সাঈফ ইবনে রফিক

সাঈফ ইবনে রফিক

সাঈফ ইবনে রফিকের ছয়টি কবিতা

প্রকাশিত : অক্টোবর ৩১, ২০২০

প্রিয় মুহাম্মদ

প্রিয় মুহাম্মদ,
আপনি অক্ষর চেনেন না বলে
যারা হাসাহাসি করছে পাড়ায়—
তারাতো জ্ঞানের গিরিখাতে
আটকে যাওয়া অন্ধকার।
কিশোর আপনি যখন হাজরে আসওয়াদ
প্রতিস্থাপন করলেন
পিতামহের স্মৃতিবিজড়িত হারাম শরিফে—
তখনও প্রশ্ন তোলেনি কেউ,
আপনি কে?
আমি ধর্মের কল বাতাসে নড়তে দেখে
চমকিত। ফেসবুক ব্রাউজারে
ঘৃণার চ্যালেঞ্জে আপনার নাম!
আপনাকে ভালোবেসে সমাবেশে ছুটে যাওয়া
মাদ্রাসা মিছিলের আবেগী কিশোর জানে—
কতটা নিপীড়ন আছে ধর্মের দোহাইয়ে!
বলেন হে নবি, কোন ব্যঙ্গচিত্র আপনাকে
ধারণ করার সক্ষমতা রাখে,
কোন অবমাননা পারে
আপনার মাহাত্ম্যকে খর্ব করতে?
আমি হাজরে আসওয়াদের পিতা
সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, নবিপ্রেমের এমন হিংস্র বহিঃপ্রকাশ
মুহাম্মদের (সা.) চরিত্রের সাথে যায় না।

আগুন আগুন

একটা বিপ্লব শেয়ার করার মতো
টাকা নেই আমার কাছে!
এটা বলার পর নেতা জিজ্ঞাসা করলেন,
টাকা কি শুধু নিজেই জ্বলে
নাকি অন্যকে জ্বলতেও সাহায্য করে?
বিপ্লবের সাথে শুধু দাহ্যের সম্পর্ক
আগুন! আগুন!
আর যারা ম্যাচ বাকসের মতো
পোষা আগুন পকেটে নিয়ে ঘোরে
তারা তো দালাল।
মশাল দেখে ভয় পাওয়া ছাই।

হত্যাকারী

আকাশ ভেঙে
মাটিতে পড়ার পর—
আমার ওপর দিয়ে
সাই করে চলে গেল
দ্রুতগামী সৌখিন গাড়ি।
মামলার এজাহার লিখছে—
ওটা অ্যাম্বুলেন্স ছিল।
মিডিয়া কানে কানে বলছে,
ওটা সাঁজোয়া যান।
আপনি বরং চেপে যান।
অথচ আমি জানি
স্মার্টফোনই আমার প্রকৃত হত্যাকারী।

কবিসংঘ

আকাশকে বললাম, আরেকটু উঁচু হও
দাঁড়াতে পারছি না।
মুচকি হেসে আকাশ বললো, কি হয়েছে?
এখনও তো তোকে খাটোই দেখছি!
মেজাজটা বিগড়ে গেল।
বললাম, আমি দশকীয়া কবি। চারটা দৈনিকে
নাম ছেপেছি, সাথে লেখাও।
গর্বে বুক ফুলেছে, ফেসবুকও
আমি যে স্টার পোয়েট, আমাকে চিনছো না?
হাসতে হাসতে বৃষ্টি নেমে গেল!
বজ্রপাতের মধ্যেই ভারি কণ্ঠে আকাশ বলে উঠলো,
কবি না, নিজেকে দালাল বল।
বল, তুই একটা গুটিবাজ।
কবিতাগ্যাং গড়ে সাহিত্যপাড়ায়
সংঘবদ্ধ ক্রাইম করে বেড়াস।

প্রশ্ন

নিজেকেই প্রশ্ন করলাম,
কোনটা ভালো— শুরু নাকি শেষ?
দুর্ঘটনা বাতিল হয়ে যাওয়ার মতো
আশ্চর্য অবস্থানে
প্রতিটি উত্তর দুলছে
অদ্ভুত পেন্ডুলামে—
টু বি অর নট টুক বি
যাবি নাকি থাকবি?

নিউটনে তৃতীয় সূত্র

ডাঙায় উঠতে গেলে নিউটন
তৃতীয় গতিসূত্র মেনে
নৌকা পিছিয়ে যায় জলে!
এখন যদি কোনো পদার্থবিদ বলে বসেন,
ফিজিক্স একটা কঠিন ব্যাপার।
আর্টসে পড়া কবি
এসব নিয়ে নাড়াচাড়া করবে কেন?
কবিতার উচিত, পদার্থবিদের কানের নিচে
কষে একটা থাপ্পড় দেয়া।
(কবি এক্ষেত্রে স্বভাবসুলভ নির্বিকার থাকবেন)
আজব!
এই কাঙাল বাঙলায় দেখলাম
সুফিজমেরও ইজারাদার আছে!
ওদেরকে বলে দাও—
আব্বাসিয়া খেলাফত গুড়িয়ে দিতে
প্রতিষ্ঠানবিরোধী হালাকু খা জন্ম নিয়েছেন।
যারা সাঈফিজমের বিরোধিতা করবে
এবার তাদের জাদুঘরে পাঠানো হবে।