গজল রচনা করেন। বাংলা সঙ্গীতের প্রধান পাঁচজন স্থপতির একজন বলা হয় তাকে। বাংলা গানে ঠুংরি ধারার প্রবর্তকও তিনি। তার সর্বমোট গানের সংখ্যা মাত্র ২০৬টি এবং সে সবের মধ্যে মাত্র ৫০-৬০টি গান গীত হিসেবে প্রাধান্য পায়।
অতুল প্রসাদ প্রবাসী (বর্তমান নিখিল-ভারত) বঙ্গ-সাহিত্য সম্মিলন প্রতিষ্ঠার অন্যতম প্রধান উদ্যোক্তা ছিলেন। তিনি উক্ত সম্মিলনের মুখপত্র উত্তরার একজন সম্পাদক এবং সম্মিলনের কানপুর ও গোরখপুর অধিবেশনের সভাপতি ছিলেন। রাজনীতিতে তিনি সরাসরি অংশগ্রহণ না করলেও প্রথমে কংগ্রেসের সমর্থক ছিলেন, পরে লিবারেলপন্থী হন। অতুলপ্রসাদ তার সমগ্র জীবনের উপার্জিত অর্থেরও বৃহৎ অংশ স্থানীয় জনকল্যাণে ব্যয় করেন। এমনকি তিনি তার বাসগৃহ ও গ্রন্থস্বত্বও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কল্যাণে দান করে যান।