সল লিউইট

সল লিউইট

সল লিউইটের কনসেপচুয়াল শিল্প নিয়ে কথা

অনুবাদ: রথো রাফি

প্রকাশিত : মে ১৫, ২০২০

১. কনসেপচুয়াল শিল্পীরা যতটা না যুক্তিশীল তার চেয়ে বেশি মরমী। তারা উপসংহারে লাফিয়ে পৌঁছান, যুক্তি তা পারে না।
২. যুক্তি-নির্ভর-বিচার, যুক্তি-নির্ভর-বিচারকেই পুনরাবৃত্তি করে।
৩. অযৌক্তিক বিচার নতুন অভিজ্ঞতার দিকে চালিত করে।
৪. প্রচল শিল্পই (ফরমাল) আসলে যুক্তিসিদ্ধ।
৫. পাক্কাভাবে এবং যুক্তিযুক্তভাবে অযৌক্তিক চিন্তাকেই অনুসরণ করা উচিত।

৬. শিল্পকর্ম সম্পন্ন করার মাঝপথে যদি শিল্পী তার মন বদলান, তিনি আসলে ফলাফলের সাথে আপস করেছেন এবং পূর্ব-ফলাফলের পুনরাবৃত্তি করেছেন।
৭. কোন ভাব থেকে শুরু করে শেষ করার প্রক্রিয়াটিতে শিল্পীর ইচ্ছে দ্বিতীয় পর্যায়ের একটা বিষয়। তার ইচ্ছে নেহায়েতই অহং হতে পারে।
৮. যখনই পেইন্টিং, ভাস্কর্য এমন শব্দগুলো আমরা ব্যবহার করি, তা পুরো প্রথাগত ঐতিহ্যটাকেই এবং পরিণতিতে এ প্রথাকে মেনে নেয়ার বিষয়টিকেই সরাসরি তুলে ধরে, ফলে শিল্পীর উপর তা সীমা-আরোপ করে, যিনি কিনা এসব সীমাকে অতিক্রম করে যায় তেমন শিল্পকর্ম করতেই সাচ্ছন্দ্য বোধ করতেন।

৯. চেতনা আর ভাব ভিন্ন বিষয়। প্রথমটা একটা সাধারণ নির্দেশনাকে সামনে আনে, আর পরবর্তীটা হলো উপাদান। ভাবই চেতনাকে/ধারণাকে প্রয়োগ করে।
১০. ভাব একাই শিল্পকর্ম হতে পারে; উন্নয়ন ধারার মাঝে বিরাজ করে, যে ধারা ধাপে ধাপে কোন রূপ পেতে পারে। সব ভাবের শারীরিক বা মূর্ত হয়ে উঠার দরকারও নেই।
১১. ভাব আসলে যুক্তিক্রম মেনে এগোয় না। তারা হয়তো অনাকাক্ষিত দিকে নিয়ে যায়, কিন্তু পরবর্তী ভাব আকার নেয়ার আগে অবশ্যই একটা ভাব মনের ভেতর আবশ্যিকভাবেই সম্পন্ন হওয়া চাই।
১২. কারণ, প্রতিটা শিল্প কর্মই যা মূর্তরূপ পেয়েছে, তার অনেক রূপই রয়েছে যা মূর্ত রূপ পায়নি।

১৩. শিল্পকর্মকে শিল্পী ও দর্শকের মাঝে যোগসূত্র হিসেবে বোঝা হয়তো সম্ভব। কিন্তু একটি শিল্পকর্ম দর্শকের কাছে কখনো না-ও পৌছাতে পারে, বা শিল্পীর মনেই চিরকাল থেকে যেতে পারে।
১৪. এক শিল্পীর কথা আরেক শিল্পীর কাছে একসারি ভাবের আবেশ তৈরি করতে পারে, যদি তারা একই ধারণা পোষণ করেন শিল্প সম্পর্কে।
১৫. যেহেতু কোন রূপই আত্মিকভাবে অপর রূপের চেয়ে ভাল নয়, শিল্পী কথার প্রকাশ (লিখিত কি মৌখিক) থেকে শুর করে সমভাবে শারীর/মূর্ত বাস্তবতা পর্যন্ত যেকোনো রূপই ব্যবহার করতে পারে।
১৬. শব্দ যদি ব্যবহৃত হয়, এবং তারা শিল্প-ভাব থেকে এগোয়, তাহলে তারা শিল্প, সাহিত্য নয়, সংখ্যা যেমন গণিত নয়।
১৭. যদি শিল্প-চেতনা থেকে অম্ভূত হয়, এবং শিল্পের রীতির মধ্যে পড়ে, তাহলে সমস্ত ভাবই শিল্প।

১৮. কেউ সাধারণত অতীতের শিল্পকে বোঝতে গিয়ে বর্তমানের রীতি প্রয়োগ করে, এর ভেতর দিয়ে অতীতের শিল্প সম্পর্কে ভুল বোঝাবুঝি ঘটে।
১৯. শিল্পের রীতিনীতি শিল্পকর্মের ভেতর পাল্টে যায়।
২০. সফল শিল্প আমাদের সংবেদন (পারসেপশন) বদলানোর মাধ্যমে শিল্পের রীতিনীতি নিয়ে আমাদের বোঝাপড়া পাল্টে দেয়।
২১. ভাবেব সংবেদন নতুন ভাবের দিকে নিয়ে যায়।
২২. শিল্পী তার শিল্পকে কল্পনা করে উঠতে পারে না, এবং পুরো বুঝে উঠতে পারে না যতোক্ষণ-না তা সম্পন্ন করেন।
২৩. একজন শিল্পী একটি শিল্পকর্মকে ভুলভাবেও (শিল্পীর চেয়ে ভিন্নভাবে) বুঝতে পারেন, কিন্তু এই ভুলের পরেও শিল্পী নিজের চিন্তার ধারাবাহিকতা বজায় রেখে এগোতে পারেন।
২৪. বোঝাপড়া বিষয়ীগত/ব্যক্তিগত ব্যাপার।
২৫. একজন শিল্পী নিজের শিল্প যথেষ্টভাবে বুঝতে না-ও পারেন। অন্যের চেয়ে তার সংবেদন ভালো নয়, মন্দও নয়।
২৬. একজন শিল্পী নিজের শিল্পের চেয়ে অন্যের শিল্পকে হয়তো বেশি বুঝতে পারেন।
২৭. যে-উপাদান বা প্রক্রিয়ায় একটা শিল্পকর্ম সম্পাদিত হয়েছে, ঐ শিল্পকর্মের ধারণায় তা অঙ্গীভূত হয়ে যেতে পারে।

২৮. শিল্পীর মনে একটি শিল্পকর্মের ভাব প্রতিষ্ঠা পেলে, এবং চূড়ান্ত রূপটি সম্পর্কে সিদ্ধান্ত হয়ে গেলে, এই প্রক্রিয়াটি অন্ধভাবে বয়ে চলা হয়। অনেক পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া আছে, যা শিল্পীর কল্পনার বাইরে। আর এসবই নতুন কাজের ভাব হিসেবে কাজে আসতে পারে।
২৯. প্রক্রিয়াটি যান্ত্রিক এবং এতে অভ্যস্ত হওয়া উচিত নয়। একে এর পুরোপথই চলতে দেয়া উচিত।
৩০. একটি শিল্পকর্মে অনেকগুলো উপাদান বা বিষয় অঙ্গীভূত হয়, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান বা বিষয়টিই সবচেয়ে বেশি উদ্ভাসিত বা জোরালো।
৩১. বাজে ভাবকে সুন্দর সম্পাদনা দিয়ে কোন লাভ হয় না।
৩২. একটা ভালো ভাবকে পণ্ড করা খুব কঠিন।
৩৩. যখন কোন শিল্পী তার কারু দক্ষতা নিপুনভাবে রপ্ত করে তখন সে কৌশলাচ্ছন্ন (স্লিক) শিল্পের জন্ম দেয়।
৩৪. এসব বাক্য শিল্পের উপর মন্তব্য মাত্র, শিল্প নয়।

উৎস: আর্ট ল্যাঙ্গুয়েজ পত্রিকা ভলিয়ম ১, সংখ্যা ১ (১৯৬৯)